কমলা হ্যারিসের সিওল সফরের প্রাক্কালে পিয়ংইয়ংয়ের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ

পূর্ব উপকূল থেকে সমুদ্রের দিকে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়া। এ অঞ্চলে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামুদ্রিক মহড়া এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের আসন্ন সফরের প্রাক্কালে আজ রোববার সকালে উত্তর কোরিয়া এই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। ছবি: রয়টার্স
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। ছবি: রয়টার্স

পূর্ব উপকূল থেকে সমুদ্রের দিকে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়া। এ অঞ্চলে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামুদ্রিক মহড়া এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের আসন্ন সফরের প্রাক্কালে আজ রোববার সকালে উত্তর কোরিয়া এই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

আজ রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উত্তরের পিয়ংইয়ান প্রদেশের তায়েকন এলাকা থেকে এই স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়। স্থানীয় সময় সকাল ৭টার ঠিক আগে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় ম্যাক ফাইভ গতিতে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার (৩৭৩ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করে।

দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়টি গুরুতর পর্যায়ের উসকানি এবং এটি কোরীয় উপদ্বীপ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর হুমকি।'

বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, এ ঘটনার পর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান কিম সিউং-কিউম ও মার্কিন বাহিনীর কোরিয়া বিষয়ক কমান্ডার পল লাক্যামেরা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং উত্তর কোরিয়া থেকে আসা যেকোনো ধরনের হুমকি বা উসকানির মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকার বিষয়টি আবারও নিশ্চিত করেন।

টিভিতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপের ভিডিও দেখছেন সিওলের বাসিন্দারা। ছবি: এপি
টিভিতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপের ভিডিও দেখছেন সিওলের বাসিন্দারা। ছবি: এপি

দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল একটি জরুরি বৈঠকে প্রতিক্রিয়ার উদ্যোগ বিষয়ে আলোচনা করেন এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সমালোচনা করেন। তারা এ ঘটনাকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সনদের লঙ্ঘন ও একটি অহেতুক উসকানি হিসেবে অভিহিত করেন। 

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল শনিবার দিনের শেষে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর করে দেশে ফিরেছেন। তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফিং দেওয়া হয়েছে বলে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।

জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়াসুকাজু হামাদা জানান, জাপানের হিসাব মতে, ক্ষেপণাস্ত্রটি সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছায় এবং এটি খুব সম্ভবত অনিয়মিত গতিপথে চলেছে। হামাদা আরও জানান, ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে বেশ কিছুটা বাইরে, সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়েছে এবং এতে জাহাজ বা উড়োজাহাজ চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।

সাম্প্রতিক সময় উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় ব্যবহৃত স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে তা রাডার ফাঁকি দেওয়ার জন্য বারবার গতিপথ বদলাতে পারে এবং রাডারের রেঞ্জের বাইরে, অনেক নিচ দিয়ে উড়ে যেতে পারে।

হামাদা জানান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সহ এ বছর উত্তর কোরিয়া মোট ১৯ বার ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'উত্তর কোরিয়ার উদ্যোগ আমাদের দেশ, এই অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি। বিশেষত, ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের সময় এ ধরনের উদ্যোগ অমার্জনীয়।'

জাপান ইতোমধ্যে বেইজিং এ অবস্থিত উত্তর কোরিয়ার দূতাবাসের কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে।

যৌথ মহড়া

এই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনা এমন সময় ঘটলো যখন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগান দক্ষিণ কোরিয়ার বাহিনীর সঙ্গে ৪ দিন ব্যাপী যৌথ মহড়ায় অংশ নিতে এসেছে। ২৬ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই মহড়া চলবে। মহড়ার পর দক্ষিণ কোরিয়া সফরে আসবেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।

দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন মার্কিন রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগান। ছবি: এপি
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন মার্কিন রণতরী ইউএসএস রোনাল্ড রিগান। ছবি: এপি

গত জুনে একই দিনে ৮টি স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর আজ আবারও উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো। জুনের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের সনদ ভঙ্গের অভিযোগে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরও বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানায়।

উত্তর কোরিয়ার দাবি, জাতিসংঘের সনদ একটি দেশের নিজেকে রক্ষা করা ও মহাকাশ অভিযানের উদ্যোগের সার্বভৌম অধিকারের লঙ্ঘন। দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ মহড়াকে 'শত্রুভাবাপন্ন নীতিমালার প্রমাণ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

রাশিয়া ও চীনও এই মহড়ার সমালোচনা করেছে। দেশ ২টি সকল পক্ষকে 'উত্তেজনা বাড়তে পারে' এরকম কোনো উদ্যোগ নেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানায়।

 

Comments

The Daily Star  | English

The psychological costs of an uprising

The systemic issues make even the admission of one’s struggles a minefield

9h ago