রাঙ্গাবালীতে ৯৪ স্লুইচগেটের ৪০টিই অকেজো, আমন চাষ বিঘ্নিত

ছবি: স্টার

দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী ও খালের ওপর নির্মিত স্লুইচগেটগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এতে আমন আবাদ নিয়ে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা।

লবণ পানি থেকে ফসল রক্ষা, প্রয়োজনীয় মিষ্টি পানি ধরে রাখা ও খালগুলোতে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য স্লুইচগেটগুলো নির্মাণ করা হয়। সেগুলোর কোনটির গেট ভেঙে গেছে, কোনটির গেট দেবে গেছে, আবার কয়েকটির গেট ওঠা-নামা করা যাচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কলাপাড়া কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলোচ্ছ্বাস থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য পাউবো রাঙ্গাবালী উপজেলার আগুনমুখা, তেঁতুলিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ, দাড়ছিড়াসহ বিভিন্ন নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে।  বাঁধের ভেতরে আবাদি জমিতে বর্ষায় জমে থাকা অতিরিক্ত পানি অপসারণ ও লবণাক্ত পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই বেড়িবাঁধে নদী তীরবর্তী স্থানে মোট ৯৪ টি স্লুইচগেট নির্মাণ করা হয়।

৯০ দশকে এই স্লুইচগেটগুলো নির্মিত হলেও এর পর আর মেরামত করা হয়নি। এসব স্লুইচগেটগুলোর মধ্যে ৪০টিই এখন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এছাড়াও সচল স্লুইচগেটগুলোও অধিকাংশ বন্ধ করে মাছ চাষ করার ফলে খালে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো কৃষকের কাজে আসছে না।

রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কোড়ালিয়া খালের আগুনমুখা নদী মুখের স্লুইচগেটটি অকেজো হয়ে পড়েছে। জোয়ারের সময় নদীর লবণ পানি ঢুকে পরছে। কৃষকরা আমন আবাদে খালের পানি ব্যবহার করতে পারছে না। এছাড়াও বৃষ্টির পানি কৃষকরা সংরক্ষণ করতে পারছে না। 

কোড়ালিয়া গ্রামের কৃষক সোবাহান হাওলাদার বলেন, আমন আবাদের মৌসুম চলছে। আমন আবাদে প্রচুর পানির প্রয়োজন। কিন্তু লবণাক্ততার কারণে তারা নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছি না। বৃষ্টি হলেও পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। এ বছর ৩ একর জমিতে আমনের আবাদ করতে চাই কিন্তু মৌসুমের অর্ধেক সময় পার হলেও পুরো জমি আবাদ করতে পারিনি।

ইউনিয়নের ডাঙ্গার খালের স্লুইচগেটটি সচল থাকলেও ওই খালে অন্তত ২০টি বাঁধ দিয়ে স্থানীয়রা মাছ চাষ করার ফলে খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সেই খালে পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নামতে না পারায় জলাবদ্ধতায় খেত তলিয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষক সোলায়মান ফকির জানায়, খেতে হাটু পানি জমে আছে। পানি না সরলে আবাদ করা যাচ্ছে না। আমন আবাদ নিয়ে ভোগান্তিতে আছি।

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল আহম্মেদ বলেন, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ২৮ হাজার ২৩০ হেক্টরের বেশি জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে স্লুইচগেটগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ায় অনেক এলাকায় আবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে।

স্লুইচগেটগুলোর জরুরি সংস্কার কিংবা মেরামত প্রয়োজন। এতে করে নোনা পানি উঠবে না, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না, কৃষির উন্নয়নের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হবে, তিনি যোগ করেন।

পাউবোর কলাপাড়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহরাজ বলেন, রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৯০ দশকে নির্মিত মোট ৯৪টি স্লুইচগেট আছে। এর মধ্যে ৪০টি অকেজো। এগুলো জরুরি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Will protect investments of new entrepreneurs: Yunus

Yunus held a meeting with young entrepreneurs at the state guest house Jamuna where15 male and female entrepreneurs participated

5h ago