মণ প্রতি আমনের দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা, খুশি ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ের চাষি

আমনের দাম বৃদ্ধি : খুশি ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ের চাষি
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বৈকন্ঠপুর গ্রামে ধান কাটার ধুম। ছবি: মো. কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত/স্টার

প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার চাষিরা সম্পূরক সেচ ও বাড়তি শ্রমের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে আমনের ভালো ফলন পেয়েছে।

চলতি মৌসুমে ভালো উৎপাদনের পাশাপাশি ভালো বাজারমূল্য পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের এই ২ জেলার চাষিরা বেশ খুশি।

বৃষ্টি-নির্ভর আমন চাষের রোপণ ও বেড়ে ওঠার সময় অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনে আশঙ্কা ও সেচের বাড়তি খরচের কারণে উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন এ এলাকার কৃষকরা।

কিন্তু ধান কাটার এই সময়ে শেষ পর্যন্ত আশানুরূপ ফলন ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিগত বছরের তুলনায় বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় এখন আমন চাষিদের মুখে হাসি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁওয়ে চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। জেলায় আমন চাষ হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে।

জেলায় এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৭৮৬ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এতে প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে।

পঞ্চগড়ে ১ লাখ ৩০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। সেখানে ১ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমি আবাদ করে ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৩ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

আমনের দাম বৃদ্ধি : খুশি ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়ের চাষি
ঠাকুরগাঁওয়ে আমনের ভালো ফলন হওয়ায় খুশি কৃষক। ছবি: মো. কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত/স্টার

এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজার ১৭ হেক্টর জমির ধান কেটে উৎপাদন করা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭ মেট্রিক টন চাল।

হেক্টর প্রতি ৩ দশমিক ১ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গড় উৎপাদন পাওয়া গেছে ৩ দশমিক ৪ টন।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল আজিজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক বিঘা জমিতে আমন চাষ করতে সাধারণত ৬ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বাড়তি সেচের কারণে চাষিদের উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে।'

এমন পরিস্থিতির পরও চারা রোপণ ও ফসল বৃদ্ধির সময় বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পের গভীর নলকূপ চালু, সরকারি সহায়তা ও কৃষকদের অতিরিক্ত প্রচেষ্টার কারণে ভালো ফলন ফলানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রিয়াজ আহমেদ ডেইলি স্টারকে জানান, এই জেলার কৃষকরা বারি ধান-৫১, বারি ধান-৭৫, বারি ধান-৮৭, বারি ধান-৯৩ ও ভারতীয় উচ্চ ফলনশীল জাতের গুটি স্বর্ণা ধান চাষ করেন যা থেকে প্রতি একরে সাধারণত ৫০-৬০ মণ ফলন পাওয়া যায়।

ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ক্ষেতে সেচের জন্য ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত পাম্পসহ ১০ হাজার ৮০ অগভীর নলকূপ ও বিএমডিএ-এর ৯১০ গভীর নলকূপ আছে।

পঞ্চগড়ে ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত প্রায় ৫ হাজার ৫০০ অগভীর পাম্প ও বিএমডিএর ২২৫ গভীর নলকূপ আমন মৌসুমে খরার কারণে চালু ছিল বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অফিস ও বিএমডিএ'র কর্মকর্তারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বৈকন্ঠপুর গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন (৪৮) ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছেন।

তিনি বলেন, 'আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক বিঘা জমিতে আমন চাষে সাধারণত ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। এই মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে ডিজেলচালিত পাম্প দিয়ে সেচ দেওয়ায় বিঘা প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।'

আমজাদ জানান, ৩ বিঘা জমি চাষে তার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা এবং ধান পেয়েছেন ৫১ মণ। প্রতি মণ ধান ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ২৮০ টাকা দরে বিক্রি করে প্রায় ৬৪ হাজার টাকা পেয়েছেন। এতে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার টাকা।

এখন গম ও আলু চাষের জন্য খেত প্রস্তুত করছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমনের ভালো দাম পাওয়ায় গম ও আলু চাষে বেগ পেতে হবে না।'

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, '৭ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। ১২০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি। ভালো ফলন ও বাজারমূল্যের কারণে অতিরিক্ত সেচের জন্য অর্থ খরচের পরও যা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে।'

সাকোয়া বাজারের চাল ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাত ও মান ভেদে বর্তমানে প্রতি মণ ধান স্থানীয় বাজারে ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ফসল কাটার মৌসুমে তা ছিল ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh is on the right track: foreign adviser

Says interim govt earned overwhelming global support in the past six months as he discusses ties his govt’s ties with major local and global powers

5m ago