ঈর্ষাকাতর ভি এস নাইপল
ভি এস নাইপল বেঁচে থাকলে এ বছরের আগস্টে ৯০ বছর পূর্ণ করতেন। ২০১৮ সালের ১১ আগস্ট এই নোবেলজয়ী কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হয়েছেন। মুত্যুর ২ বছর আগে তিনি ঢাকা লিটফেস্টে এসেছিলেন। তিনি একাধারে স্বদেশবিদ্বেষী, পরদেশবিদ্বেষী ও নারীবিদ্বেষী। খুব কম অঙ্গনই বাকি আছে যেখানে নাইপলের বিদ্বেষের বাষ্প লাগেনি। তবু নিজ লেখার গুণে তিনি প্রায় অর্ধশতাব্দী রাজত্ব করে গেছেন।
নাইপল নিজের পরিচয় সংকটের কথা জানাতে গিয়ে বলেছেন, 'ইংল্যান্ডে আমি ইংরেজ নই, ভারতে ভারতীয় নই।' তিনি অবিরাম বৈরিতা সৃষ্টি করে গেছেন। আবার বন্ধুকে শত্রুতে পরিণত করেছেন।
ঈর্ষাকাতর বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট ত্রিনিদাদের চাগুয়ানাস গ্রামে দরিদ্র হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সিপ্রসাদ নাইপল, মা দ্রোয়াপতি। পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান। তার পিতামহ-পিতামহী ভারত থেকে ত্রিনিদাদের আখক্ষেতের ঠিকা শ্রমিক হিসেবে দেশান্তরী হন ১৮৮০ সালের দিকে। তখন দাসপ্রথা অবলুপ্ত হতে চলেছে; আখচাষের জন্য সস্তা শ্রমিক আনা সে-সময় অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। নাইপলের বাবা সাংবাদিকতা করতেন, তার খানিকটা সাহিত্যের উচ্চাশাও ছিল। ১৯২৯-এ তিনি ত্রিনিদাদ গার্ডিয়ান পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করতে শুরু করেন। এবং চাগুয়ানাস প্রতিনিধির দায়িত্বও পান তার বাবা।
নাইপল ১০-১১ বছর বয়স থেকেই জানতেন তিনি লেখকই হবেন। তিনি লেখকই হয়েছেন। উপনিবেশ থেকে শাসকের রাজ্যে উঠে এসে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন, নোবেল প্রাইজ জিতেছেন, নাইটহুড পেয়েছেন; বহু মানুষের অপছন্দের লেখক হয়েও ঈর্ষণীয় পাঠকভাগ্য তার।
তার দাবি অনুসারে, নাইপলের পিতামহ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার পরিবারের ধর্মানুরাগ অন্তর্হিত হয়, এমনকি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভাষা থেকেও সরে যায়। শেষদিকে নাইপলের মায়ের ব্যবহৃত একমাত্র ভারতীয় শব্দ ছিল 'বেটা'। ভি এস নাইপল বলেছেন, 'লেখক হতে হলে তোমাকে পৃথিবীর পথে বেরোতে হবে, পৃথিবীতে ঝুঁকি নিতে হবে, পৃথিবীতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে হবে, পৃথিবীর খোঁজে বেরোতে হবে। বয়স বেড়ে গেলে কাজটা কঠিন হয়ে পড়ে। বয়স্ক মানুষের বেলায় দিনগুলো ছোট, তখন বাইরে যাওয়া ও বাইরের পৃথিবীতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।… পৃথিবীর ব্যাপারে বিষাদময় বিষয়টি হচ্ছে এটি শুধু আহাম্মকে পরিপূর্ণ। আর আহাম্মকজন ও সাধারণজনের লাভের জন্য পৃথিবী পরিচালিত হয়ে থাকে।'
ভি এস নাইপল পাঠকের পছন্দ লেখক হলেও ঔদ্ধত্য, দুর্বিনীত আচরণ এবং কখনো কখনো একপেশে মন্তব্যের জন্য সমালোচিত হয়েছেন অনেক। মূলত ফিকশন লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশিত ও প্রতিষ্ঠিত নাইপল। বিভিন্ন রূঢ় মন্তব্যের কারণে বরাবরই আলোচনায় ছিলেন। এমনকি মৃত্যুর পরও তার সম্পর্কে লেখা হয়েছে 'নাইপল কাউকেই ছাড় দেননি- ঔপনিবেশিক শাসককেও না, উপনিবেশে শাসিত প্রজাদেরও না।'
১৯৫৫ সালের গ্রীষ্মের এক অপরাহ্ণে নাইপল লিখে ফেললেন 'বোগার্ট'; 'মিগেল স্ট্রিট' এর প্রথম এপিসোড। ১৭টি এপিসোডের সমন্বয়ে এই 'মিগেল স্ট্রিট'। তখনই প্রকাশ করতে সম্মত হলেন না প্রকাশক। তার আশঙ্কা ছিল, অপরিচিত ক্যারিবিয়ান লেখকের বই যদি বিক্রি না হয়। প্রকাশক তাকে উপন্যাস লিখতে বললেন। ১৯৫৫ সালের শরতে তিনি লিখলেন 'দ্য মিস্টিক ম্যাসিওর', যার অর্থ হতে পারে 'অতীন্দ্রিয় অঙ্গমর্দনকারী'। ১৯৫৫ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রকাশক উপন্যাস প্রকাশের জন্য এর পাণ্ডুলিপি গ্রহণ করলেন, নাইপল পেলেন ১২৫ পাউন্ড।
নাইপল কেমন লেখক? এডওয়ার্ড সাইদ নাইপলকে অভিযুক্ত করেছেন। কারণ তিনি অযৌক্তিক ব্যাখ্যায় প্রাচ্যের সংস্কৃতিকে আদিম, বর্বর এবং অশিক্ষিত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আফ্রিকা সম্পর্কে কিঞ্চিৎ জেনে আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করার ভান করেছেন, প্রাচ্যের মূল্যায়ন করেছেন। এডওয়ার্ড সাইদ যতটা না দুঃখে তার চেয়ে বেশি ক্রোধে তাকে নব্য বুদ্ধিবৃত্তিক উপনিবেশবাদ প্রচারের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।
এভলিন ওয়াফ একবার বলেছিলেন, 'নাইপলের গদ্য তার সমকালীন ব্রিটিশদের লজ্জা দেয়।' এভলিনের মতো কাঠখোট্টা লেখক-সমালোচকের মুখে এটি একটি অসাধারণ প্রশংসা।
সালমান রুশদি মনে করেন, সাহিত্য বা রাজনীতি কোনো বিষয়ে তিনি ভি এস নাইপলের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। ডেরেক ওয়ালকট বলেছেন, 'নাইপল নিগ্রোদের পছন্দ করেন না।'
নিজের মাতৃভূমি ত্রিনিদাদ সম্পর্কে নাইপল বলেছেন, 'আনইম্পর্ট্যান্ট, আনক্রিয়েটিভ, সিনিক্যাল, এ ডট অন দ্য ম্যাপ।'
দেশবাসী সম্পর্কে বলেছেন, 'একটি বানরও দেখতে পাইনি যে আমার বই পড়ে। কেবল শারীরিক যে জীবন সেই জীবনই তারা যাপন করে; আমার কাছে তা ঘৃণ্যজীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী বর্বরদের সম্পর্কে পড়াশোনা করছে ত্রিনিদাদের লোক তাদের জন্য কৌতূহলের বিষয় হতে পারে।' ত্রিনিদাদের ভারতীয় সমাজের ফাঁপা অবয়বটি নাইপলকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট ও বিচলিত করেছে।
নাইপল যেভাবে বর্ণনা করেছেন বাস্তবের ত্রিনিদাদ তার চেয়ে বেশ খানিকটা ভিন্ন, তার বিবরণীর চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। নাইপল যেসব মানুষের স্থবিরতা নিয়ে ঠাট্টা করেছেন, তারাই পুরনো রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা ভেঙে পিপলস ন্যাশনাল মুভমেন্টকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে পিপলস পার্টিসিপেশনকে জয়ী করেছেন। নাইপলের কথা সত্য হলে এত বড় পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হতো না। তারপরও বর্ণবাদী যে রেশ রয়ে গেছে তা দাসত্বের কাল এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালের। হীনমন্যতার বীজ তো জন্মের পরপরই ড্রাম পিটিয়ে শিশুর কানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়—নাইপলের উপন্যাস 'মিগেল স্ট্রিট' এবং 'অ্যা হাউস ফর মিস্টার বিশ্বাস' এ কাজটি করেছে। নাইপল উপনিবেশবাদী সংস্কৃতি নিয়ে জীবনযাপনের তিক্ত চিত্র তুলে ধরেছেন, উপনিবেশ স্থাপনকারীদের সম্মান নাইটহুড সানন্দে গ্রহণ করেছেন। নব্য উপনিবেশবাদের পক্ষেই প্রকারান্তরে লিখে গেছেন।
রিচার্ড সুডান মনে করেন, 'ব্রিটিশ উপনিবেশবাদী শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার যে উৎসব, যে কার্নিভাল—ভিএস নাইপল উদযাপনকারী ত্রিনিদাদবাসীর নাড়ির স্পন্দন বুঝতে পারেননি। ত্রিনিদাদিয়ান যে অহংকার, তা তিনি অনুধাবন করেননি।'
ত্রিনিদাদ সম্পর্কে ভিএস নাইপলের নিজের কী মূল্যায়ন? তিনি লিখেছেন, 'ত্রিনিদাদকে জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু যারা ত্রিনিদাদকে জানেন তারা বেশ ভালোই জানেন এটি সরল, ঔপনিবেশিক একটি অসভ্য সমাজ।' ত্রিনিদাদ নিয়ে তার আরেকটি বক্তব্য হলো, 'আমি এক ক্ষুদ্র জায়গায় বেড়ে উঠি এবং যখন তরুণ তখনই সেই জায়গাটা ছেড়ে যাই এবং বৃহত্তর পৃথিবীতে প্রবেশ করি।'
তিনি আরও লিখেছেন, 'ত্রিনিদাদে কিছুই তৈরি হয়নি।' এখানে এটাও বলা আবশ্যক, নাইপলের ইংল্যান্ড স্তুতিও নিষ্কলুষ নয়। তিনি বলেছেন, 'ইংল্যান্ডের মানুষ নিজেদের আহাম্মক হওয়া নিয়ে বেশ গর্ব করে থাকে।'
নাইপলের ভারত
নাইপল বলেছেন, 'আমার মতো মানুষ যদি সমাজ নিয়ে লেখেন যে সমাজের কোনো বুদ্ধিবৃত্তি জীবন নেই, তাতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। তারা যদি বইটা পড়ে—অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা বই পড়ে না—কিন্তু তারা অনুমোদন চায়।... এখন ভারতের উন্নতি হয়েছে, বইগুলো গৃহীত হয়েছে (ভারতবিষয়ক নাইপলের ৩টি বই- 'অ্যান এরিয়া অব ডার্কনেস', 'অ্যা ওন্ডেড সিভিলাইজেশন' এবং 'ইন্ডিয়া: অ্যা মিলিয়ন মিউটিনিজ নাউ')।... চল্লিশ বছর আগে ভারতের মানুষ ধর্মীয় প্রথাবৃত্তে বন্দী ছিল, অন্যান্য দিকের মধ্যে এদিক দিয়েও আমি ভারতকে সাহায্য করেছি।'
ভারত নিয়ে লেখা 'অ্যান এরিয়া অব ডার্কনেস' এ তার হতাশা প্রতিফলিত কি না—খুশবন্ত সিংয়ের এমন প্রশ্নের জবাবে নাইপল বলেন, 'এটা হতাশা নয়, আমি আহত হয়েছিলাম। এটা আমার জন্য বড় ধরনের ক্ষত। আপনাকে মনে রাখতে হবে আমরা ত্রিনিদাদের খুব হতাশ একটি সম্প্রদায়। ভারত নিয়ে আমাদের কাছে কোনো গল্প ছিল না। আমরা ধরে নিয়েছিলাম, ত্রিনিদাদে আসার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা ভয়ানক কোনো জায়গা ছেড়ে এসেছেন। আমাদের ভারত-ধারণা বড় নির্মম। এদেশটা আসলে কেমন, আমাদের কাছে কখনো বর্ণনা করা হয়নি। কাজেই ভারত কখনো আমাদের কাছে সত্য হয়ে ওঠেনি। আমি যখন প্রথম এখানে আসি ভারত নিয়ে লেখার পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল না।'
নাইপলের আফ্রিকা
এ সম্পর্কে নাইপলের বক্তব্য হলো, 'আফ্রিকা কোনো মজার জায়গা নয়। মজার জায়গা হয় সেটি, যা আত্মাকে উদ্বুদ্ধ করে, অনুভূতিকে সস্নেহে লালন করে। আমি যে আফ্রিকা সফর করেছি তার সম্পর্কে এ কথা বলা যায় না।' ভয়ঙ্কর বর্ণবাদী তার উচ্চারণ, 'আফ্রিকানরা লাথি চায়, এটাই একমাত্র জিনিস, যা তারা বোঝে।'
আফ্রিকার কালো মানুষদের সম্পর্কে নাইপল তার 'হোয়াইট ম্যান'স বার্ডেন' গ্রন্থে বলছেন, 'কালো মানুষ নিজের কথা লিখতে পারার শিক্ষা ও সাহস পেয়েছে অনেক পরে। সাদা মানুষ তাদের দেখেছে নিজেদের বোঝা হিসেবে।' নাইপল আফ্রিকার যে দিকটাতে আলোকসম্পাত করেছেন, সাদা মানুষ সে পথে কখনো এগোয়নি।
অরবিন্দ আদিগা বলেছেন, 'নাইপলের আফ্রিকানরা "মিমিক ম্যান"। তারা পশ্চিমের প্রতিষ্ঠানসমূহ- সরকার, আইন, পুলিশ ইত্যাদি তাদের জন্য কতটা লাগসই তা না ভেবেই অনুকরণ করে বলেছে, অসঙ্গতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তাদের সমাজ ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে এবং কৃষ্ণ মহাদেশ- ডার্ক কন্টিনেন্টের যে বহুল চর্চিত ধারণা তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে।'
নাইপল লিখলেন, 'আমি মনে করেছি এটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার, এটা ভীষণ হতাশার ব্যাপার। দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষকে অনেক বড় সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমি আশা করেছিলাম বড় সংগ্রাম তাদের বড় মানুষে পরিণত করবে।'
আফ্রিকা নাইপলের কাছে বিড়াল সেদ্ধ করার আর গরুর নাড়িভুঁড়ি বের করার মহাদেশ হয়ে রইল। তিনি বললেন, 'আমার শৈশবে আমার মনে আছে "ব্ল্যাক" ছিল একটি অপমানজনক শব্দ। বরং লোকজন কালোর বদলে "কালার্ড" শুনতে পছন্দ করত; "আফ্রিকান" বলাটা ছিল অপমানজনক। পরিস্থিতি গায়ানাতে একটু ভিন্ন ছিল, সেখানে "আফ্রিকান" শব্দটি ব্যবহৃত হতো, কিন্তু "নিগ্রো" ছিল অপমানজনক শব্দ। আর এখন কালো খুব জনপ্রিয় এবং কবুল করে নেওয়া শব্দ।'
কিন্তু সেই কালো আফ্রিকার ভবিষ্যৎ কি? নাইপল জবাব দিলেন, 'আফ্রিকার কোনো ভবিষ্যৎ নেই।'
হেনরি জেমস সম্পর্কে নাইপল বলছেন, 'হেনরি জেমস পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে লেখক! লেখক যদি বৈরিতা সৃষ্টি করতে না পারেন তিনি মৃত।' এ কারণেই কিনা তিনি ক্রমাগত বৈরিতা সৃষ্টি করে গিয়েছেন। তিনি আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মতো বিশ্ববরেণ্য কথাশিল্পী সম্পর্কে বলেছেন, 'তিনি জানতেন না কোথায় আছেন, তিনি আমেরিকান হওয়া নিয়েই বড় ব্যস্ত ছিলেন।' তার এই মন্তব্য বিপুলসংখ্যক সাহিত্যামোদীকে ক্ষুব্ধ করে।
১৯৮৬ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ওলে সোয়েঙ্কা সম্পর্কে নাইপল বলেছেন, 'তিনি কিছু লিখেছেন নাকি?' তাকে নোবেল পুরস্কার দেওয়াটা নোবেল কমিটির 'অনেক উঁচু স্থান থেকে সাহিত্যের ওপর মূত্রপাত করার মতো ব্যাপার' বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ই এম ফস্টারকে নাইপল যৌনদানব বানিয়েছেন। বলেছেন, 'ভারতে অবশ্যই ফস্টারের নিজের ধান্ধা ছিল। তিনি ছিলেন সমকামী আর ভারতে তার হাতে সময়ও ছিল। তিনি চিনতেন রাজভবন, কিছু মধ্যবিত্ত, আর মোহিত করার মতো কিছু বাগানবালক।' নাইপল টমাস হার্ডি সম্পর্কে বলেছেন, 'তিনি একজন অসহ্য লেখক, তিনি লিখতে জানেন না, একটা প্যারাগ্রাফ কীভাবে তৈরি করতে হয়, তাও জানেন না। তার লেখা রোমান্টিক মেয়েলি কাহিনির মতো।'
নাইপলের ভাষ্য, নারী লেখকদের মধ্যে কেউই তার সমকক্ষ নন। জেন অস্টেন তো ননই। তিনি জেন অস্টিনের 'আবেগময় উচ্চাকাঙ্ক্ষা' এবং 'পৃথিবী সম্পর্কে আবেগময় অনুভূতি'র অংশীদার হতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, নারী লেখকরা ভিন্ন ধরনের- 'আমি যখন কোনো লেখা পড়ি- এক দুই অনুচ্ছেদ পড়ার পরই আমি বুঝতে পারি তা নারীর লেখা না পুরুষের।' তিনি মনে করেন, নারীর আবেগময় সংকীর্ণ দৃষ্টি তাকে গৃহের প্রভুতে পরিণত করতে পারে না। সেটা তার লেখাতেও প্রতিভাত হয়। 'আমার প্রকাশক ভদ্রমহিলা চমৎকার রুচিশীল সম্পাদক ছিলেন কিন্তু তিনি যখন লেখক হলেন দেখুন মেয়েলি কি সব যাচ্ছেতাই লিখছেন।' ভারতীয় নারী লেখকদের সম্পর্কে তিনি বলেছেন, 'তারা মামুলি বিষয় নিয়ে লিখে থাকেন।'
নিজের লেখা সম্পর্কে
নিজের লেখা সম্পর্কে নাইপলের মূল্যায়ন হলো, 'আমি যখন আমার নিজের লেখা একটি বাক্য পড়ি, তখন দেখি এটার টিকে থাকার গুণাগুণ আছে। আমি ভাবি এটা বিস্ময়কর। লেখকের জীবনী এবং এমনকি আত্মজীবনী সবসময়ই অসম্পূর্ণতার দোষে দুষ্ট। তবে আমার সম্পর্কে মূল্যবান যা কিছু সব আমার বইগুলোতেই আছে। লেখক যদি বসে বসে কেবল শোষণ আর নিপীড়নের কথাই বলেন, তাদের পক্ষে বেশি কিছু লেখা হয়ে ওঠে না। লেখকদের উচিত "অসম্মতিকে" প্ররোচিত করা।'
Comments