নির্বাচনের পর আরও সংকটে মালয়েশিয়া

আনোয়ার ইবরাহিম (বায়ে) ও মুহিউদ্দিন ইয়াসিন (ডানে)। ছবি: রয়টার্স
আনোয়ার ইবরাহিম (বায়ে) ও মুহিউদ্দিন ইয়াসিন (ডানে)। ছবি: রয়টার্স

মালয়েশিয়ার নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক সংকট আরও বেড়েছে।

আজ রোববার দেশটির রাজনৈতিক নেতারা নতুন জোট সরকার গঠনের জন্য জোরালো উদ্যোগ শুরু করেছেন। নজিরবিহীন নির্বাচনের ফলে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দেশটিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

আজ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা পালনকারী আনোয়ার ইব্রাহীম ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন, উভয়ই বলেছেন যে তারা অন্যান্য দলের সমর্থন নিয়ে জোট সরকার গঠন করতে পারবেন। তবে দলগুলোর নাম জানাননি ২ জনের কেউই।

মুহিউদ্দিন জানান, তিনি রোববার বিকালের মধ্যে আলোচনা শেষ করতে পারবেন।

নির্বাচনে যা হয়েছে

আজ রোববার ভোরে মালয়েশিয়ার নির্বাচন কমিশন বলেছে, ২২২ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টে আনোয়ার ইব্রাহিমের দল পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট সর্বোচ্চ ৮২টি আসন পেয়েছে আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পেরিকাতান ন্যাসিওনাল (পিএন) ৭৩টি আসনে জয় পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের বারিসান ন্যাসিওনাল ৩০টি আসন পেয়েছে।

বিরোধীদলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহীম। ছবি: রয়টার্স
বিরোধীদলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহীম। ছবি: রয়টার্স

সিংগাপুর ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম স্ট্রেইটস টাইমস এর প্রতিবেদন মতে, তবে সব মিলিয়ে মুহিউদ্দিনের জোটের হাতে ৭৯টি আসন রয়েছে। জোটের অন্যতম অংশীদার গাবুনগান রাকায়াত সাবাহ (জিআরএস) আরও ৬টি আসন জিতেছে।

উল্লেখ্য, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ন্যুনতম ১১২টি আসনে জয় লাভ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মুহিউদ্দিনের জোটের উত্থানকে 'তৃতীয় শক্তির উত্থান' হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই জোটের অন্যতম সদস্য হচ্ছে একটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল, যারা দেশটিতে শরিয়া আইন প্রচলনে আগ্রহী।

এই জোটের প্রার্থীরা বারিসান অঞ্চলের শক্তিশালী দল ইউনাইটেড মালয়'স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের  (ইউএমএনও) প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপ্রত্যাশিত ভালো ফল করেছে।

সামনে কী আছে

বিশ্লেষকদের মতে, মুহিউদ্দিনের জোট বারিসান ও অন্য একটি দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করবে। তবে আনোয়ার বা মুহিউদ্দিন কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে সংখ্যালঘু সরকারও গঠিত হতে পারে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। ছবি: রয়টার্স
সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। ছবি: রয়টার্স

মুহিউদ্দিন জানান, তিনি আনোয়ারের দল ছাড়া অন্য যেকোনো দলের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। রোববার তিনি বোর্নিও দ্বীপের সাবাহ ও সারাওয়াক প্রদেশের আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরির বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে নিশ্চিত করেন।

আনোয়ার জানাননি তিনি কাদের সঙ্গে কাজ করবেন। এ মাসের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি 'মৌলিক আদর্শগত পার্থক্যের' কথা বলে সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে মুহিউদ্দিন ও ইসমাইলের জোটকে নাকচ করে দেন।

মুহিউদ্দিন ও ইসমাইলের জোট মালয় নৃগোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। আনোয়ারের জোট সব ধরনের কৃষ্টিকেই সমান প্রাধান্য দেয়। মালয়েশিয়ায় গোত্র ও ধর্মবিশ্বাস খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলমান ধর্মাবলম্বী এবং তারা মালয় গোত্রের সদস্য। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে আছে চীন ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকরা।

রাজার ভূমিকা

মালয়েশিয়ার রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহ চাইলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নির্ধারণ করতে পারেন।

রাজা আবদুল্লাহ সুলতান আহমেদ শাহ ও রানী টুনকু আজিজাহ আমিনাহ মাইমুনাহ। ফাইল ছবি: রয়টার্স।
রাজা আবদুল্লাহ সুলতান আহমেদ শাহ ও রানী টুনকু আজিজাহ আমিনাহ মাইমুনাহ। ফাইল ছবি: রয়টার্স।

দেশের সংবিধান অনুযায়ী, রাজার তেমন কোনো প্রশাসনিক ভূমিকা নেই। তবে বেশিরভাগ নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের নেতৃত্ব দিতে পারবেন এরকম একজন আইনপ্রণেতাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করার ক্ষমতা তার আছে।

বিভিন্ন প্রদেশের সুলতানরা পর্যায়ক্রমে মালয়েশিয়ার রাজার ভূমিকা পালন করেন। সাধারণত রাজা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষমতা ব্যবহার করেন না। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝে রাজার প্রভাব বেড়েছে।

২০২০ সালে অভিজ্ঞ নেতা মাহাথির মোহাম্মদের সরকারের পতন হলে রাজা আল-সুলতান মুহিউদ্দিনকে পরবর্তী নেতা হিসেবে নির্বাচন করেন। এর আগে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন কার পেছনে আছে তা জানতে ২২২ জন আইনপ্রণেতার সাক্ষাৎকার নেন। মুহিউদ্দিনের জোটেরও পতন হলে তিনি ইসমাইলকে নির্বাচন করেন।

মুহিউদ্দিন রোববার জানান, তিনি রাজপ্রাসাদ থেকে সরকার গঠনের নির্দেশনা পেয়েছেন, কিন্তু এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাননি। আনোয়ার জানান, তিনি রাজার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে তার সমর্থন চাইবেন।

পরিণাম

বিশ্লেষকদের মতে, মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলতে থাকবে। গত কয়েক বছরে ৩ জন প্রধানমন্ত্রী দেশটিকে স্থিতিশীলতা এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

দেশটিতে রাজনৈতিক পালাবদলের হাওয়া বইছে। স্বাধীনতা লাভের পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০ বছর ইউএমএনও ও বারিসান জোট ক্ষমতায় ছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, পরবর্তী জোট কোনো শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে জোটের সদস্যদের মধ্যে বিবাদ চলতে থাকবে এবং এতে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে।

এছাড়াও, পরাজিত দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠিত হলে ভোটাররা হতাশাগ্রস্ত হতে পারেন।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

9h ago