বিশেষ নিবন্ধ

বাংলা ভাষার টিকে থাকার লড়াই ও একটি অনুসন্ধান

এক ছিল রাজা, তার ছিল ‍দুই রানী। সুয়ো আর দুয়ো। দুয়ো ছিল রাজার প্রথম রানী, আর সুয়ো দ্বিতীয়। সুয়ো আসায় দুয়োর কপাল পোড়ে। রাজা সুয়োর অন্ধপ্রেমে দুয়োকে ভুলে যায় প্রায়। কিন্তু রাজার প্রকৃত মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী ছিল দুয়ো, যে থেকেছে আড়ালে অবহেলায়-দীনহীনের মতো।

বাংলা ভাষার রাজা ও রানীর এই গল্প  আমাদের সবারই পরিচিত। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ক্ষীরের পুতুল' এর গল্পও এরকম। বাংলা ভাষায় জন্ম নেয়া রাজা-রাণীর গল্পের দুয়োরানী যেন আমাদের বাংলা ভাষা। কী ভয়ঙ্কর বেদনার অধ্যায়, বাংলা ভাষার জন্য। তারই গর্ভে জন্ম নেয়া গল্পের চরিত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে তার ভাগ্য। নিয়তি বলে যদি থাকে কিছু, তাহলে বলতে হয় কী নির্মম-কী নির্দয় ও নিষ্ঠুর তার পরিহাস! একটা ভাষায় জন্ম নেয়া রূপকথার একটা চরিত্র সেই ভাষার টিকে থাকার লড়াইয়ের সঙ্গে মিলে গিয়ে সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছে।  রানী দুয়োর ভাগ্যের সঙ্গে বাংলা ভাষার ভাগ্যকে বেঁধে ফেলা হয়েছে একই সূত্রে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে। এমনকি দুয়োরানী রূপী বাংলা ভাষার রাজকুমার-রাজকুমারীরা যখন বড় হয়েছে তখনও মাতৃজননীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। 

বাংলা ভাষার যুগ বিভাজন অনুযায়ী, যে সময়কালের নিরিখে প্রাচীন ও মধ্যযুগের নিদর্শনসমূহ আমরা পাই, সেখানেও বাংলা ভাষাকে অনেক টিকে থাকতে হয়েছে অনেক লড়াইয়ের মধ্যে। যার সাক্ষ্য মেলে চর্যাপদের কালে ভুসুকুর উচ্চারণে, 'আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী/ ণিঅ ঘরিণী চণ্ডালে লেলী'। মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম বলেছেন, 'যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।/ সে সেব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।/ দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।/ নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।।/ মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।/দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।। বাংলা ভাষার টিকে থাকার লড়াইটা সেই সময়ের আর্থ সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কেমন  ছিল তার যথার্থ ধারণা মেলে উল্লেখিত দুই কবিতার অংশ-বিশেষে।

লক্ষ্যণীয়, বাংলা ভাষার জন্মের যে ইতিহাসকে মান্যতা দেয়া হয়েছে এবং বর্তমানে চালু রয়েছে সেই হিসেবেও বাংলা ভাষার বয়স প্রায় দেড় হাজার বছর কিংবা তার কাছাকাছি। কিন্তু এই দেড় হাজার বছরে তার রাজভাষা হওয়ার অভিজ্ঞতার বয়স হীরক জয়ন্তী ছুঁই ছুঁই করছে। বাংলা ভাষাভাষী মানুষের রাষ্ট্রের সরাসরি নিজস্ব রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা সবে সুবর্ণ জয়ন্তী পেরিয়েছে। বাংলা ভাষার রাষ্ট্র ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় বায়ান্নোর ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাকে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির বয়স হয়েছে একযুগেরও বেশি। আপাত দৃষ্টে এসবই বাংলা ভাষার জন্য গর্বের। কিন্তু এই সময়ে এসে বাংলা ভাষার টিকে থাকার লড়াইয়ের দিকে আমরা যদি নজর দিই, তাহলে দেখব বাংলা ভাষার প্রতি কখনোই সুবিচার করা হয়নি। বাংলা ভাষা কখনোই সুয়োরানীর ভাগ্য পায়নি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ যুগে এসে বাংলা ভাষা যেন আরও বেশি বিমর্ষ, কোণঠাসা ও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অনুসন্ধান বলছে এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে বাংলা ভাষাকে চর্যাপদের যুগের অবস্থা বরণ করতে হবে কিংবা তার চেয়েও অধিক খারাপ হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না। এখনই বাংলা ভাষা বলতে পারলেও লিখতে-পড়তে ও বুঝতে না পারা একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠছে বাংলাদেশেই। আবার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রবাসী ও তাদের সন্তানেরা বাংলাটা পড়তে চাচ্ছে ইংরেজি হরফে। এরকম একটা সংখ্যা বাংলাদেশেও বেড়ে উঠছে। ভারতের বাংলা ভাষাভাষিদের প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গে রোমান হরফে বাংলা বই প্রকাশনা শুরু হয়েছে, বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। বাংলা ভাষা নিয়ে তারা যখন কোন সংকট দেখে, আশাবাদের জায়গাটা পেতে চাই বা প্রত্যাশিত হয় বাংলাদেশের দিকে চেয়ে। কিন্তু তারা তো জানে না, বাংলাদেশের অমর  একুশে বইমেলাতে নতুন প্রজন্মের কিছু সংখ্যক ছেলেমেয়ে মেলায় গিয়ে ইংরেজি হরফে লেখা বাংলা বই খোঁজে। হতোদ্যম হয়ে বাংলা ভাষার গল্প ইংরেজিতে পড়ার সুখ খোঁজে নেয়। একুশের মেলায় ইংরেজি বই কিন্তু পাওয়া যায় দেদারছেও।

বাংলা ভাষার জগাখিচুড়ি অবস্থাটাকে পোক্ত করেছে রেডিও টেলিভিশন এবং সবশেষে মোবাইল। রেডিওর যোগ্য উপস্থাপক তিনিই, যিনি বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে বলতে পারেন। টেলিভিশনের অবস্থাটাও অনেকাংশে তেমনই। মোবাইলে শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ ক্ষুদে বার্তা আদান প্রদান করে ইংরেজি হরফে বাংলা লেখে। অথচ পঞ্চাশের দশকে বাংলা ভাষার রাষ্ট্র ভাষার প্রশ্নের দিনগুলোতে আরবি হরয়ে বাংলা লেখার ব্যাপারে রুখে দাঁড়িয়েছিল এই বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরাই।

হিন্দী, উর্দু বাংলা ভাষার তুলনায় অনেকখানি নবীন, সংকর এবং কৃত্রিম ভাবে তৈরি একটা ভাষা। সেই তুলনায় বাংলা ভাষার যে বয়স বর্তমানে স্বীকৃত সেটাও অনেক বেশি পুরনো। বলা হচ্ছে বাংলা ভাষা প্রাকৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত, মতান্তরে মাগধা প্রাকৃত। কিন্তু অনুসন্ধান বলছে খোদ প্রাকৃত ভাষায় বাংলা ভাষা। সেটা সময়ের সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক তাপে ও চাপে ওই রূপ নিয়েছিল। পরবর্তীতে যখন ওই অবস্থা থেকে বাংলা ভাষা ক্রমশ তার স্বরূপে ফিলে আসা শুরু করল এবং নিজস্বরূপে দাঁড় করাতে সমর্থ হল, সেই পরিবর্তিত পরিবর্তনকে বলা হল প্রাকৃত থেকে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে।

আমাদের অনুসন্ধান হল, বাংলা ভাষার বয়স তিন থেকে চার হাজার বছর কিংবা তারও বেশি।

মনে রাখা জরুরি, ভারতবর্ষ পৃথিবীতে এমন একটা ভূমি বা জনপদ যেখানে সবচেয়ে বেশি মানুষের পরিভ্রমণ ঘটেছে। এই পরিভ্রমণ কখনো ছোটরূপে, কখনো মাঝারি রূপে, কখনো বা অনেক বেশি বড়রূপে সংঘটিত হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে তিনটা মহা পরিভ্রমণের কথা এখন জানা যাচ্ছে। এইযে পরিভ্রমণ-এ ধরণের পরিভ্রমণে সবচেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে ভাষা। এবং তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল বঙ্গ বা বাংলা ভাষার বেদনাবিধূর পরিণতি।

সংস্কৃত কিন্তু ভারতীয় জনপদের ভাষা নয়। সংস্কৃত নিজস্ব কোন ভাষা নয়। হিন্দি, উর্দুর মতো কৃত্রিম ভাষা। সংস্কৃত নামের মধ্যেই লুক্কায়িত রয়েছে এই ভাষার ব্যুৎপত্তি ও তার নামকরণের সার্থকতা। সহজ ভাষায় বলা যায়, সংস্কারের মাধ্যমে যে ভাষার জন্ম হয়েছে সেটাই সংস্কৃতি ভাষা। ভাষার উৎপত্তি ও ভাষাবংশের দিকে লক্ষ্য করলেও সংস্কৃত থেকে কিছুটা আগত এবং কিছুটা এই জনপদের ভাষার সমন্বয়ে কৃত্রিমভাবে একটা ভাষার জন্ম হয়েছে সেটা স্পষ্টত। সংস্কৃতি কেন কখনো আম-জনতার ভাষা হয়ে ওঠেনি। কেন তার জন্ম ও মৃত্যু রাজ-রাজড়াদের এবং ধর্মীয় ধ্বজাধারীদের ভাষা হয়েও সমাপ্তি ঘটল, কারণ সংস্কৃত জনমুখ থেকে উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে জন্ম নেয়া কোন ভাষা নয়।

বাংলা ভাষার টিকে থাকার লড়াই : একটি অনুসন্ধান একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা প্রয়াস। ছোট পরিসরে আমরা যেটা বলতে চাই সেটাকে প্রস্তাবনা হিসেবে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত হবে। আমরা মনে করি, এক. বাংলা ভাষা প্রাকৃত থেকে উৎপত্তি নয়,  দুই. বাংলা ভাষা সংস্কৃতের ভগিনী নয়, তিন. বাংলা ভাষার জন্ম ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ কিংবা তার পরবর্তী সময়ে নয়, চার. বাংলা ভাষার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও গর্বের জায়গা নিয়ে নুতন করে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন, পাঁচ. বাংলা ভাষার সাহিত্যের যে যুগ বিভাজন তা প্রশ্নসাপেক্ষে এবং নতুন করে মূল্যায়ন, সংশোধন, পরিমার্জন এবং ক্ষেত্র বিশেষে নতুন সংযোজন ও বিয়োজনের বিষয়গুলো ভেবে দেখা যেতে পারে, ছয়. বাংলা ভাষার শ্রুত ইতিহাসও অনুসন্ধান ও গবেষণা করা প্রয়োজন, সাত. বাংলা ভাষার জন্ম যদি ৬৫০ শতকে কিংবা তারও পরে হয় তাহলে বঙ্গলিপির সঙ্গে বাংলা ভাষার যোগসূত্র। সংস্কৃত ভাষার কোন লিপি নেই। নাগরী ও দেব নাগরী লিপিকে আশ্রয় করে তার বিকাশ ঘটে। বাংলা ভাষার নিজস্ব লিপি রয়েয়ে যেটা বঙ্গ লিপি নামে সর্বজনে পরিচিত। রাজকুমার সিদ্ধার্থ বঙ্গলিপিতে পাঠ নিয়েছেন। লিপি কি ভাষারা আগে জন্ম নেয়, নাকি আগে ভাষা তারপর লিপি। তাহলে বঙ্গলিপি অনুযায়ী বাংলা ভাষার বয়স তো কমপক্ষে তিনহাজার বছর কিংবা তারও কাছাকাছি।

বাংলা ভাষার বয়স যেটাকে মান্যতা দেয়া হয়েছে পাঠ্য বইয়ে। সেটা কতোটা যৌক্তিক তার সুরাহা হওয়া দরকার। প্রসঙ্গত, অমর সিংহ রচিত 'অমরকোষ', বা নামলিঙ্গানুশাসন অভিধানটি খ্রিস্টীয় ছয় শতকে রচিত। সংস্কৃত এই অভিধানটি সম্পর্কে স্বরোচিষ সরকার বলছেন, 'বিশেষভাবে লক্ষণীয় এই যে, এ অভিধানের শব্দভাণ্ডার এবং বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের সিংহভাগ শব্দ অভিন্ন।'

পশ্চিম বঙ্গ থেকে প্রায় দুই দশক আগে গৌরিপ্রসাদ ঘোষের প্রধান সম্পাদকীয়তায় 'এভরিম্যানস ডিকশনারি' একটি বলে ইংলিশ থেকে বাংলা অভিধান প্রকাশিত হয়েছে। এর ভূমিকা অংশে গৌরিবাবু যা বলেছেন তাকে হেলা করার সুযোগ নেয়; উপরন্তু রয়েছে চিত্তাকর্ষক কতিপয় প্রসঙ্গের অবতারণা। ওই প্রসঙ্গের শিরোনাম হল : এক. ইংরেজি ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক, দুই. Centum ও Satem বিভাগ, তিন. ইংরেজি ও বাংলা : ঐতিহাসিক আকস্মিকতার মিল, চার. আর একটি ঐতিহাসিক লগ্ন, পাঁচ. পাশ্চাত্য প্রভাবে সংস্কৃতিচর্চার পুনরভ্যুত্থান, ছয়. সংস্কৃত প্রভাবের গুণগত রূপান্তর।

আমরা মনে করি, ইংরেজি বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে আরবীর সঙ্গে, ফার্সির সঙ্গে এবং সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘতর সম্পর্ক রয়েছে সংস্কৃতর সঙ্গে। এই সম্পর্কের ভেতর বাহির অনুসন্ধান ও গবেষণা সম্ভব হলেই বাংলা ভাষার উৎপত্তি, ইতিহাস ও বির্বতন নির্ণয় করা সম্ভব হবে।

আমরা মনে করি, বাংলা ভাষার টিকে থাকার লড়াইকে আরও সার্থক, অর্থবহ করে তুলতে হলে এর সঙ্গে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যোগসূত্র প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতাকে যুক্ত করা যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন এই ইতিহাসকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো। ইতিহাসের নানা বাঁকে এ ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে যেসব প্রশ্ন রয়েছে তার মুখোমুখি হওয়া। ভুসুকুর বাঙ্গালি হওয়ার মধ্যে যে কোন হীনতা বা নীচুতা নেই সেইসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নির্মাণ করা। বাংলা চণ্ডালের বা অচ্ছুতদের ভাষা ছিল না, তাকে সেটা করা হয়েছে ভাষার রাজনীতি দিয়ে, যার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল সেই সময়ের অর্থনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি, রাজনীতি, প্রশাসনিক নীতি ও সংস্কৃতি। 

বাংলাকে শোষিত বা অন্ত্যজ মানুষের ভাষায় পরিণত করা হয়েছিল, এটা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য লজ্জার নয়, গর্বের। কারণ সে শোষক দণ্ড নেয়নি, শোষিত ছিল। বঙ্গবন্ধু যেমন বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের দলে। বাংলা ভাষাও সেদিন ছিল শোষিত মানুষের ভাষা। ফলে, ভুসুকু  বাঙ্গালি হওয়ার মধ্যে দিয়ে গ্লানি নেই, রয়েছে গর্ব ও গৌরবের হিরন্ময় অতীত।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

7h ago