কেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবি: চতুর্থ দিনে বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভ

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে খুলনায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা কেএমপির সদর দপ্তর ঘেরাও করে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন।
অন্যদিকে এই আন্দোলন 'বিশেষ মহলের প্ররোচনায় পরিচালিত' বলে দাবি করে পাল্টা অবস্থান নিয়েছে আরেকটি পক্ষ।
এই বিক্ষোভের সূচনা ঘটে গত মঙ্গলবার খানজাহান আলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাশকে স্থানীয় লোকজন আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের ঘটনায়। কিন্তু পুলিশ পরে তাকে ছেড়ে দেয়। এর প্রতিবাদে বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শনিবার কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার ও কিছু কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপেই এসআই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে কমিশনারের অপসারণ দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। শনিবার সেই সময়সীমা শেষ হলে আবারও বিক্ষোভ শুরু হয়।
সোমবার দুপুর ৩টা ৩০ মিনিট থেকে আন্দোলনকারীরা কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন। তারা খানজাহান আলী সড়কের সুন্দরবন কলেজ থেকে রূপসা ট্রাফিক মোড় পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। কেউ কেউ শহরের প্রবেশমুখ গগন বাবু রোডেও অবস্থান নেন।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে কিছু অংশ সড়কেই অবস্থান নেয়, আবার কেউ মোটরসাইকেল ও বেঞ্চ ফেলে অবরোধ চালিয়ে যায়। বিক্ষোভ চলাকালীন উত্তপ্ত স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা। স্লোগানে কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগরের মুখপাত্র রুমি রহমান বলেন, 'খুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। মানুষ নিজেদের অনিরাপদ মনে করছে। কমিশনার জুলফিকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিনি বিগত ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের রক্ষা করছেন। আমরা তার অপসারণ চাই।'
পাল্টা অবস্থান ও সংবাদ সম্মেলন
এই বিক্ষোভের মধ্যেই আজ খুলনা প্রেসক্লাবে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে জুলাই অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট সাতটি সংগঠন জানিয়েছে, তারা এ ধরনের কোনো অপসারণ দাবিমূলক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত নয়।
তারা দাবি করেন, এসআই সুকান্তকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাদের প্রাথমিক দাবি পূরণ হয়েছে। এরপরও যারা পুলিশ কমিশনারের অপসারণের দাবি অব্যাহত রেখেছে, তারা একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই অভ্যুত্থানে এক চোখ হারানো আবদুল্লাহ আল শাফিল লিখিত বক্তব্যে বলেন, 'আমরা কারও ক্ষমতা ধরে রাখার বা নামানোর আন্দোলনে নেই। এসআই সুকান্তকে গ্রেপ্তারের পর আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। কিন্তু এখন কেউ কেউ আমাদের নাম ব্যবহার করে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছে, এর দায় আমরা নেব না।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার বলেন, 'ঘেরাও করার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার পথ আমরা সমর্থন করি না।'
সংবাদ সম্মেলনে জুলাই উপলক্ষে ৩৬ দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে শহীদদের স্মরণসভা, রক্তদান কর্মসূচি, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, পথনাটক, চিত্রাঙ্কন ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, শহর পরিষ্কার অভিযান, স্মৃতি সংরক্ষণ কর্মসূচি, জনতার শপথ এবং 'বিচার চাই, রাজনীতিকরণ নয়' স্লোগানে গণশুনানি ও স্মারকলিপি প্রদান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের গালিব মাহামুদ জাহিদী ও আব্দুল মুহায়মিন আদীব, রংমশালের সমন্বয়ক মুনতাসির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা মহানগরীর সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব শেখ সহিদুল ইসলাম জিহাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম ইসলাম ও অলিভী আহম্মেদ নাবিল, যুগ্ম-সদস্যসচিব মুহিব্বুল্লাহ মুহিব, জেলার সংগঠক তামীম হাসান লিওন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বনি ও শাহরিয়ার সাদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এসআই সুকান্ত দাসকে গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
Comments