কোথাও মানুষ ভালো নেই

প্রকৃতির প্রতিশোধ

ব্যাপারটা নতুন নয়, প্রকৃতির ওপর মানুষের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত পুরাতন বটে, প্রকৃতিকে জয় করতে হবে- এ প্রতিজ্ঞা নিয়েই মানুষের সভ্যতা এগিয়েছে। প্রকৃতিকে মানুষ ব্যবহার করছে, নিজের কাজে লাগিয়েছে এবং ধ্বংসও করেছে। ফলটা দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ।

সভ্যতা যত এগিয়েছে প্রকৃতির বিপদ ততই বেড়েছে, সারা বিশ্বে প্রকৃতি আজ যতটা ও যেমনভাবে বিপন্ন তেমনটা আগে কখনো ঘটেনি; অথচ আজ এমন দাবি করা হয়, যে সভ্যতা এর অগ্রগতির শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে গেছে।

কিন্তু বিপদ তো কেবল প্রকৃতির নয়, মানুষেরও। প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে একটা ব্যাপার আছে, প্রকৃতি সেই প্রতিশোধটা নিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মানুষ আজ যতটা বিপন্ন তেমনটা আগে কখনো দেখা যায়নি।

দারিদ্র্য তো ছিলই। তা দূর করার নানান রকমের চেষ্টা চলেছে, এখনো চলছে। খুব যে ফলপ্রসূ হয়েছে তা নয়, বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। তারা অপুষ্টিতে ভোগে, স্বাস্থ্য সেবা পায় না। তাদের জীবনে অভাব রয়েছে বাসস্থান, বস্ত্র ও শিক্ষার। কিন্তু যে ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি তা এখন ঘটছে।

বিশ্বজুড়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে খাদ্যের। পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তাও গরিব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বিশ্ব আজ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক আলোকিত। সেই আলোর নিচে ভয়াবহ অন্ধকার ধরা পড়েছে। বার্ড ফ্লু নিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ওই ব্যাধিতে অনেক মানুষ মারা যাবে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এখন খাদ্য অভাবে এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ দুর্বল ও পঙ্গু হয়ে পড়েছে।

মানুষের এ বিপন্নদশার ব্যাপারটি যে হঠাৎ করে ঘটলো তা নয়, লক্ষণ আগেই দেখা যাচ্ছিল বৈকি; কিন্তু সভ্যতার উন্নতিতে গর্বিত মানুষ ভ্রুক্ষেপ করেনি। প্রকৃতির ওপর তার হস্তক্ষেপ ক্রমাগত বেড়েছে। প্রকৃতি এখন ভীষণ বিরূপ হয়েছে, প্রতিশোধ নিচ্ছে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি- এসব বিপদ ভয়ঙ্কর মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষে যা দেখা দিয়েছে তা হলো খাদ্যের ওই অভাব।

এ প্রায় অবিশ্বাস্য সংবাদ। বিশ্ব এতো এগিয়েছে, এতো রকমের উদ্ভাবন ও আবিষ্কার ঘটেছে- চাঁদে গিয়ে বসবাসের কথা ভাবা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির দরুণ বিশ্ব মানুষের হাতের মুঠোয় এসে গেছে। মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য উন্নত বিশ্ব ব্যাপাকহারে মানুষ খুনেও দ্বিধা করছে না।

এমন সেই আদিম বর্বরতারকালে খাদ্য সংগ্রহ নিয়ে যে দুর্ভাবনা মানুষকে কাতর করে রাখতো তা আবার দেখা দিয়েছে। কাকে বলবো অগ্রগতির নিরিখ? বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতিকে, নাকি আদিম খাদ্য অভাবের প্রদুর্ভাবকে?

খাদ্য অভাবের সঙ্গে প্রকৃতির ওপর মানুষের হস্তক্ষেপ প্রত্যক্ষরূপে জড়িত। লোকসংখ্যা বেড়েছে, ফসলের জমি বাড়েনি। কোথাও কোথাও উৎপাদনের জমি খালি পড়ে থাকে, অন্যত্র এর ভীষণ অভাব। ধরিত্রী উষ্ণ হয়েছে, অভাব দেখা দিয়েছে পানির। ফলে চাষের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন যে জল সিঞ্চন তা বিঘ্নিত হচ্ছে। তপ্ত মাটি ফেটে যাচ্ছে জমি উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে।

ঠিক এর বিপরীতে বরফ গলে যাওয়ার দরুণ উপর থেকে পানি নেমে আসছে নিচে। এতে সমুদ্রের পানি উঁচু হয়ে পড়ছে যার দরুণ প্লাবন দেখা দিচ্ছে। জ্বালানি পুড়িয়ে আবহাওয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মাত্রা ও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাণহানি ঘটছে মানুষের, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসল ও ফসলের মাঠ। বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্য সঙ্কট।

বিজ্ঞানীরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই বলে এসেছেন, প্রকৃতিকে উত্ত্যক্ত করতে নেই, করলে প্রকৃতি বিরূপ হবে, হয়তো প্রতিশোধ নেবে। বিবর্তনবাদের বৈজ্ঞানিক প্রবক্তা ডারউইনও ওই সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছিলেন; কিন্তু মানুষ সেসব কথা শোনেনি।

একদিকে প্রকৃতির বন্দনা গান করা হয়েছে, তাকে নিয়ে শিল্প-সাহিত্য তৈরি করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রকৃতিকে পরিণত করা হয়েছে পণ্যে। এর যা কিছু আছে সব কিছুকেই লুণ্ঠন করা হয়েছে।

মানুষও আসলে প্রকৃতিরই অংশ; কিন্ত যতোই সে উন্নত হয়েছে ততোই বিচ্ছিন্ন হয়েছে প্রকৃতি থেকে। ফলে একদিকে সে যেমন শিকার হয়েছে প্রকৃতির রুদ্ররোষের, অপরদিকে নিজেও ভীষণ কৃত্রিম হয়ে পড়েছে। তার স্বভাবে দেখা দিয়েছে নিষ্ঠুরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা।

জলকে বলা হয় জীবন। জল ছাড়া জীবন নেই। পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ জল, এক ভাগ স্থল- ভূগোলের বইয়ে এমনটিই পড়েছি; কিন্তু আজ পানীয়জলের ভীষণ অভাব দেখা দিয়েছে।

পানি যে কেমনভাবে দূষিত হয়েছে এর প্রমাণ আমাদের বুড়িগঙ্গা। তা এখন পরিণত হয়েছে একটি বিষাক্ত নর্দমায়; অথচ ওই বুড়িগঙ্গাতেও লঞ্চডুবি হয়, মানুষ মারা যায়। আগামী দিনে বিশ্বে নানান রকমের যুদ্ধ বাধবে বলে আশঙ্কা! এখন যুদ্ধ লাগছে জ্বালানি তেল নিয়ে, আগামীতে লাগবে পানি নিয়ে।

এই যে মানুষের হস্তক্ষেপ বলছি, তারা কোন মানুষ? সব মানুষ এ কাজ করে না। গরিবরা করে সামান্য পরিমাণে এবং যখন করে তখন ধনীদের কারণেই। তাদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে, তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই প্রকৃতির ওপর হস্তক্ষেপ ঘটায়। মূল কাজটা ধনীদেরই। বলতে হবে পুঁজিবাদীদেরই।

পুঁজিবাদী বিশ্বই মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ায়। তারাই পানিতে বর্জ্য ফেলে, জলবায়ুতে পরিবর্তন ঘটায়, অনিবার্য করে তোলে বহুবিধ মানবিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। গরিবরা গরিব হয় ধনীদের কারণেই এবং গরিব অবস্থায় ধনীদের অনুকরণ করে।

চীন এক সময়ে সমাজতন্ত্রী ছিল। আজ আর নেই। নেই যে তা বোঝা যাচ্ছে এর পুঁজিবাদী আচরণে। মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানি সেও পোড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে একদা যে দেশ তাদের ভয়ঙ্কর রকমের শত্রু ছিল সেই আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে এবং রাজি হচ্ছে না জ্বালানি ব্যবহারের ব্যাপারে সংযত হতে। তাদের আচারণ অবিকল পুঁজিবাদের মহানায়ক আমেরিকার মতোই।

চীন নিজের দেশের ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশকে ইতোমধ্যেই বিপন্ন করে তুলেছে। এখন ধরিত্রীকে তপ্ত করার ব্যাপারে হাত মিলিয়েছে আমেরিকার সঙ্গে।

পুঁজিবাদী বিশ্বই মানুষের জীবনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনে আবার তারাই বিপর্যস্ত মানুষের জন্য সাহায্য করবে বলে নানান রকমের আয়োজন চালায়। আমাদের দেশে প্রবাদ আছে- 'গরু মেরে জুতা দান'। এ ব্যাপারটিও ওই রকমেরই।

ওই যে বলা হয়- 'তুমি সাপ হয়ে দংশন করো, ওঝা হয়ে ঝাড়ো'। সাহায্য দানের ঘটনাটা সেই ধরনেরও বটে। দংশন তারা করেছে আবার প্রতিকারও তারাই করবে বলছে। এমন আচরণ তারা করবেই। এটি তাদের স্বভাব। কিছুতেই স্বীকার করবে না, বিপর্যয়ের জন্য তারাই দায়ী।

পুঁজিবাদীরা যুদ্ধ লাগায়। মারণাস্ত্রের আঘাতে মানুষ মারে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার মানুষকে মেরে ফেলছে, লাখ লাখ মানুষকে উদ্বাস্তু করে দিয়েছে। অতীতের দু'টি বড় বিশ্বযুদ্ধ তাদেরই কীর্তি।

এখন প্রতিনিয়ত স্থানীয় যুদ্ধের উস্কানি দিচ্ছে, বিবদমান উভয় পক্ষের কাছে নগদ অর্থে অস্ত্র বিক্রি করছে। এও তাদের হস্তক্ষেপের আরেক নৃশংস দৃষ্টান্ত বটে। উস্কানি দিয়ে থামেনি, ইউক্রেনকে মাঝখানে রেখে পুঁজিবাদী দুই পক্ষ যুদ্ধ বাঁধিয়েছে।

পুঁজিবাদীরা অর্থনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র- সর্বক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে থাকে। নিজের দেশে করে, বিদেশেও করে। তারা সম্পদ লুন্ঠন করে নিয়ে যায়। দরিদ্র সৃষ্টি করে আর গড়ে তোলে বৈষম্য। বৈষম্য দেখা দেয় ধনী ও দরিদ্রে, নারী ও পুরুষে, সবল ও দুর্বলে।

যখনই কোনো বিপর্যয় ঘটে তখন এর আঘাতটা সবচেয়ে বেশি করে গিয়ে পড়ে দুর্বল মানুষজনের ওপর। সেবার সিডরের আঘাত এসে আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিল, আশ্রয়হীন করলো কতোজনকে কে জানে!

দেখা যাবে, তাদের অধিকাংশই হচ্ছেন দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত। বিত্তবানরা সেখানে থাকেন না। যারা থাকেন তারা বিপদের আভাস পেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। মারা পড়ে নিরুপায় মানুষজন।

অত্যন্ত বিশেষভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয় মেয়েদের। তাদের পক্ষে আশ্রয়স্থল পাওয়া কঠিন, চলাফেরা কঠিনতর। তারা আটকা পড়ে থাকেন আবার যখন ত্রাণসামগ্রী আসে তখন তারাই বঞ্চিত হন বেশি করে।

সাহায্য পুরুষদের হাতেই প্রথমে পৌঁছায়, অবশিষ্ট থাকলে তবেই মেয়েরা পান। পরিবারের ভেতরে মেয়েদের যে অবস্থা, বাইরে এর ব্যতিক্রম হবে কী করে? হয় না, হবেও না।

কেননা সমাজ পুরুষতান্ত্রিক এবং পুঁজিবাদও পুরুষতান্ত্রিকই। নারীকে অধীনস্ত করে রাখা ওই ব্যবস্থারই প্রতিফল। এখানে ওই ব্যবস্থার বাস্তবিক প্রকাশও বটে।

বিশ্ব পুঁজিবাদ উৎকট ও নির্মম চেহারাটা যদি দেখতে চায় তবে এর সামনে চমৎকার একটি দর্পণ রয়েছে উপস্থিত। তা হলো বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট। এখানেই সে ধরা পড়ে যায়। তার অমানবিক স্বভাব-চরিত্রকে আড়ালে রাখার আর কোনো সুযোগই থাকে না। এ সঙ্কট পুঁজিবাদই তৈরি করেছে। একটি প্রকৃতির অবদান নয়, প্রকৃতির ওপর অত্যাচারের প্রতিদান বৈকি।

জলবায়ুতে পরিবর্তন ঘটানোর ব্যাপারটি তো রয়েছেই, সে সঙ্গে আছে কৃষিকে অবজ্ঞা করার ঘটনাও। শিল্পায়নকেই প্রধান করে তোলা হয়েছে। ক্ষেত্রে বিশেষ এটিই হয়ে দাঁড়িয়েছে একমাত্র আগ্রহের বিষয়। কৃষি অবহেলিত হয়েছে। আরো বড় যে ঘটনা তা হলো কৃষককে দরিদ্র করে রাখা। কৃষি কাজের জন্য পানি দরকার। পানি তোলার জন্য ডিজেল চাই, তা অগ্নিমূল্য। সার দরকার, এরও সরবরাহ কম। বীজও পাওয়া যায় না পর্যাপ্ত পরিমাণে।

উন্নত বিশ্বের মানুষজন ভীষণ রকমই মাংসাশী। তাদের সেই খাদ্য জোগাড়ের প্রয়োজনে পশুপালন করতে হয় এবং পশুকে যে খাদ্য দিতে হয় তাও আসে কৃষি থেকেই। উন্নত বিশ্ব নিজের দেশে কৃষি উৎপাদন ভর্তুকি দেয় আর গরিব দেশকে বাধ্য করে ভর্তুকি না দিতে।

ফলে সেখানে উৎপাদনের জন্য খরচ হয় উচ্চহারে। খাদ্যের দাম বাড়ে। নিম্নআয়ের লোকজন বিপদে পড়ে। তাদেরকে নানান ধরনের দুর্ভিক্ষের খপ্পরে পড়তে হয়।

এখন ঘটছে আরেক অবিশ্বাস্য ঘটনা। জ্বালানি তেলের দাম চড়া আবার সেই তেল পোড়ানোর দরুণ পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে- এমন অভিযোগও উঠেছে। তাই খনিজ তেলের  বিকল্প হিসেবে জৈবজ্বালানি ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং তা আসবে অন্য কোনোখান থেকে নয়, খাদ্যশস্য থেকেই। এর অর্থ হলো ক্ষুধার্ত মানুষের মুখের কাছ থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে মোটরগাড়ির অগ্নিক্ষুধা মেটানো।

গত শতাব্দীর প্রথম দিকে মোটরগাড়ি যখন চোখে পড়ার মতো ব্যবহার শুরু হয় তখন উদারনৈতিক ভাবুকদের কাউকে কাউকে বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা গেছে।

তাদের ভয়টা ছিল এই রকমের- মোটরগাড়ির ব্যাপক প্রচলন ঘটলে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটবে, দুর্ঘটনা বাড়বে, গাড়িনির্ভর হওয়ায় ক্ষতি হবে স্বাস্থ্যের।

তারা ভাবলেন হাঁটাই ভালো, না পারলে সাইকেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা অবশ্য ভাবতে পারেননি, জ্বালানি তেলের অবিরাম ব্যবহার ঘটিয়ে মোটারগাড়িওয়ালারা বিশ্বকে কোন ধরনের বিপদের মধ্যে ফেলবে। বিপদটা এখন মূর্তিমান সত্য। তাই খনিজ জ্বালানির বিকল্প হিসেবে জৈবজ্বালানি ব্যবহার শুরু করেছে।

ক্ষুধার্ত মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে মোটরগাড়িকে ছুটন্ত রাখার ব্যবস্থা চলছে এবং এ কাজে একদা সমাজতান্ত্রিক চীনও পিছিয়ে নেই, আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দেয়ার তাল করছে। এক সময় চীন বিখ্যাত ছিল সাইকেল চালানোর জন্য। চীনের সাইকেলগুলো এখন মোটরগাড়ির দর্পের তলে পড়ে নিতান্তই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। চাপা পড়বে এমন দশা তাদের।

সারা বিশ্বেই এখন পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য। এর কাছে দুষ্কর্মের জবাব চাইবে এমন কোনো রাষ্ট্র শক্তি এখন আর অবশিষ্ট নেই। সে এখন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক বিস্তৃত, প্রবলন ও স্বৈরাচারী। ভেতর-বাইরে সে যে স্বৈরাচার চালিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাপারে জবাবদিহিতার প্রশ্ন উঠছে না।

ব্যাপারটি কেমন তা বোঝা যায় মিয়ানমানের সামরিক স্বৈরাচারীর আচরণ দেখলে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে উদ্বাস্তু করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, এবং নিজের দেশের মানুষের ওপর অতিনির্মম স্বৈরাচার চালাচ্ছে।

এদিকে মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দুই মস্তবড় প্রতিবেশী পুঁজিবাদী চীন ও পুঁজিবাদী ভারত- কেউ-ই গা করছে না। কারণ উভয়েরই চোখ রয়েছে দেশটির তেল-গ্যাসের ওপর। রাশিয়াও দেখা যাচ্ছে লাভের লোভে মিয়ানমানের শাসকদের দিকে ঝুঁকছে। মোট কথা, পুঁজিবাদের হস্তক্ষেপ আজ সর্বত্র। পুঁজিবাদের বিকল্প সামাজিক মালিকানা। বাঁচতে হলে সে পথেই যাওয়া চাই।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

7h ago