১৬ দিন ধরে সুড়ঙ্গে আটকা ৪১ শ্রমিক উদ্ধারে একাধিক নতুন পরিকল্পনা

ভারতের উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশীর নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার কার্যক্রমে নানা বাধা-বিপত্তি দেখা দিয়েছে। ছবি: এএফপি
ভারতের উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশীর নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার কার্যক্রমে নানা বাধা-বিপত্তি দেখা দিয়েছে। ছবি: এএফপি

ভারতের উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশীর নির্মাণাধীন সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার কার্যক্রমে নানা বাধা-বিপত্তি দেখা দিয়েছে। যার ফলে উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া সংস্থাদের নতুন পরিকল্পনা ও কৌশল হাতে নিতে হচ্ছে।

আজ সোমবার ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভি এই তথ্য জানিয়েছে।

গত ১৬ দিনে ভারতের সরকারি সংস্থাগুলো বারবার পরিস্থিতি অনুযায়ী উদ্ধার কৌশল বদলাতে বাধ্য হয়েছে। পাশাপাশি, আটকে পড়া শ্রমিকদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা অটুট রাখাও উদ্ধার অভিযানের বড় অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিকল অগার মেশিন সরিয়ে আনা

ট্রাকে করে ঘটনাস্থলে আনা হয়েছিল অগার মেশিন। ছবি: রয়টার্স
ট্রাকে করে ঘটনাস্থলে আনা হয়েছিল অগার মেশিন। ছবি: রয়টার্স

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা অগার ড্রিল মেশিনটি বিকল হয়ে ভাঙা পাথরের মাঝে আটকে পড়ে। কর্কস্ক্রুর মতো দেখতে এই ড্রিলের সামনের অংশে ছিল একটি ঘূর্ণায়মান ব্লেড। এটি পাথর কেটে প্রায় ৪৬ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল। 

আরও ১৪ মিটার ড্রিল করা বাকি থাকা অবস্থায় মেশিনটির ব্লেডগুলো পাথরে আটকে গেলে এটি বিকল হয়।

যার ফলে বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হয় সংশ্লিষ্টরা।

আন্তর্জাতিক সুড়ঙ্গ বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, 'অগারিং শেষ। এটা ভেঙে পড়েছে ও ধ্বংস হয়েছে।'

এরপর হায়দ্রাবাদ থেকে একটি প্লাজমা কাটার নিয়ে আসা হয়। এই যন্ত্রের মাধ্যমে আজ সোমবার সকালে এই অগার ড্রিলের আটকে পড়া অংশগুলো বের করে আনা হয়েছে। পরবর্তী পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ থেকে ম্যানুয়াল ড্রিলিং বা কায়িক শ্রম ব্যবহার করে ড্রিলিং শুরু হবে।

ম্যানুয়াল ড্রিলিং

ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছেন ম্যানুয়াল ড্রিলিং বিশেষজ্ঞ্রা। ছবি: রয়টার্স
ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছেন ম্যানুয়াল ড্রিলিং বিশেষজ্ঞ্রা। ছবি: রয়টার্স

অগার ড্রিল যে কাজটি শুরু করেছিল, সেটা শেষ করা হবে ম্যানুয়াল ড্রিলিংয়ের মাধ্যমে। গতকাল রোববার দিল্লি থেকে সেনাবাহিনীর ১১ সদস্যের একটি দল এ কাজের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। এই দলে আছে ছয় বিশেষজ্ঞ ও পাঁচজন রিজার্ভ সদস্য। এসে পৌঁছেছে। মাদ্রাজ স্যাপারস নামে পরিচিত সেনাবাহিনীর এই দলটি ম্যানুয়াল ড্রিলিংয়ে নেতৃত্ব দেবে।

উদ্ধারকর্মীরা জানান, এই দলের সদস্যরা ৮০০ মিলিমিটারের পাইপের ভেতরে যেয়ে ভাঙা পাথর সরাবেন।

এই প্রক্রিয়ায় দুই-তিন জন মানুষ পাইপের ভেতর ঢুকবেন এবং হাতে বহনযোগ্য যন্ত্র ব্যবহার করে পাথর সরিয়ে পাইপের পথ পরিষ্কার করবেন। তারা বিশ্রামের জন্য ফিরে এলে অপর একটি দল প্রবেশ করবে।

ম্যানুয়াল ড্রিলিং খুবই পরিশ্রমসাধ্য কাজ এবং এতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়ার অপর নাম 'র‍্যাট মাইনার' কারণ ইঁদুর যেভাবে খনন করে, সেভাবেই এই 'র‍্যাট মাইনাররা' খনন কাজ পরিচালনা করেন। 

আজ থেকেই ম্যানুয়াল ড্রিলিং প্রক্রিয়া শুরুর কথা রয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকর্মীরা জানান, আজ সকালে প্লাজমা গ্যাস কাটার দিয়ে অগার ড্রিলের অংশবিশেষ সরিয়ে নেওয়াতে পাইপের ভেতরে তাপের সৃষ্টি হয়েছে। তাপ কমে আসলেই ম্যানুয়াল ড্রিল শুরু হবে।

ভার্টিকাল ড্রিলিং

ভার্টিকাল ড্রিল প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ছবি: এএফপি
ভার্টিকাল ড্রিল প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ছবি: এএফপি

একপাশ থেকে আরেকপাশে হরাইজন্টাল ড্রিলিং প্রক্রিয়া বারবার বাধার মুখে পড়ছে। যার ফলে, উদ্ধারকর্মীরা উপর থেকে নিচে বা ভার্টিকাল ড্রিলিংয়ের পরিকল্পনা করছেন। এই প্রক্রিয়ায় সুড়ঙ্গের মুখ থেকে ৩০০ মিটার দূরের একটি অবস্থানে ৮৬ মিটার জায়গা খনন করা হবে। ইতোমধ্যে ৩১ মিটার ড্রিল করা হয়েছে।

গতকাল থেকে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। পাহাড়ের ওপর থেকে গর্ত খোঁড়ার এই পরিকল্পনা সফল হলে আটকে পড়া শ্রমিকদের একটি ক্রেনের মতো যন্ত্র ব্যবহার করে উঠিয়ে আনা হবে।

এই খনন কাজ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

অন্যান্য পরিকল্পনা

উদ্ধারকর্মীরা বারকোট থেকে সুড়ঙ্গের অপর অংশ দিয়েও শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। তবে এতে দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। উদ্ধারকর্মীদের প্রায় ৪৮০ মিটার অংশ খুড়তে হবে। গতকাল এই উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নিতে চারটি বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র ১০ মিটার এগিয়েছে খনন কাজ।

আরেকটি পরিকল্পনা রয়েছে, যার মাধ্যমে সুড়ঙ্গটির বাম পাশে আরেকটি ১৮০ মিটার দীর্ঘ ছোট সুড়ঙ্গ তৈরি করা হবে, যার মাধ্যমে উদ্ধারকর্মীরা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। এই উদ্যোগে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫ দিন।

আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে এই কাজটি শুরু হতে পারে।

 

Comments