উত্তরের ঈদযাত্রা

চলমান নির্মাণকাজে বাড়ছে যানজটের শঙ্কা

সিরাজগঞ্জের ঝাঐল ব্রিজ এলাকা থেকে তোলা ছবি। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

প্রতি ঈদেই ছুটির আনন্দ অনেকটা ম্লান হয়ে যায় তীব্র যানজটের কারণে। এবারও সিরাজগঞ্জে সড়কে চলমান নির্মাণকাজের কারণে উত্তরের পথে যাত্রীদের যানজট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

তবে যমুনা সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কে এবার ফোর লেনের সুবিধা পাবে উত্তরের যাত্রীরা আশা করছে সড়ক ও সেতু বিভাগ। ঈদ যাত্রা শুরু হওয়ার আগেই উত্তরের মহাসড়কে ফোর লেন উন্মুক্ত করা হবে, পাশাপাশি নির্মাণাধীন ব্রিজের আংশিক খুলে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

যমুনা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ইতোমধ্যে সেতুর পূর্ব প্রান্তের ফোর লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের আগেই ফোর লেন উন্মুক্ত করা হবে।

তিনি জানান, সেতুর পূর্ব প্রান্তের ফোর লেন উন্মুক্ত হলে এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ফোর লেন সুবিধা পাবেন যাত্রীরা।

সরেজমিনে যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ফোর লেন সুবিধা চালু হলেও নির্মাণাধীন ব্রিজ ও ফ্লাইওভারের কাজ চলমান থাকায় সড়কের বিভিন্ন অংশ সরু হয়ে পড়ায় স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ঈদ যাত্রায় সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লে ভোগান্তি বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

যমুনা সেতুর পশ্চিম মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ৭টি ব্রিজ ও ফ্লাইওভার রয়েছে। এর মধ্যে চারটি চালু হলেও সায়েদাবাদ, ঝাঐল, কোনাবাড়ি এলাকার নির্মাণাধীন ব্রিজ এলাকায় যানবাহনের গতি কমিয়ে চলাচল করতে হয় ফলে যানবাহনের চাপ বাড়লে এসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।

বাস চালক আব্দুল আজিজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, মহাসড়কে চার লেন থাকলেও ব্রিজ ও ফ্লাইওভারের কাজ শেষ না হওয়ায় এসব স্থানে সড়কের পুরো সুবিধা পাওয়া যায় না।

নির্মাণাধীন এলাকাগুলোতে যানবাহনের গতি কমিয়ে চালাতে হয় ফলে যানজট সৃষ্টি হয়। যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ওভারটেক করে আগে যাওয়ার চেষ্টা করে ফলে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান সুমেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঈদের আগেই যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কের নির্মাণাধীন দুটি ব্রিজের উত্তরাঞ্চলমুখী লেন খুলে দেয়া হবে। ফলে সংকট অনেক কমে যাবে।

সরেজমিনে নির্মাণাধীন ঝাঐল ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্রিজের উত্তরাঞ্চলমুখি লেনের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেছে, ব্রিজের সংযোগ সড়কে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। তবে ব্রিজের ঢাকামুখি লেনের নির্মাণ কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে বলে জানান নির্মাণ শ্রমিকরা।

যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে সায়েদাবাদ ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চার লেনের সড়কের বেশিরভাগ অংশ ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের জন্য বন্ধ রয়েছে।

যমুনা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বলেন, সায়দাবাদ এলাকায় রাস্তা চার লেনের হলেও এখানে ছয় লেনের সুবিধা রয়েছে, ফলে নির্মাণ কাজ চলমান থাকলেও ফোর লেনের সুবিধা পাবে যাত্রীরা।

পরিবহন চালকরা জানান, উত্তরাঞ্চলমুখি যানবাহন হাটিকুমরুল গোল চত্বর থেকে থেকে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে চলাচল করে ফলে হাটিকুমরুল গোল চত্বরে যানবাহনের চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে।

হাটিকুমরুল গোল চত্বরে আধুনিক ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় স্বাভাবিক সময়েই যানবাহনের চাপ বাড়লে যানজটের সৃষ্টি হয়, ঈদের সময় যানবাহনের চাপ বাড়লে সংকট আরও বাড়বে বলে জানান পরিবহন চালকরা।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, চালকরা ট্রাফিক নিয়ম মেনে যানবাহন চালালে কোন যানজট হবে না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালকরা নিয়ম না মানার কারণে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।

যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ ও হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন যমুনা সেতু হয়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদের সময় প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। বিপুল পরিমান যানবাহনের চাপের কারণে প্রতি বছর ঈদের সময় উত্তরের যাত্রীদের দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, এ বছর ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ার কারণে অনেকেই ধীরে সুস্থে বাড়ি ফিরতে পারবেন। ঈদে যমুনা সেতুর পশ্চিম মহাসড়কের যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের টহল ২২ রোজা থেকেই মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে থাকবে।

তিনি জানান, মহাসড়কের যানবাহনের চাপ শুক্রবার থেকেই বাড়তে পারে তবে ২৫ রোজার পর থেকে যানবাহনের চাপ বেশি হবে আর উপচে পড়া ভিড় শুরু হবে গার্মেন্টস কারখানাগুলো ছুটি হওয়ার পর থেক।

এবারে উত্তরের ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে চার লেনের সুবিধা পেলেও বগুরা ও রংপুরমুখি যানবাহনগুলোকে বগুড়া মহাসড়কের ভুইয়াগাতি এলাকায় দুর্ভোগে পড়তে হতে পারে বলে জানান হাইওয়ে ওসি।

ভুইয়াগাতি এলাকায় ব্রিজ নির্মাণকাজ চলমান থাকায় বিকল্প সিঙ্গেল রাস্তা দিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে ফলে যানবাহনের চাপ বাড়লে সংকট বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে ঈদ যাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কায় অনেকেই শুক্রবার থেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি ফিরতে শুরু করবে।

ঢাকায় কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী রুকুনুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে শুক্রবার পরিবারের সদস্যরা পাবনায় বাড়িতে যাবে বলে ঠিক করেছে।

ছুটির পর মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় এ সময় পরিবার পরিজন নিয়ে ফেরাটা অনেক কঠিন তাই আগেই তারা যাবেন বলে ঠিক করেছেন।

এই পরিবারের মতো অনেকেই এবার আগেই বাড়ির দিকে রওনা হবেন বলে জানিয়েছেন। 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

7h ago