প্রাকৃতিকভাবে ফ্যাটি লিভার নিরাময়ে পুষ্টিবিদের টিপস

ফ্যাটি লিভার

মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গের নাম লিভার, বাংলার যাকে বলা হয় যকৃত। হজমে সহায়তা করা, শরীরে প্রোটিন তৈরি, ভিটামিন সঞ্চয় এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে এটি।

এই লিভারের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয়। আর এটি করার জন্য সঠিক পুষ্টি যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। খারাপ খাদ্যভাসের কারণে লিভারের বিভিন্ন রোগ বা সমস্যা হতে পারে। যার মধ্য সবচেয়ে বেশি যেটা হয় তার নাম ফ্যাটি লিভার। জীবনধারায় পরিবর্তন এনে এই ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ বা এর চিকিৎসা করা যেতে পারে।

লিভারের কাজ

শরীরে অসংখ্য কাজ করে লিভার, আর লিভারের এসব কাজের সক্ষমতাকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে লিভার। এটি একটি বিপাকীয় কারখানা বা মেটাবলিক ফ্যাক্টরি হিসেবে কাজ করে। আমরা যে খাবারই খাই না কেন, হজম প্রক্রিয়ার পর এগুলো সব লিভারের মধ্য দিয়ে যায়। সেখানে খাবারের বিভিন্ন অংশকে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

পাকস্থলী এবং অন্ত্র থেকে নির্গত প্রায় ৮৫ থেক ৯০ শতাংশ রক্ত লিভারে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বহন করে নিয়ে যায়। যেখানে প্রোটিনগুলো প্রক্রিয়াজাত হয় এবং ভেঙে অ্যামিনো অ্যাসিডে, কার্বোহাইড্রেট ভেঙে গ্লুকোজ অণুতে এবং চর্বি ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিণত হয়।

বিভন্ন এনজাইমের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভিটামিন ও মিনারেলগুলো খাবারকে ভেঙে ব্যবহারযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে যায়। একইসঙ্গে তারা শরীরে ব্যকটেরিয়া ও ভাইরাসের প্রবেশও আটকে দেয়।

শরীরের প্রাথমিক পরিশোধক বা ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে লিভার। টক্সিন, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও অ্যালকোহল ভেঙে নিরপেক্ষ অণুতে পরিণত করে এই অঙ্গটি। লিভারে সঞ্চিত থাকে ভিটামিন, খনিজ ও শর্করা। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে

যারা ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগেছন তাদের ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাদ্যাভাসের পরামর্শ দেওয়া হয়। যার মধ্যে রয়েছে ফল, শাকসবজি, আস্ত শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন। আর একেবারে সীমিত করে দিতে বলা হয় লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থাকলে যতটুকু সম্ভব ফল এবং শাকসবজি খেতে হবে।

আপনার খাবার গ্রহণের মূল সময়কে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার এই তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করুন। হালকা নাশতার জন্যও তিনটি সময় বেছে নিন। এগুলো হলো মধ্য সকাল, মধ্য বিকাল এবং রাতের মূল খাবারের পর। এর মধ্যে শেষের নাশতাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি রাতের খাবার ও সকালের নাশতার মধ্যে যে দীর্ঘ ব্যবধান তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।

এখন আমি কিছু সহজ টিপস আর উপায় বলে দেবো যেগুলো আমরা চাইলেই মেনে চলতে পারি-

  • প্রতিদিন চার থেক পাঁচ বারে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এসব খাবারের মধ্য দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি ব্যবধান হওয়া উচিত নয়। দিনের সবশেষ খাবারটি ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত তিন ঘণ্টা আগে শেষ করতে হবে।
  • খাবার গ্রহণ করতে হবে ধীরে ধীরে।
  • খাওয়ার সময় পরিপূর্ণ তৃপ্তি আসার পরই খাওয়া শেষ করা উচিত। সাধারণত খাওয়া শুরু করার ১৫ মিনিট পরই তৃপ্তির সংকেত পাওয়া যায়।
  • ফ্যাটি লিভার ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য রোগের প্রধান কারণ হতে পারে অ্যালকোহল সেবন।
  • চিনিজাতীয় খাবার, চকলেট, বিস্কিট, সোডাযুক্ত পানীয় এবং বোতলজাত ফলের রসের মতো খাবার এড়িয়ে চলুন। রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গেলে লিভারে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই উচ্চ চর্বি এবং ক্যালরিযুক্ত ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • আবার অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ এনএএফএলডির ঝুঁকি বাড়ায়। প্রতিদিন ২৩০০ মিলিগ্রামের কম সোডিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ গ্রহণ করা উচিত নয়। হয়ত এই পরিমাণ নির্দিষ্ট করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে, তবে সময়ের সঙ্গে মেনে চলা সহজ হয়ে যায়।
  • আরেকটি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, সেটি হলো সাদা আটা। যা অত্যন্ত প্রক্রিয়াজাত একটি খাবার। সাদা আটা দিয়ে তৈরি খাবার আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তার চেয়ে হোল গ্রেইন বা আস্ত শস্য থেকে সরাসরি তৈরি খাবার উপকারী।

লেখক: ইউনাইটেড হাসপাতালের চিফ ক্লিনিক্যাল ডায়াটেশিয়ান এবং বিভাগীয় প্রধান। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়াটেশিয়ান ফর সোশ্যাল সার্ভিসের এজিএস হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

Comments

The Daily Star  | English
Banks income from investment in bonds

Bond boom contributes half of bank income

The 50 banks collectively earned Tk 39,958 crore from treasury bonds in 2024, up from Tk 27,626 crore in the previous year, according to an analysis of their audited financial statements.

13h ago