পাকিস্তানের রিজার্ভ ৪.৩৪ বিলিয়ন ডলার, ৩ সপ্তাহের আমদানি ব্যয়ের সমান

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের কার্যালয়। ফাইল ছবি: এএফপি
স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের কার্যালয়। ফাইল ছবি: এএফপি

২০২২ এর পুরোটা সময়জুড়ে বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে ছিল পাকিস্তান। ২০২৩ এর শুরুতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

আজ সোমবার পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দ্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৪ দশমিক ৩৪৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যেটি মাত্র ৩ সপ্তাহের আমদানি খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট। ২টি সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের পর রিজার্ভ এ পর্যায়ে নেমে আসে। তবে রিজার্ভ এতোটা কমে আসলেও, মুদ্রা বাজারে পাকিস্তানি রুপির বিনিময় মূল্য স্থিতিশীল থেকেছে। ১৩ জানুয়ারি দিন শেষে ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় মূল্য ছিল ২২৮ দশমিক ১৫, যেটি এর আগের দিনও একই ছিল।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে এসবিপির কাছে প্রায় ১৬ দশমিক ৬০৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল। কিন্তু ঋণ পরিশোধ ও আমদানির খরচ মেটাতে বছরজুড়ে রিজার্ভের পরিমাণ কমেছে।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে প্রতিশ্রুত ৬ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেলে সৌদি আরব, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো বন্ধুসুলভ রাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও অর্থ আসতে পারে বলে জানা গেছে।

আইএমএফের ঋণের বহুল প্রতীক্ষিত শেষ কিস্তি বিতরণ প্রক্রিয়া এ মুহূর্তে স্থগিত রয়েছে। এ সংক্রান্ত জটিলতা দূর হলে সরকার এই উন্নয়ন-বান্ধব ব্যাংকের কাছে আরও নতুন তহবিল চাইতে পারে বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার আন্তঃব্যাংক বিনিময় মূল্যকে কৃত্রিম উপায়ে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে খোলা বাজারের বিনিময় মূল্য ও সরকার নিয়ন্ত্রিত মূল্যের মাঝে প্রতি ডলারে প্রায় ৩০ রুপির ব্যবধান দেখা দিয়েছে।

আইএমএফ ও বন্ধু রাষ্ট্রের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বন্যাদুর্গতদের সহায়তা তহবিল হিসেবে কয়েক বিলিয়ন ডলার আসার কথা রয়েছে।

বন্যা দুর্গতদের জন্য এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ১০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এ খাতে প্রয়োজন মোট ১৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। প্রতিশ্রুত অর্থের ৯০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে; মাত্র ১০ শতাংশ আসবে ত্রাণ হিসেবে।

এসবিপিতে আরও ২ বিলিয়ন ডলার জমা রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। এর আগে দেশটি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার আমানত রেখেছিল। এর পাশাপাশি সৌদি আরব পাকিস্তানে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যম থেকে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ করার ইঙ্গিত দিয়েছে; বিশেষত, পেট্রোলিয়াম খাতে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৩ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সৌদি আরব পাকিস্তানে ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল পাঠাবে। তবে এই তেলের বিনিময়ে প্রদেয় অর্থ এ মুহূর্তে সংগ্রহ করবে না দেশটি।

চীন আগে দেওয়া 'সভেরিন লোন' পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আসা ঋণের পুন:তফসিল করে এবং দ্বিপাক্ষিক মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনীতিতে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার প্রবেশ করাবে। সরকার কাতারের কাছে ২টি এলএনজি উৎপাদনকেন্দ্র বিক্রি করে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার উপার্জনের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে।

উল্লেখিত ঋণ পাকিস্তানের অর্থনীতিতে আসতে ৩ থেকে ৫ বছর লেগে যেতে পারে। তবে এর বেশিরভাগই ঋণের দায় বাড়াবে এবং বার্ষিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণও বেড়ে যাবে বলে বিশ্লেষকরা আশংকা প্রকাশ করেছেন। এর অর্থ, দেশটিকে বড় আকারে পণ্য ও সেবা রপ্তানি বাড়াতে, রেমিট্যান্সের প্রবাহকে ইতিবাচক করতে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এসব উদ্যোগ সফল না হলে পাকিস্তান অল্প সময়ের মধ্যে আবারও অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যাবে।

আফগানিস্তানে ডলার চোরাকারবারি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় রিজার্ভ সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও শুল্ক বিভাগ এই অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও একে নির্মূল করতে পারেনি। এছাড়াও, অনেকে ব্যক্তি পর্যায়ে বিশাল পরিমাণ ডলার নিজের কাছে জমিয়ে রাখছেন—ভবিষ্যতে বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ার পর বাড়তি লাভে সেগুলো বিক্রির আশায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

2h ago