মূত্রথলির ক্যানসার কেন হয়, লক্ষণ ও চিকিৎসা কী

মূত্রথলির ক্যানসার
ছবি: সংগৃহীত

মূত্রথলির ক্যানসার সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন, অথচ সঠিক সময়ে শনাক্ত না হওয়ার কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মূত্রথলি ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না।

মূত্রথলি ক্যানসার সর্ম্পকে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বিজয়।

মূত্রথলির ক্যানসার কী ও কেন হয়

ডা. সারোয়ার আলম বলেন, মূত্রথলির ক্যানসার হচ্ছে মূত্রথলির অভ্যন্তরে অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি ফলে গঠিত টিউমার, যা ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে। এই টিউমার সাধারণত মূত্রথলির ভেতরের যে পাতলা আস্তরণ ইউরোথেলিয়াম থাকে সেখান থেকেই শুরু হয়।

মূত্রথলির ক্যানসার হওয়ার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। যেমন-

১. ধূমপান মূত্রথলি ক্যানসার হওয়ার অন্যতম কারণ। যারা ধূমপায়ী, তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন তাদের এই ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

২. রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকতে হয় এমন লোকদের ঝুঁকি বেশি। যেমন- ডাই ফ্যাক্টরি, রাবার ফ্যাক্টরি, চামড়ার কারখানা, প্লাস্টিক, পেট্রোলিয়াম পণ্যের কারখানায় যারা দীর্ঘদিন কাজ করেন তাদের মূত্রথলির ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

৩. মূত্রনালিতে যাদের দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণ থাকে, বারবার সংক্রমণ হয় তাদের মূত্রথলি ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

৪.  অনেকেই ঠিকমত প্রস্রাব করতে পারেন না, বিভিন্ন সমস্যা ও রোগের কারণে দীর্ঘদিন ক্যাথেটার ব্যবহার করার কারণেও মূত্রথলির ক্যানসার হতে পারে।

৫.  সিস্টোসোমায়োসিস নামক পরজীবী সংক্রমণ যা সাধারণত আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, মিশরে দেখা যায়। এই সিস্টোসোমায়োসিস সংক্রমণের কারণে মূত্রথলির ক্যানসার হতে পারে।

৬. জেনেটিক বা বংশগত কারণেও মূত্রথলির ক্যানসার হতে পারে। বাবা-মা, পরিবারে কারো মূত্রথলি ক্যানসার থাকলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। P53 জিনের পরিবর্তন বা মিউটেশন মূত্রথলির ক্যানসার হওয়ার জিনগত কারণ।

ধরন

ডা. সারোয়ার আলম বলেন, চিকিৎসা অনুযায়ী মূত্রথলির টিউমার প্রধানত ২ ধরনের। যেমন-

১. সুপারফিসিয়াল টিউমার বা নন-মাসল ইনভেসিভ ব্লাডার ম্যালিগনেন্সি: টিউমার মূত্রথলির মধ্যেই প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। মূত্রথলির মাংসপেশী স্তরে টিউমার ছড়ায় না।

২. মাসল ইনভেসিভ ব্লাডার ম্যালিগনেন্সি: মূত্রথলির মধ্যে মাংসপেশীতে টিউমার গভীরভাবে ছড়িয়ে যায়।

এছাড়া ট্রানজিশনাল সেল কার্সিনোমা, স্কোয়ামস সেল কার্সিনোমা, অ্যাডেনো কার্সিনোমা এরকম কিছু ভাগ রয়েছে মূত্রথলি ক্যানসারের।

লক্ষণ

১.    প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া

২.   ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

৩.  প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া হওয়া

৪.    তলপেটে ব্যথা

৫.   কখনো কখনো প্রস্রাবের রক্ত জমাট বেঁধে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া

চিকিৎসা

ডা. সারোয়ার আলম বলেন, ক্যানসার কোন স্তরে আছে, টিউমারের ধরন ও কতখানি ছড়িয়েছে তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ক্যানসার আছে কি না তা জানার জন্য রোগীর বায়োপসিসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

সাধারণত মূত্রথলি ক্যানসারের চিকিৎসা হচ্ছে অস্ত্রোপচার। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি দেখা যায় টিউমার ছোট, ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে মূত্রাশয়ের টিউমার অপসারণ করা হয়। একটি যন্ত্র মূত্রনালির মাধ্যমে মূত্রথলিতে প্রবেশ করিয়ে টিউমার অপসারণ করা হয়, এটিকে বলে ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশন অফ ব্লাডার টিউমার (TURBT)।

টিউমার যাতে আবার বৃদ্ধি না পায় সেজন্য প্রস্রাবের থলিতে ইনজেকশন দেওয়া হয়। কখনো কখনো কেমোথেরাপি দেওয়া হয় মাইটোমাইসিন ওষুধ দিয়ে এবং বিসিজি ভ্যাকসিন দিয়ে রোগীকে ইমিউনোথেরাপি দেওয়া হয়।

আর মূত্রথলির মধ্যে মাংসপেশীতে টিউমার গভীরভাবে ছড়িয়ে গেলে মূত্রথলি অস্ত্রোপচার করে সম্পূর্ণ ফেলে দিতে হয়। মূত্রথলি অপসারণের পর প্রস্রাব নির্গমনের জন্য বিকল্প পথ তৈরি করে দেওয়া হয়।

প্রতিরোধ

১. ধূমপান ও তামাক পরিহার করতে হবে। ধূমপায়ী ব্যক্তিদের ক্যানসার আক্রান্তের ঝুঁকি ৩ গুণ বেশি।

২. পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, প্রতিদিন আড়াই থেকে ৩ লিটার পানি পান করলে মূত্রথলির ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমে।

৩.  ডাই কারখানা, চামড়া, রাবার, প্লাস্টিক ও পেট্রোলিয়াম শিল্প কারখানায় যারা কাজ করেন, রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকতে হয় তাদেরকে সুরক্ষামূলক গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। কাজ শেষে শরীর, হাত ও পা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

৪. যাদের মূত্রনালিতে ঘনঘন সংক্রমণ হয় তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সংক্রমণ রোধ করতে হবে।

৫. সিস্টোসোমায়োসিস নামক জীবাণু পানিতে থাকে, সংক্রমণ এড়াতে সবসময় বিশুদ্ধ পানি পান ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৬. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভাস মেনে চলতে হবে। ফল, শাকসবজি বেশি পরিমাণে খেতে হবে, চর্বি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।

৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে, বিশেষ করে যাদের মূত্রথলি ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

 

Comments

The Daily Star  | English

No sharp rise in crime, data shows stability: govt

The interim government today said that available data does not fully support claims of a sharp rise in crimes across Bangladesh this year

1h ago