দুই যুগেও পূর্ণতা পায়নি দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স

দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফুলতলা উপজেলার তিন কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে দক্ষিণডিহি অবস্থিত। কলকাতার জোড়া সাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ ডিহির সম্পর্ক নানাভাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবীর জন্ম এই দক্ষিণডিহি গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকীমা ত্রিপুরা সুন্দরী দেবীও এই গ্রামেরই মেয়ে। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীও দক্ষিণ ডিহির মেয়ে।

তবে যথাযথ তদারকির অভাবে গত দুই যুগের বেশি সময়েও পূর্ণতা পায়নি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি, খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহির রবীন্দ্র কমপ্লেক্স। কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ।

ভারতের শান্তিনিকেতনের আদলে রবীন্দ্র কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বেনী মাধব রায় চৌধুরী দক্ষিণডিহি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তার ছেলে নগেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী ওই বাড়ির দোতলা ভবনসহ ৮ দশমিক ৪১ একর জমির মালিক ছিলেন। নগেন্দ্রনাথের দুই ছেলে বীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী ও ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী জমির মালিক হন। পরবর্তী সময়ে এসব সম্পত্তি দখলদারদের হাতে চলে যায়।

খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে জেলা প্রশাসন দক্ষিণডিহির  বাড়িটি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।

২০০০ সালের ৮ আগস্ট বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে। একই সঙ্গে তৎকালীন জেলা প্রশাসক কাজী রিয়াজুল হকের নেতৃত্বে ফুলতলায় সুধীজন, রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে মতবিনিময় সভায় বাড়িটিকে রবীন্দ্র কমপ্লেক্স করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে কমপ্লেক্স ভবনের উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

সূত্র জানায়, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪৯ লাখ টাকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয় এ বাবদ ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই টাকা দিয়ে ২০১২ সালের মাঝামাঝি ভবন সংস্কার, একপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগসহ অন্যান্য কাজ করা হয়। এরই মধ্যে দোতলা ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর আবক্ষ মূর্তি। নির্মিত হয় মৃণালিনী মঞ্চ।

খুলনার সরকারী ব্রজলাল কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শংকর কুমার মল্লিক বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা নিয়ে রবীন্দ্র কমপ্লেক্সটিকে একটি বিশ্বজনীন মর্যাদা দিতে পারতেন। কিন্তু তারা সেটি করেননি। বরং প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল সেগুলোও বাস্তবায়ন হয়নি।

'রবীন্দ্রনাথের কর্মময় জীবনের ওপর সংগ্রহশালা কাম সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, রবীন্দ্র চর্চা কেন্দ্র, অডিটোরিয়ামসহ রেস্টহাউস নির্মাণ এখনও হয়নি। পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, খুলনা ঢাকা-মহাসড়ক থেকে রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে প্রবেশের ৩টি রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ বাকি আছে,' বলেন তিনি।

'আমাদের দাবি ছিল এখানে শান্তিনিকেতনের আদলে রবীন্দ্র কমপ্লেক্স গড়ে তোলা, কুষ্টিয়ার শিলাইদহে প্রস্তাবিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা ক্যাম্পাস বা স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের নাম পরিবর্তন করে দক্ষিণডিহি রেলস্টেশন এবং খুলনা-বেনাপোলগামী ট্রেনকে মৃণালিনী এক্সপ্রেস নামকরণ করা যা আজও বাস্তবায়ন হয়নি,' বলেন শংকর কুমার মল্লিক।

তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা যেতে পারে যেখানে দেশি-বিদেশি গবেষকরা এসে রবীন্দ্র চর্চা করবেন এবং রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষের আদি বাড়ি খুলনা রূপসার পিঠা ভোগ ও দক্ষিণডিহি বিষয় গবেষণা করতে পারেন।

সম্প্রতি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখা গেছে, শুধুমাত্র সীমানা প্রাচীর, মূল ভবনের সংস্কার ও রঙের কাজ, নিচতলায় অপূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরি, সংগ্রহশালা ও দর্শনার্থীদের অবসর যাপনের জন্য ছাউনি তৈরি, বিনোদনের জন্য পার্ক ও টয়লেট নির্মিত হয়েছে। মৃণালিনী মঞ্চের পেছনে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে সন্ধ্যার পর ভুতুড়ে পরিবেশে রূপ নেয়।

দুই তলাবিশিষ্ট এ কমপেক্সের নিচতলায় লাইব্রেরি বা পাঠকক্ষ আছে। তবে সেই অর্থে সমৃদ্ধ নয় লাইব্রেরি। ওপরতলা বা নিচতলায় তথ্য বোর্ডও আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পেইন্টিংস, পাণ্ডুলিপিও আছে।

২০১৬ সালের ১০ মে 'দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি যাদুঘর' হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ওই বছর ১ এপ্রিল থেকে দেশি ও বিদেশি দর্শণার্থীদের জন্য টিকিটের প্রচলন করা হয়। দেশি দর্শণার্থীদের ২০ টাকা এবং বিদেশিদের জন্য ৫০ টাকা টিকিটের মূল্য চালু করা হয়েছে। খোলা থাকে মঙ্গল থেকে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। সোমবার দুপুর ১টা ৩০ থেকে ৫টা। রোববার বন্ধ।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলি ইয়াসমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের দাপ্তরিক কাজের অংশ হিসেবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছি। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে কয়েকটি ওয়াশরুমের কাজ চলছে। এটাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to review media outlets owned by AL ministers, MPs

The adviser made these remarks during a stakeholders' meeting of the Department of Films and Publications

1h ago