প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রসারে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর সাধনা
ব্রিটিশরা যখন থেকে ইংরেজি ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন তখন থেকেই বাংলার মুসলমান সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার শুরু। আরও নানাবিধ কারণ আছে। কিন্তু প্রধান কারণ ধর্মীয়। মোগলরা ধর্মে ছিল মুসলমান, তাদেরকে পরাজিত করে ব্রিটিশদের ক্ষমতা দখল তাই মুসলমান সমাজ স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে পারেনি। সঙ্গে ছিল মোল্লাদের ফতোয়া। ইংরেজি শিক্ষা ছিল অনেকটা হারাম, যে শিখতো তাকে করা হতো বেইজ্জতি। এভাবে চলছিল উনিশ শতক পর্যন্ত।
উনিশ শতকের শেষে উবায়দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী, সৈয়দ আমীর আলী, নবাব আবদুল লতিফরা এগিয়ে এসেছেন মুসলমানদের ইংরেজিবিমুখতা দূর করতে। কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারেননি। ইংরেজির প্রতি বিদ্বেষ দূর করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার মূল লড়াই শুরু হলো বঙ্গভঙ্গের পর। বলা যায় 'জাগরণ'র ঢেউ উঠলো মুসলমান সমাজে। সেই ঢেউয়ে যারা বাঙালি মুসলমান সমাজের শিক্ষা ও সাহিত্যে সমানভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ অন্যতম।
১৮৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। স্মৃতিকথায় জানিয়েছেন: "পিংনা হাইস্কুলে পড়ি। তখন স্বদেশী আন্দোলনের তরঙ্গ বাংলার পল্লীতে পল্লীতে ছড়িয়ে পড়েছে। 'বন্দে মাতরম' সঙ্গীতের উন্মাদনায় তখন বাংলার পথঘাট, বনবীথি উদ্বেলিত।" (ইবরাহীম খাঁ:১৯৯৪, ৪৯) বঙ্গভঙ্গ এবং পরবর্তী বাংলার রাজনৈতিক উন্মাদনা, তারপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামাদা দেখে বেড়ে উঠা ইবরাহীম খাঁ বাংলার মুসলমানদের শিক্ষা ও সাহিত্যে কিভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাধনার মাধ্যমে, তা জানবো বিস্তারিত।
স্কুলে থাকাবস্থায় ইবরাহীম খাঁ দেখেছেন হিন্দুদের স্বদেশী আন্দোলন। অনুভব করলেন 'নিষ্ক্রিয় জীবন'র অসারতা। যেমন "আমাদের সহপাঠী অন্য সমাজের ছেলেরা সে জোয়ারের স্রোতে সোল্লাসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে; আমরা কিনারে দাঁড়িয়ে কেবল দেখব আর দেখব, এ আমাদের ভাল লাগত না।" তখনই তিনি খুলে বসেছিলেন মুসলমান ছাত্রদের 'কোচিং'! সেই অভিনব ঘটনা শুনি তার জবানে: "আফতাব ভাই আর গফুর ভাইকে নিয়ে পিংনায় আমরা এক কোচিং ক্লাসের মত খুললাম। প্রতি রবিবারেই স্কুলের মুছলমান ছেলেদের বেশীর ভাগই এসে হাজির হ'ত হাজী মজহর উল্লা তালুকদার সাহেবের বাড়ীতে। আমরা তিনজনে সব ছেলের পড়ার খোঁজ, চরিত্রের খোঁজ নিতাম; উপদেশ, ধমক বিতরণ তো হতই; এর উপর দুই-এক জনকে ধরে মারতাম। এর জন্য কোন ছেলে কোন দিন উচ্চবাচ্য করে নাই। দুই বছর মধ্যেই এর ফল দেখা দিল। স্কুলে মুছলমান ছেলে তখন শতকরা ত্রিশেরও কম, অথচ বার্ষিক পরীক্ষার ফলে সমস্ত শ্রেণীর মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানের শতকরা আশিটি মুছলমান ছেলেরা অধিকার করে বসল। নতুন সাহস, নতুন উদ্যমে তাদের বুক ভরে উঠল।" (প্রাগুক্ত, ১২৬) অর্থাৎ, ছাত্রজীবন থেকেই তিনি মুসলমান সমাজ তথা পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। যেন তিনি শুনতে পেয়েছিলেন ভবিষ্যতের ডাক!
ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে আইএ পাশ করে ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতার সেন্ট পলস্ কলেজে—পড়েন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে। তারপর নেশা ধরলো আইন পড়ার। ১৯১৭ থেকে ২৩— এই সাত বছর আইন পড়ে পাশ করলেন। ওকালতী ব্যবসা শুরু করলেন ময়মনসিংহ শহরে। ২৫ সাল পর্যন্ত টানা দুই বছর করলেন ওকালতী। কিন্তু আকস্মিক এক ঘটনায় খাঁ সাহেবের জীবনের মোড় ঘুরে গেলো।
১৯২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে করটিয়ায় গেলেন। সেখানে আলাপ হলো বিখ্যাত পন্নী পরিবারের তৎকালীন জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর সঙ্গে। খেলাফত-অসহযোগ আন্দোলন করে জেল খেটেছেন পন্নী সাহেব। দুইজন মিলে দেশের কথা বলতে বলতে উঠলো খাঁ সাহেবের প্রতিষ্ঠিত হাইস্কুলের কথা। পন্নী সাহেব প্রস্তাব দিলেন হাইস্কুলের ভার নেওয়ার। ইবরাহীম খাঁ কী জবাব দিলেন? জানি সেই আলাপ:
"পন্নী: আমি যে আপনাকে এখানে স্থায়ীভাবে চাই। আপনি আবার হেড মাস্টার হয়ে এখানে আসুন।
খাঁ: সে হয় না হুজুর ; তা পারি না।
: কেন পারেন না? কত আপনার ওখানে রোজগার? কত বেতন দিলে আপনি নিশ্চিন্ত মনে আসতে পারেন?
: বেতনের কথা তো এখানে বড় কথা নয়। হুজুর ; আসল ব্যাপার হল এই যে হাই স্কুলের হেড মাস্টারী নিয়ে আমি তৃপ্ত থাকতে পারি না। এখানে যে তখন মাস্টারী নিয়ে ছিলাম সে তো নিতান্ত সাময়িকভাবে।
: তবে কিভাবে আপনাকে আমি এখানে পেতে পারি?
: একটা কলেজ যদি করেন, তবে আমি আসতে পারি।
: বলেন কি, কলেজ?
: হ্যাঁ, কলেজ!
: এই পাড়াগাঁয় কলেজ হতে পারবে?
: হুজুর খরচের ভার নিন, আমি কলেজ করে দেওয়ার ভার নেই। যদি কলেজ করতে পারি, আমি কলেজে চলে যাব, যদি তা না পারি তবে আমি স্কুল নিয়েই তুষ্ট থাকব।
: বেশ আমি খরচের ভার নিচ্ছি।
: আমিও কলেজ করে দেওয়ার ভার নিলাম।" (প্রাগুক্ত)
সেই যে 'কলেজ করে দেওয়ার ভার' নেওয়া, তারপর শুধুই সফলতার গল্প বুনেছেন পাকা হাতে। পরের বছরেই জুলাই মাসে কলকাতা গিয়ে হাইস্কুলকে কলেজে উন্নীত করলেন; নিজে হলেন প্রিন্সিপাল। জড়ো করলেন বিখ্যাত সব পণ্ডিতদের। ইংরেজিতে অধ্যাপক কাজী আকরম হোসেন, ইতিহাসে অধ্যাপক নজীর আহমদ, গণিতে অধ্যাপক ধীরেন মুখার্জী আর ফার্সিতে অধ্যাপক গোলাম মকসূদ হিলালীর মতো বিদ্বানরা সেদিন একত্রে অধ্যাপনা করেছেন করটিয়া সা'দত কলেজে।
এমন বিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেওয়া মুসলমান ছাত্রদের জন্য করটিয়া সা'দত কলেজ ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। কারণটা স্বয়ং প্রিন্সিপালের মুখেই জানি: "সেকালে দ্বিতীয় শ্রেণীর এম-এ পাশ সাহেবেরা সরাসরি সরকারী কলেজে চাকরি পেতেন না, অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা থাকলে পেতেন। মুছলমান দ্বিতীয় শ্রেণীর এম-এ দের পক্ষে করটিয়া ছাড়া আর কোথাও তখন অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ ছিল না। তারা সাদত কলেজে আসতেন অভিজ্ঞতা অর্জন করতেন, তারপর সরকারী কলেজে চলে যেতেন। অভিজ্ঞ শিক্ষক হারানো আমাদের পক্ষে ক্ষতির কারণ ছিল, কিন্তু দেশের তাতে উপকার হয়েছিল। করটিয়ার ভূতপূর্ব অধ্যাপকেরা এখন পূর্ব পাকিস্তানের বহু সরকারী কলেজে ছড়িয়ে আছেন।" (প্রাগুক্ত) উদ্ধৃতি থেকে দুইটি বিষয় খেয়াল করা জরুরী: এক. কেবল মুসলমান ছাত্র তৈরি নয়, বরং মুসলমান শিক্ষক তৈরিতেও করটিয়া সাদত কলেজ ছিল তৎকালীন অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দুই. তিনি স্বীকার করছেন 'অভিজ্ঞ শিক্ষক হারানো আমাদের পক্ষে ক্ষতির কারণ ছিল', কিন্তু পরক্ষণেই আবার সানন্দে বলছেন 'কিন্তু দেশের তাতে উপকার হয়েছিল'— বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ কোরবানির জন্য যে উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও মহৎ হৃদয়ের অধিকারী হতে হয় তার দৃষ্টান্ত প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ।
কেবল কলেজ প্রতিষ্ঠা নয়, সাদত কলেজের প্রিন্সিপাল থাকাকালীন প্রতিষ্ঠা করলেন নিজগ্রামে— ভুয়াপুর হাইস্কুল। নিজে এলাকাবাসীর সাথে চাঁদা তুলেছেন, বৃষ্টির মধ্যে ভিজেছেন। ভিক্ষুকের কাছ থেকেও পেয়েছেন সাহায্য। হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন ষাট হাত লম্বা ছনের ঘর করার মাধ্যমে। তখনকার ভুয়াপুর এলাকার জমিদার পরিবার থাকতেন কাশীতে। প্রিন্সিপাল সাহেব সঙ্কল্প করলেন: "আমি সেই কাশী গিয়েই তাঁদের ধরব"। ১৯৪২ সালের পয়লা মে— সেই সুদূর কাশী যাত্রা করলেন— উদ্দেশ্য কেবল হাইস্কুলের জন্য টাকা সংগ্রহ করা। গিয়ে পৌঁছলেন কাশী, জমিদার পরিবারে গেলেন আবদার নিয়ে। ফলাফল: "কুমার শচীন্দ্র নারায়ণ সান্যাল নিজে ভুয়াপুরে সাহায্য দিতে স্বীকার করলেন। পরে তারা ইস্কুলে মাসিক সাহায্য মঞ্জুর করেন।" (প্রাগুক্ত) কলেজের বিখ্যাত প্রিন্সিপাল হয়ে নিজের গ্রামের কথা ভুলে যাওয়া এখন রেওয়াজে পরিণত হলেও ভুলেননি প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ। তাই তো এতো কষ্ট সহ্য করে কাশীতে পর্যন্ত গিয়েছেন স্কুলের ফান্ডিংয়ের জন্য।
কেবল হাইস্কুল নয়, ১৯৪৮ সালে গ্রামের লোকজনের অনুরোধে কলেজ প্রতিষ্ঠা করলেন। কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য মাওলানা ভাসানীকে সঙ্গে নিয়ে সভা করেছিলেন। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থেকে পাঁচ কিলোমিটার গিয়েছিলেন পায়ে হেঁটে! এতো শ্রম, ত্যাগ কেবল বাংলার দরিদ্র মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো জ্বালানোর জন্য।
দেশভাগের পর পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে 'বাংলা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড'র প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করলেন। এখানেও তার পদ গ্রহণের মহৎ উদ্দেশ্য— নতুন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা কতটা নাজুক অবস্থায় পড়েছিল তা বোঝা যাবে প্রিন্সিপাল সাহেবের সেই সময়ের স্মৃতিকথায়: "সামনে ম্যাট্রিক পরীক্ষা। বাজারে কাগজ নাই, তহবিলে টাকা নাই, স্টাফে লোক নাই। বোর্ডের সেক্রেটারি ছিলেন আবদুছ ছামাদ এম-এ, বি-এল। দু'জনে মিলে সংকল্প করলাম, কাজ আমাদের করতেই হবে। সেক্রেটারি জানেপ্রাণে খাটতে শুরু করলেন। গভর্নমেন্টের কাছে এক লাখ টাকা সাহায্য চাইলাম। উত্তর দিল, 'ওটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, টাকা মঞ্জুর চলে না।' লিখলাম, 'ধার দাও।' বলল, 'তাও নয়।' পাঠ্য বই সংকলন করলাম। তাতে লাখ দুই টাকা আমদানি হল। তাই দিয়ে কাজ শুরু করলাম। নতুন কেরানী নিলাম। কেরানীরাও আমাদের দেখাদেখি রাত আটটা, নয়টা, দশটা পর্যন্ত খাটতে লাগল। পাঠ্য বই হল, পরীক্ষাও নিলাম। স্কুলগুলিকে নানা রকম সাহায্য করে, উৎসাহ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখলাম।" (প্রাগুক্ত) দেশের শিক্ষাব্যবস্থা দাঁড় করানোর জন্য প্রেসিডেন্ট হয়েও এমন প্রচেষ্টা, শ্রম দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। দেশের মানুষের প্রতি দরদ না থাকলে এমন কাজ সম্ভব নয়।
বোর্ডের চাকরির মেয়াদ শেষ হলো ১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু বাংলার মুসলমানদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার যে সংকল্প তা তো অটুট! তিনি দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লিখতে লাগলেন "আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা" নামক প্রবন্ধ। যেখানে তিনি শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশাসক ও শিক্ষকদেরকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এই প্রবন্ধ এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, 'ঢাকা ও টাঙ্গাইলের রশিদীয়া লাইব্রেরীর মালিক মৌলভী আবদুর রশীদ খান সাহেব শিক্ষা ব্যাপারে অনাচার দূরীকরণে ইহা সহায় হইবে বিবেচনায়' পুস্তক আকারে প্রকাশ করে ফ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করেছিলেন। শুরুতেই লেখা ছিল, "যে কোন ব্যক্তি প্রকাশকের নিকট লিখিলেই বিনা মূল্যে ইহা পাঠাইয়া দিবেন"। এতেই বোঝা যায়, তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থায় প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ'র প্রভাব কত প্রকট ছিল।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী 'পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস'র প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবুল কাসেম চিন্তা করলেন বাংলা কলেজ করবেন। যেখানে উচ্চশিক্ষার একমাত্র বাহন হবে বাংলা। তিনি প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ'র কাছে গেলেন প্রস্তাব নিয়ে। বাংলা কলেজের সেক্রেটারি হতে রাজি হলেন। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ সভাপতি, প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ সেক্রেটারি এবং অধ্যাপক আবুল কাসেম হলেন অধ্যক্ষ— এই তিন বিদ্বানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা হয় বাংলা কলেজের। প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী সঙ্কটের ব্যাপারে লিখেছেন তিনি: "তখন কলেজের কোটে টাকা ছিল কুড়ি দুই। কলেজের ক্লাস ও হোস্টেলের জন্য ঘরের খোঁজে বের হই। আমাদেরকে দেখে ঘর দিতে চায়, কলেজের নাম শুনে পিছিয়ে যায়। অবশেষে একটি উদার হাই স্কুলের কমিটি বাঙলা কলেজকে নৈশ ক্লাস করতে ঠাঁই দেয়।" (ইবরাহীম খাঁ: ১৯৯১) শিক্ষাব্যবস্থায় প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য ১৯৪৬ থেকে ৭১ পর্যন্ত টানা ২৫ বছর পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার গর্ব ছিল করটিয়া সাদত কলেজ নিয়ে। গর্বিত কণ্ঠেই তিনি বলেছেন: "সমগ্র বাংলা-আসামের মধ্যে মুছলমানের স্থাপিত এই প্রথম কলেজ, আর আমি তার প্রিন্সিপাল এবং প্রথম মুছলিম প্রিন্সিপাল।" (ইবরাহীম খাঁ) আর এজন্যই 'প্রিন্সিপাল বলতে বাংলাদেশে ইবরাহীম খাঁকেই বুঝায়। ...। শিক্ষার প্রতি তার শ্রদ্ধা ও ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ তার নামের সঙ্গে প্রিন্সিপাল পদবী অম্লান হয়ে আছে চিরদিন। তাই কাউকে বলে দিতে হয় না প্রিন্সিপাল সাহেব কে।' (ফরহাদ খাঁ)
বাংলার মুসলমান সমাজে আজ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যে ফুলঝুরি তার গোড়াপত্তনে প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। শুধু স্মরণে নয়, শিক্ষা নিতে হবে তার জীবন থেকে— যে জীবন তিনি উৎসর্গ করেছেন বাংলার মুসলমান সমাজে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তার রচনা ও জীবন থেকে জানাতে হবে পথচলার আদর্শ...
সহায়ক বই:
১. ইবরাহীম খাঁ রচনাবলী : মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি, ১৯৯৪
২. প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ : ইবরাহীম খাঁ একাডেমী, ১৯৯১
৩. ইবরাহীম খাঁর নিবেদিত জীবন : ফরহাদ খাঁ ও রুহুল আমিন বাবুল সম্পাদিত, রুনা প্রকাশনী, ১৯৭৯
Comments