‘মুক্তিযোদ্ধা’ সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রস্তাবে সায় দিল না উপদেষ্টা পরিষদ

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লোগো। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লোগো। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযোদ্ধা'র সংজ্ঞা পরিবর্তনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের করা প্রস্তাবে সায় না দিয়ে এ সংক্রান্ত খসড়া নতুনভাবে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ কারণে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী পরিবর্তন হচ্ছে না 'মুক্তিযোদ্ধা'র সংজ্ঞা।

'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০২২' সংশোধনের উদ্দেশে 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (খসড়া সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫' গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের ২৮তম বৈঠকে উপস্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এতে 'মুক্তিযোদ্ধা'র বিদ্যমান সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হলেও, তা গ্রহণ করেনি পরিষদ।

সংজ্ঞা পরিবর্তনের প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদ গ্রহণ না করার বিষয়টি সরকারের অন্তত চারটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, উপদেষ্টা পরিষদ বিদ্যমান সংজ্ঞা রাখার অনুশাসন দিয়েছে। তিনি বলেন, 'সংজ্ঞা তারা (মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়) যেটা প্রস্তাব করেছেন সেটা থাকছে না, আগেরটাই (বিদ্যমান) থাকছে।'

এক প্রশ্নের জবাবে সূত্র জানায়, 'সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা বলতে কিছু থাকছে না, বর্তমান সংজ্ঞাটাই থাকছে।'

সরকারের অপর একটি সূত্র জানায়, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে 'মুক্তিযোদ্ধা'র সংজ্ঞা নিয়ে একমত না হওয়ায় অধ্যাদেশের খসড়াটি পরিবর্তন করে আবারও উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী শনিবার ডেইলি স্টারকে সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেন, 'প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপনের পর সংজ্ঞার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন, এ বিষয়ে কেবিনেট থেকে রেজুলেশন আসার পর কী পরিবর্তন হবে তা বলতে পারব।'

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ

বর্তমান আইনে সরকারের স্বীকৃতি পাওয়া সবাই 'বীর মুক্তিযোদ্ধা'। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা জনপ্রতিনিধি এবং সশস্ত্র যোদ্ধা, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশে-বিদেশে অবদান রাখা পেশাজীবী, সাংবাদিক, খেলোয়ার, শিল্পী-কলাকুশলী, বীরাঙ্গনা, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী, ফিল্ড হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সসহ অন্যান্য ভূমিকা পালনকারীরা।

প্রস্তাবিত সংশোধনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' এবং 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী' হিসেবে দুই ক্যাটাগরির স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

এর মধ্যে, যারা সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেছেন, বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, বীরাঙ্গনা এবং ফিল্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন এমন ভূমিকা পালনকারীদের 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে, পেশাজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, কূটনীতিক, বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টিকারীদের 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী' হিসেবে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে অবিহিত করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এমন ভাগাভাগির প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদ গ্রহণ করেনি।

উল্লেখ্য, এর আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি আইন বিশেষজ্ঞ প্যানেল 'মুক্তিযোদ্ধা'র সংজ্ঞা পরিবর্তনে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় তাতে কর্ণপাত করেনি।

এরপর খসড়া প্রস্তাবটি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হলে, পরিষদও সেই পরিবর্তনের প্রস্তাব নাকচ করল।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ আমলেও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করার একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিদ্যমান 'বীর মুক্তিযোদ্ধা'র বাইরে মুক্তিযুদ্ধে সহযোগীদের নতুন একটি তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যদিও সেটা আলোর মুখ দেখেনি।

আরও যা পরিবর্তন

বর্তমান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের যেসব জায়গায় 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান' লেখা আছে, তা প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশে বাদ দেওয়া হয়েছে।

জামুকা আইনের একাধিক ধারায় 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া' দেওয়ার বিষয়টি রয়েছে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে এটা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এর বাইরেও জামুকার হিসাব পরিচালনা, বিনিয়োগসহ আরও কিছু বিষয়ে সংশোধন প্রস্তাব করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

Comments

The Daily Star  | English
Starlink satellite

How to order your Starlink device from Bangladesh

Bangladeshi customers can place orders directly through Starlink’s official website at starlink.com. 

1h ago