ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ ও মুক্তির উপায়

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

ফ্যাটি লিভার 'হেপাটিক স্টেটোসিস' নামেও পরিচিত। যকৃতে চর্বি জমা হলে সেটিকে ফ্যাটি লিভার বলে। লিভারে অল্প পরিমাণ চর্বি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে তা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুষ্টিবিদ তাসনিম আশিকের কাছ থেকে চলুন জেনে নেই ফ্যাটি লিভার কেন হয়, এর লক্ষণ এবং কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে খুব সহজেই এই ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

ফ্যাটি লিভার সাধারণত ২ ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এবং আরেকটি হলো নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।

অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার সাধারণত যাদের অ্যালকোহল পান করার করার অভ্যাস আছে নিয়মিত, তাদের হয়ে থাকে৷

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত চিনি, কার্বোহাইড্রেট, প্রসেসড ফুড, মুখরোচক খাবার বা অতিরিক্ত মসলাদার খাবার গ্রহণের ফলে হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও বিভিন্ন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলেও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। ডায়াবেটিক বা রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বেশি থাকলেও ফ্যাটি লিভার হতে পারে৷ আবার একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর অনেকে বংশগত কারণেও ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হতে পারেন।

আমাদের দেশের মানুষের নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে পারেন না যে লিভারে ফ্যাট জমলে তা গুরুতর আকার নেয়। ফ্যাটি লিভার থেকে প্রথমে হেপাটাইটিস বা লিভারের প্রদাহ হয়। এরপর তা লিভার সিরোসিসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তবে শুরুতেই ফ্যাটি লিভারের লক্ষণগুলো জানতে পারলে অনেক গুরুতর সমস্যার সমাধান হতে পারে।

ঝুঁকিতে আছেন যারা-

● টাইপ টু ডায়াবেটিস আছে যাদের

● মেনোপজ শুরু হয়েছে এমন নারীদের

● স্থূলতা আছে যাদের

● শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা যাদের বেশি

● দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন যারা

 ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ-

● অনিয়ন্ত্রিত বা অনিয়মিত খাদ্যাভাসের ফলে লিভারের ওপর চাপ পড়ে। ফলে হজমে সমস্যা হয় ও খাবারে অরুচি চলে আসে।

●  খাবার সময় বমি বমি ভাব হতে পারে

●  অনেক সময় পেট ফুলে যেতে পারে

●  পেট ফুলে যাওয়ার সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুলে যেতে পারে

●  হঠাৎ করেই ওজন কমে যেতে পারে

●  ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হলে মাথাব্যথা, ডিপ্রেশন বা মন খারাপ এসবও হতে পারে

যে ধরনের খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে-

● অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে যারা আক্রান্ত আছেন, তাদের প্রথমেই অ্যালকোহল গ্রহণ করা বন্ধ করতে হবে।

● আপনার যদি দুধ চা খাওয়ার অভ্যাস থাকে বা কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে তৈরি চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সেই অভ্যাস পরিহার করতে হবে। ঘন দুধের তৈরি খাবার বা ফুলক্রিম মিল্ক খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

● ফ্যাটি লিভার দূর করতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।

●ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আপনার হজমে সাহায্য করবে, ক্ষুধাটাকে দমিয়ে রাখবে এবং আপনার পেট অনেক বেশি সময় পর্যন্ত ভরা থাকবে৷ তাই খাদ্যতালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।

● বিভিন্ন রঙের শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। যেমন - বিটরুট, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, শিম, বরবটি, ব্রকলি ইত্যাদি। এছাড়াও আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় শাক পাওয়া যায়। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন যেকোনো একটি দেশীয় শাক।

● অনেকেই ভেবে থাকেন ফ্যাটি লিভার হলে প্রোটিন গ্রহণ একদমই কমিয়ে দিতে হবে। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। আপনাকে অবশ্যই উন্নত মানের প্রোটিন খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। তবে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন - যে মাছটি খাচ্ছেন সেই মাছের একেবারে চর্বির অংশটি বাদ দিয়ে খেতে হবে। অনেকেই মুরগির চামড়া খেতে পছন্দ করেন, তবে ফ্যাটি লিভার হলে অবশ্যই মুরগি চামড়া ছাড়িয়ে খেতে হবে৷ আপনি মাঝেমধ্যে গরুর মাংস খেতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে চর্বির অংশটি বাদ দিয়ে শুধু সলিড ১ বা ২ টুকরো মাংস খেতে পারবেন ১ বেলা।

● আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি সেদ্ধ ডিম রাখতে পারেন। ডেইরি প্রোডাক্টের এর মধ্যে খেতে পারেন টক দই, নন ফ্যাট মিল্ক।

● এছাড়াও দেশীয় মৌসুমী বিভিন্ন ফল আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন।

●  খাবার তৈরিতে তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও মসলাজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Over 102,000 annual deaths in Bangladesh linked to air pollution

Study also finds air pollution behind 266 million sick days every year hurting the economy

24m ago