অ্যালার্জির ধরন ও লক্ষণ, চিকিৎসা কী

অ্যালার্জি
ছবি: সংগৃহীত

অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। অ্যালার্জি থেকে অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব যদি কী থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে সেটি জানা থাকে। অ্যালার্জি সর্ম্পকে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত।

অ্যালার্জি কী

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের যে ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরোধক ব্যবস্থা আছে তা সাধারণত রোগ প্রতিরোধ করে। কিন্তু কোনো কোনো সময় শরীরের বাইরের কিছু রাসায়নিক পদার্থ, অ্যালার্জেন বা অতিপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারি কিছু বস্তু আছে যেগুলো সাধারণত ক্ষতিকারক নয়, সেগুলো শরীর গ্রহণ করতে পারে না। তখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম তার বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। তখন অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়।

ইমিউন সিস্টেমের কিছু কোষ থাকে, এক ধরনের প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন বা অ্যান্টিবডি হচ্ছে ইমিউনোগ্লোবুলিন ই। অ্যালার্জি তৈরি করে এমন পদার্থগুলো যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন ইমিউনোগ্লোবুলিন ই শরীরের বিভিন্ন কোষে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার ফলে হিস্টামিন নিঃসৃত হয়। তখন অ্যালার্জির বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়।

অ্যালার্জির ধরন ও লক্ষণ

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, অ্যালার্জি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, আর সেই অনুযায়ী লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন হয়। অ্যালার্জির সাধারণ লক্ষণের মধ্যে ত্বকে চুলকানি, বিভিন্ন র‌্যাশ, চাকা চাকা দাগ, সর্দি, হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখে চুলকানি, মাথা ব্যথা হতে পারে। তবে কার ভেতর কী লক্ষণ দেখা দেবে সেটা নির্ভর করে অ্যালার্জির কারণ এবং ধরনের ওপর।

খাবার থেকে অ্যালার্জি

খাবার থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। কিছু কিছু খাবার আছে যেমন- ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, সামুদ্রিক মাছ, বেগুন, কচু শাক, গরুর মাংস ইত্যাদি খাবার খাওয়ার কারণে অনেকের অ্যালার্জি হয়। অনেক বাচ্চাদের দুধে, ডিমে, বিভিন্ন বাদাম, বিভিন্ন মাছে অ্যালার্জি হতে পারে। তবে সবার যে একই ধরনের খাবারে অ্যালার্জি হবে তা নাও হতে পারে। একেক জনের একেক খাবার থেকে অ্যালার্জি হয়। খাবার থেকে অ্যালার্জির কারণে শরীরে চুলকানি ও র‌্যাশ হতে পারে, কারো কারো শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে যেতে পারে, চাকা চাকা দাগ হতে পারে, চোখ ফুলে যেতে পারে, ঠোঁট ফুলে যেতে পারে। যেহেতু খাবার খাদ্যনালীর ভেতর দিয়ে যায় তাই অ্যালার্জির জন্য পেট ব্যথা, বমি ভাব বা বমি বমি হতে পারে।

অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন

অ্যালার্জির একটি গুরুতর ধরন হচ্ছে অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন বা অ্যানাফাইল্যাক্সিস। সবচেয়ে গুরুতর এবং বিপদজনক অ্যানাফাইল্যাক্সিস অ্যালার্জির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। এর কারণে রোগীর হঠাৎ করে শরীরের রক্তচাপ একদম কমে যায়, মানুষ শকে চলে যায়। মানুষ মারাও যেতে পারে যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।

ইনহেল বা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অ্যালার্জি

কিছু অ্যালার্জির কারণ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জেন, যা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ধুলাবালি, মশার কয়েলের ধোঁয়া, পারফিউম, দূষিত বায়ু, পোলেন অর্থাৎ ফুল বা গাছের রেণু, বিভিন্ন পোষা প্রাণী যেমন- বিড়াল, কুকুর, পাখির পশম, মুখের লালা, প্রস্রাব থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। বিছানা কিংবা ঘরের ভেতরে বাতাসে ধুলা বা ডাস্ট মাইটস থাকে আর সেগুলো পরিষ্কার করার সময় অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। ফাঙ্গাস, তেলাপোকার কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। লক্ষণ হিসেবে সর্দি, হাঁচি, কাশি, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখে চুলকানি বেশি হয়।

ওষুধ থেকে অ্যালার্জি

কিছু কিছু ওষুধের কারণে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে। কিছু প্রেসারের ওষুধ আছে যা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। পেনিসিলিন ও সালফার জাতীয় এবং ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের কারণে অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হতে পারে। যার ফলে ত্বকে র‌্যাশ, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে, অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন হতে পারে।

রাবার থেকে অ্যালার্জি

রাবার জাতীয় বিভিন্ন পণ্য যেমন- বেলুন, গ্লোভস, কনডম, রাবারের ব্যান্ড থেকে অ্যালার্জি হতে পারে।

পোকামাকড় থেকে অ্যালার্জি

বিভিন্ন পোকামাকড় যেমন- মৌমাছি, বোলতা, বিষাক্ত পিঁপড়া ইত্যাদি হুল ফোটালে বা কামড় দিলে অ্যালার্জি হতে পারে।

অ্যালার্জি শনাক্ত ও চিকিৎসা

অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, সবার একই কারণে অ্যালার্জি হয় না। সেজন্য রোগীকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে নিবিড়ভাবে। খাবার, ওষুধ, পোকামাকড়ের কামড় নাকি ধুলা বা অন্য কী কী কারণে অ্যালার্জি হচ্ছে এবং কখন হচ্ছে, কী ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে সবকিছু খেয়াল রাখলেই অনেকাংশে অ্যালার্জি শনাক্ত করা সম্ভব।

এ ছাড়া রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমের অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে ইমিউনোগ্লোবুলিন ইর উপস্থিতি পরীক্ষা করা যায়।

এ ছাড়া নির্দিষ্ট কিসে অ্যালার্জি সেটি স্কিন প্রিক টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।

অ্যালার্জির মূল চিকিৎসা হচ্ছে যে কারণে অ্যালার্জি হচ্ছে সেটি এড়িয়ে চলা। ধুলা, ফুলের রেণু, ধোঁয়া বা ঘড় ঝাড়– দেওয়ার সময় যদি অ্যালার্জি হয় তাহলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। খাবারে অ্যালার্জি হলে ওই নির্দিষ্ট খাবার খাওয়া যাবে না। মোট কথা যার যে কারণে অ্যালার্জি হচ্ছে তা থেকে দূরে থাকতে হবে। অ্যালার্জি দীর্ঘমেয়াদী, সারাজীবন থাকতে পারে। সবসময় সতর্কতা মেনে চলতে হবে, বিশেষ করে যাদের অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন বা অ্যানাফাইল্যাক্সিস হয়।

চিকিৎসা হিসেবে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় বিভিন্ন ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে। শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, সাইনাস বা নাক বন্ধ হয়ে গেলে নেজাল স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনে অ্যালার্জি উপশমের জন্য ইমিউনোথেরাপিও দেওয়া যেতে পারে রোগীকে।

অ্যালার্জি রোগীদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যদি ঠোঁট ফুলে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, দ্রুত প্রেশার কমতে থাকে তাহলে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

অ্যালার্জির কারণ শনাক্ত করে তা থেকে দূরে থাকা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলা ও চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যালার্জি থেকে সুস্থ থাকা সম্ভব।

 

Comments

The Daily Star  | English

Finance adviser sees no impact on tax collection from NBR dissolution

His remarks came a day after the interim government issued an ordinance abolishing the NBR and creating two separate divisions under the finance ministry

2h ago