চোখে অঞ্জনি হলে কী করবেন   

চোখে অঞ্জনি
ছবি: সংগৃহীত

চোখ অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই চোখের যেকোনো সমস্যায় সচেতন হতে হবে। চোখের অঞ্জনি কেন হয় সেই সর্ম্পকে জেনে নিন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. সাউদ আল ফয়সাল ইমনের কাছ থেকে।

চোখে অঞ্জনি কী ও কেন হয়

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় চোখের পাতায় অঞ্জনিকে ক্যালাজিয়ন বলা হয়। যেটা চোখের পাতায় ফোলাভাব তৈরি করে এবং বেশিরভাগ সময় ব্যথামুক্ত।

সাধারণত চোখের পাতার ভেতরের দিকে অনেক গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি থাকে। এর মধ্যে মেবোমিয়ান নামে এক ধরনের গ্রন্থি আছে, যা চোখের পাতায় তেল নিঃসরণ করে, চোখকে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে। চোখে অনেক মেবোমিয়ান গ্রন্থি রয়েছে, প্রায় এক থেকে দেড়শ মেবোমিয়ান গ্রন্থি আছে। এর মধ্যে কোনো একটি মেবোমিয়ান গ্রন্থির মুখ যদি কোনো কারণে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ভেতরে ময়লা জমে সেখান থেকে চোখে অঞ্জনি হয়। কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে ক্যালাজিয়ন হয় না।

চোখে অঞ্জনি কেন হয় তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। সাধারণত ধুলোবালির মধ্যে গেলে, অনেক সময় হাত পরিষ্কার না করে চোখ স্পর্শ করার কারণে হাত থেকে ময়লা চোখে প্রবেশ করে। মেবোমিয়ান গ্রন্থির মুখ বন্ধ করে দিলে মৃত কোষ ও ময়লা জমে এবং নিঃসরিত তেল গ্রন্থির ভেতর জমতে থাকে। ধীরে ধীরে মেবোমিয়ান গ্রন্থি শক্ত হয়ে বড় হয়ে যায় তখনই চোখের পাতায় অঞ্জনি হয়। এটি এক বা উভয় চোখের উপরের বা নিচের চোখের পাতায় হতে পারে।

চোখ, চোখের পাতা ঠিকমত পরিষ্কার না রাখলে, ধুলোবালি ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকার কারণে এবং অপরিষ্কার হাত চোখে দিলে অঞ্জনি বারবার হতে পারে। একবার অঞ্জনি হলে এটা বারবার হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় অনেক সময়।

চোখের অঞ্জনি ছোঁয়াচে কোনো রোগ নয়। এমনকি এক চোখ থেকে অন্য চোখে হওয়ারও কোনো ঝুঁকি নেই।

লক্ষণ

১.    চোখের পাতায় ক্যালাজিয়ন বা অঞ্জনি ফোলা শক্ত দানা বা পিণ্ডের মতো দেখায়।

২.   অঞ্জনি চোখের পাতার প্রান্ত থেকে একটু দূরে থাকবে।

৩.  চোখে ফোলাভাব থাকে, বেশিরভাগ সময় ব্যথা থাকে না।

৪.  অনেক সময় অঞ্জনি বড় হয়ে চোখের কর্নিয়াতে চাপ সৃষ্টি করার ফলে চোখে জ্বালাপোড়া, অস্বস্তি হয়, পানি পড়ে।

৫.   যখন বেশি বড় হয় তখন কর্নিয়াতে চাপ প্রয়োগের ফলে দৃষ্টিশক্তি বাধাগ্রস্ত হয়, দৃষ্টি কিছুটা ঝাপসা হতে পারে।

 ক্যালাজিয়ন ও স্টাই কি আলাদা?

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, চোখের পাতা ফুলে যাওয়ার আরো একটি সমস্যা আছে যেটাকে স্টাই বলে। ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে চোখে স্টাই হয়। স্টাই আর ক্যালাজিয়নের মধ্যে পার্থক্য হলো, স্টাই মেবোমিয়ান গ্রন্থি বা পাপড়ির গোড়ার ত্বকে সংক্রমণ ঘটায়। স্টাই হলে অনেক বেশি ব্যথা হয়, জ্বালাপোড়া হয়, লাল হয়ে ফুলে যায়, পুঁজ হয়। অল্প দিনেই পুঁজ বের হয়ে গেলে স্টাই ভালো হয়ে যায়। প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে।

স্টাই থেকে অনেক সময় ক্যালাজিয়ন বা অঞ্জনির সমস্যা হতে পারে। কিন্তু স্টাই ও ক্যালাজিয়ন আলাদা দুটি সমস্যা।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, চোখে অঞ্জনি হলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এমনিতেই ভালো হয়ে যায় বেশিরভাগ সময়। অল্প সময়ে ভালো না হলে চিকিৎসা হিসেবে গরম সেঁক দিতে হবে, অন্যকোনো কারণে সংক্রমণ যাতে না হয় এবং প্রদাহ কমানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক আই ড্রপ, মলম দেওয়া যেতে পারে রোগীকে। সাধারণত ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে অঞ্জনি ভালো হয়ে যায়। যদি না হয় সেক্ষেত্রে ছোট সার্জারির মাধ্যমে গ্রন্থির ভেতরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে দিলে অঞ্জনি ভালো হয়ে যায়।

অঞ্জনি প্রতিরোধে চোখে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। নিয়মিত চোখ ধুতে হবে ভালো করে। নোংরা হাতে চোখ স্পর্শ করা যাবে না, হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। ধুলাবালিতে গেলে চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। চোখে কাজল ও প্রসাধনী ব্যবহারে সর্তক থাকতে হবে। চোখে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করলে সেটি পরিষ্কার রাখতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
bad loans in six private banks

Six private banks see bad loans nearly triple in a year

Defaulted loans at six private commercial banks nearly tripled in one year till September 2024, according to central bank data, which bankers term “alarming”.

14h ago