আমন নিয়ে সংশয়ে কৃষক

সেচ সংকটে অনেকেই এখনো ধান রোপণ শুরু করতে পারেনি। ছবি: স্টার

আমন চাষের ভরা মৌসুমেও পানির অভাবে সময়মতো ধান রোপণ করতে পারছেন পাবনার বিভিন্ন এলাকার কৃষক। সেইসঙ্গে তেলের দাম বাড়ায় বেড়েছে সেচের খরচও। ফলে আমন চাষ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তারা।

সরেজমিনে পাবনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন চাষের ভরা মৌসুমেও সেচ সংকটে অনেকেই এখনো ধান রোপণ শুরু করতে পারেনি।

পাবনা সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এ বছর ৪ বিঘা জমির পাট কেটে আমন চাষের জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। গত মাসের মাঝামাঝিতে জমিতে পানি না থাকায় এ পর্যন্ত মাত্র এক বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে পেরেছি। তাও আবার সেচ দিয়ে।'

'অন্যান্য বছর এ সময় জমিতে সেচ না লাগলেও এ বছর ধান রোপণের সময় ৩টি সেচ দিতে হয়েছে। চারা বেড়ে ওঠার সময় ৬টি সেচ দিতে হচ্ছে। অন্যান্য বছর চারা রোপণ থেকে শুরু করে কাটার আগ পর্যন্ত ৬টি সেচ দিতে হলেও এ বছর ১০ থেকে ১২ বার সেচ দিতে হবে', বলেন তিনি।

মাসুদ রানা আরও বলেন, 'গত বছর এক বিঘা জমিতে একবার সেচ দিতে খরচ হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ বছর লাগছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেচের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।'

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সেচ খরচ, চারা-সারের দাম, শ্রমিকের খরচ দিয়ে এক বিঘা জমির আমন ধান ঘরে তুলতে খরচ পরে যাবে প্রায় ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকা। আর ধান পাওয়া যাবে খুব বেশি হলে ১৬ থেকে ১৮ মণ। বর্তমান বাজার দরে (১ হাজার ২০০ টাকা মণ) ধান বিক্রি করে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।

এ অবস্থায় লোকসানের আশঙ্কায় বাকি জমিতে ধান আবাদ করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন তারা।

শ্যামপুর গ্রামের শ্যাল ও পাম্প মালিক ফিরোজ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে ৩ লিটার ডিজেল প্রয়োজন হয়। গত বছর এক লিটার ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা হলেও এখন তা ১১৪ টাকা। তেলের খরচের পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে। এ ছাড়া কাছাকাছি পানির ব্যবস্থা না থাকায় দূর থেকে পানি টেনে আনতে খরচও অনেক বেশি হচ্ছে। ফলে সেচের খরচ বাড়ছে।'

একই গ্রামের আমন চাষি ইসমাইল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ধার করে ২ বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছি। উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছি।'

ইসমাইল জানান, সেচের খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারের দাম ও শ্রমিকের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমনের উৎপাদন নিয়ে বিপাকে রয়েছি। এদিকে বিদ্যুৎ-চালিত ডিপ টিউবওয়েলের খরচও বেড়ে গেছে।

পাবনা সদর উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর এ সময় প্রতি মাসে ডিপ টিউবওয়েলের বিদ্যুৎ বিল লাগত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ বছর এ সময় বিদ্যুৎ বিল ১৫ হাজার টাকার বেশি লাগছে। প্রতি বিঘা জমির প্রায় ২০ শতাংশ ফসল ডিপ টিউবওয়েল মালিককে দিয়ে দিতে হচ্ছে।'

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, খরচ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ এলাকার কৃষক সময়মতো আমন চাষ করতে পারছেন না। ফলে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কৃষকরা।

তবে, আমন আবাদ নিয়ে কোনো সংশয় নেই বলে দাবি করেছেন পাবনা জেলা কৃষি কর্মকর্তা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ড. মো. সাইফুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর পাবনায় ৫৫ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ দশমিক ৬৭ লাখ মেট্রিক টন।'

'জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমন চাষের মোক্ষম সময় হলেও আগস্টের শেষ পর্যন্ত আবাদ করা যাবে। ইতোমধ্যে ৩৫ জমিতে আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

3h ago