ডাস্ট অ্যালার্জির কারণ ও লক্ষণ, প্রতিরোধে কী করবেন
বায়ু দূষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাস্ট অ্যালার্জিতে আক্রান্তের সংখ্যাও। ডাস্ট অ্যালার্জি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।
ডাস্ট অ্যালার্জি কেন হয়
ডা. আতিকুর রহমান বলেন, বাতাসে যে ধুলাবালি, বালুকণা, বিভিন্ন ধোঁয়া, কেমিক্যাল, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থাকে এগুলো ডাস্ট। এসব ডাস্ট যখন আমাদের নাসারন্ধ্রের বা চোখের সংস্পর্শে আসে তখন অনেকের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়। প্রথমে সামান্য রিঅ্যাকশন হয়, এরপর যখন আবার নাক কিংবা চোখের সংস্পর্শে ডাস্ট আসে তখন অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন বেশি হয়।
শীতকালে, বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় বাতাস অনেক বেশি শুষ্ক থাকে, বাতাসে ডাস্টের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফুলের রেণু, বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এগুলো খালি চোখে সবসময় দেখা যায় না। যে কারণে এই সময়ে ডাস্ট অ্যালার্জির মাত্রাও বেড়ে যায় অন্য সময়ের তুলনায়।
ডাস্ট অ্যালার্জির লক্ষণ
ডাস্ট থেকে যে অ্যালার্জি হয় তাতে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা যায়। যেমন-
১. ডাস্ট অ্যালার্জির কারণে অনেকের নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়ে। প্রথমে কম হয়, ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
২. অনবরত হাঁচি হয়।
৩. কারো কারো সর্দি হয়, কাশি হয়।
৪. কারো কারো বুক চেপে আসে।
৫. ডাস্ট যদি শ্বাসনালীর নিচের দিকে আসে তাহলে অনেকের অ্যাজমার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।
৬. অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়।
৭. ডাস্ট চোখের সংস্পর্শে আসলে চোখ চুলকায়, লাল হয়ে যায়, পানি পড়ে, কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।
৮. ত্বকের সংস্পর্শে আসলে ত্বকে চুলকানি, র্যাশ ও বিভিন্ন চর্মরোগ হতে পারে।
৯. ডাস্টের সঙ্গে ক্যামিকেল মিশ্রিত থাকলে ক্যামিকেল রিঅ্যাকশন হতে পারে শরীরে।
১০. ডাস্টের সঙ্গে ছত্রাক, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া মিশে থাকে। ডাস্টে বিভিন্ন রোগের জীবাণু মিশে থাকার ফলে বিভিন্ন রোগ হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। যেমন- যক্ষ্মার জীবাণু থাকলে যক্ষ্মা হতে পারে, ভাইরাল ডিজিজ হতে পারে।
ডা. আতিকুর রহমান বলেন, কমবেশি অনেকেরই অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। তবে অ্যালার্জির সমস্যা কারো কারো বংশগত। পরিবারে কারো যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তাহলে তাদের অ্যালার্জির মাত্রা বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ডাস্ট অ্যালার্জি প্রতিরোধ
যাদের অ্যালার্জির মাত্রা বেশি থাকে তাদের বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেন ডা. আতিকুর রহমান। তবে অ্যালার্জির সমস্যা কখনো পুরোপুরি সেরে যায় না। তাই অ্যালার্জিকে প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে ভালো উপায়। কিছু বিষয় মেনে চললে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যেমন-
১. ঘড় ঝাড়ু দেওয়াসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন কারণে ধুলাবালির সংস্পর্শে যেতে হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
২. ঘরের বাইরে গেলে সবসময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
৩. যথাসম্ভব ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. বাইরে থেকে এসে মুখ, হাত-পা পানি দিয়ে ধুতে হবে। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে নিজেকে।
৫. প্রতিদিনের ব্যবহৃত পোশাক ময়লা হলে নিয়মিত ধুতে হবে ভালোভাবে।
৬. প্রতিদিন ব্যবহৃত বালিশ, মশারি মাঝেমাঝে রোদে দিতে হবে।
৭. বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, মশারি ময়লা হলে ধুয়ে নিতে হবে।
৮. নিয়মিত ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, আসবাবপত্রে যেন ধুলা জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৯. ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নিতে হবে। এগুলো অ্যালার্জি কমাতে সরাসরি প্রভাব ফেলে না। কিন্তু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
১০. সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
১১. পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে।
১২. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।
১৩. শিশু এবং বয়স্ক যারা, যাদের কোমরবিডিটি রয়েছে, অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে এবং যাদের শরীরের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের মাত্রা অনেক বেশি হয় তারা বাইরে কম যাবেন, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
ডাস্ট অ্যালার্জির চিকিৎসা
ডা. আতিকুর রহমান বলেন, কী কারণে এবং কী থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে এবং অ্যালার্জির মাত্রা কেমন সেটি নির্ণয় করতে হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। সমস্যা শনাক্ত করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে রোগীকে।
- নাসারন্ধ্র থেকে হাঁচি, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট হলে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ত্বকে চুলকানি, চর্মরোগ হলে ত্বকের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আর চোখ লাল, চুলকানি, পানি পড়লে, কনজাংটিভাইটিস হলে চোখের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
- যাদের ডাস্ট অ্যালার্জি আছে প্রয়োজন অনুযায়ী তারা অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন।
- যাদের অ্যালার্জির মাত্রা বেশি, নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়ে, অনেক বেশি কাশি, তারা নাকের ভেতরে স্টেরয়েড নেজাল স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
- কারো বুক চেপে আসলে, অ্যাজমার সমস্যা হলে বিভিন্ন ইনহেলার নিতে পারেন।
- অ্যালার্জির পরিমাণ বেশি থাকলে কৃমির ওষুধ নেওয়ার কথাও বলেন এই চিকিৎসক।
- মাত্রারিতিরিক্ত অ্যালার্জিতে প্রয়োজনে ইনজেকশনও দেওয়া হয় রোগীদের। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যালার্জির ওষুধ খেতে হবে।
যাদের শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে, শারীরিকভাবে দুর্বল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ডায়াবেটিস রোগী, ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন, কোমরবিডিটি আছে, অনেক বয়স্ক ব্যক্তি, একেবারে ছোট শিশুদের ডাস্ট অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই তাদের সবসময় বেশি সতর্কতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা মেনে চলার পরামর্শ দেন ডা. আতিকুর রহমান।
Comments