একটা পাকা চুল টেনে তুললে কি অনেকগুলো গজায়?
আমাদের দেশে প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে, পাকা চুল টেনে তুলতে হয় না। কারণ একটা পাকা চুল টেনে তুললে নাকি এর বদলে কয়েকটা পাকা চুল গজায়।
এই ধারণার সত্যতা কতটুকু জেনে নিন চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ও মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী ইমরান হাসানের কাছ থেকে।
প্রথমে জেনে নিন চুল পাকার কারণ-
চুল পাকার কারণ
ডা. ইমরান হাসান বলেন, 'সাধারণত বয়সের সঙ্গে চুল পাকা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে যদি চুল আগে পেকে যায় তখনই সেটাকে অস্বাভাবিক বা অকালে চুল পাকা বলে।
শরীরের কার্যক্ষমতা, কোষের কার্যক্ষমতা কমে যায় বয়সের সঙ্গে। ঠিক একইভাবে হেয়ার ফলিকল বা চুল তৈরির যে কোষ তারও কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। ৩০ বছর বয়সের পর থেকে সাধারণত ১০ থেকে ২০ শতাংশ করে চুল পাকতে থাকে প্রতি দশকে। গবেষণায় দেখা গেছে ৫০ বছর বয়স হলে ৫০ শতাংশ চুল পেকে যায়।
হেয়ার ফলিকল নামক একটি কোষ আছে, যেখানে মেলানোসাইট নামক সেল থাকে। বয়সের সঙ্গে মেলানোসাইট থেকে মেলানিন নিঃসরণের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে চুল ধূসর বা সাদা হয়ে যায়।
একটি পাকা চুল টেনে তুললে কি আরও অনেকগুলো পাকা চুল গজায়?
ডা. ইমরান হাসান বলেন, পাকা চুল টেনে তুললে সেই জায়গার অন্য চুল পেকে যায় বা আরও পাকা চুল গজায় আমাদের দেশে এমন ধারণা অনেকের। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ কুসংস্কার এবং ভ্রান্ত ধারণা।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'চুল টেনে তোলা কোনোভাবেই আশপাশের চুলের ফলিকলকে প্রভাবিত করতে পারে না। কারণ প্রতিটি ফলিকল আলাদা। আলাদা ফলিকল আলাদা চুল তৈরি করে। একটি চুলের সঙ্গে আরেকটি চুলের ফলিকলের কোনো সম্পর্ক নেই।'
চুলের রঙের জন্য দায়ী মেলানোসাইট। এটিও প্রত্যেকটি হেয়ার ফলিকলের জন্য আলাদা হয়। চুল টেনে তোলার ফলে পুনরায় চুল গজায়, তখন অনেক ক্ষেত্রে মেলানিন নিঃসরণের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে নতুন চুলগুলো ধূসর বা সাদা দেখায়। এজন্য অনেকে এরকম ধারণা পোষণ করেন। কিন্তু পাকা চুল তোলার সঙ্গে আরও চুল পাকার কোনো সম্পর্ক নেই।
পাকা চুল টেনে তোলা কি ঠিক তাহলে?
কাঁচা কিংবা পাকা কোন চুলই টেনে না তুলতে বলেন ডা. ইমরান হাসান। চুল টেনে তোলার ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন-
১. চুল টেনে তুললে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। চুল টান দিলে ওই জায়গা ফুলে যেতে পারে, লালচে হতে পারে। হেয়ার ফলিকলে ব্যাকটেরিয়া জমাট বাঁধতে পারে। ফলে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হতে পারে।
২. চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। আগে যেভাবে চুল গজাতো, বড় হতো সেটি হবে না। মাথায় ছোট ছোট চুলের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
৩. অতিরিক্ত চুল টেনে তোলার ফলে যেখান থেকে চুল গজায় সেই জায়গা যদি কোনো কারণে নষ্ট হয়ে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে স্থায়ীভাবে চুল না গজানোরও ঝুঁকি রয়েছে।
৪. চুল টেনে তোলার ফলে হেয়ার ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাতে চুলের গোঁড়ায় জ্বালাপোড়া ও চুলকানি হতে পারে। ওই অবস্থায় চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানোর সময় মাথার ত্বকে সমস্যা হতে পারে। যাদের অ্যালার্জি আছে বা ত্বক সংবেদনশীল তাদের ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
৫. চুল টেনে তোলার ফলে লোমকূপের মান অর্থাৎ চুলের যে মান সেটি অনেকাংশে কমে যায়। লোমকূপ বড় হয়ে যায় ফলে মোটা চুল গজায়। এ ছাড়া মাথার সব চুল সমানভাবে বড় হয় না।
৬. দীর্ঘদিন ধরে যদি কেউ মাথার চুল টেনে তোলেন সেক্ষেত্রে মাথার ত্বকে কালচে দাগ পড়তে পারে। ভবিষ্যতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
পাকা চুলের যত্ন
কালো চুলের যত্ন সবাই নেয়। তবে চুল সাদা হয়ে গেলেও তার যত্ন নিতে হবে।
১. পাকা চুলে কৃত্রিম রং বা ডাই ব্যবহার করা যাবে না। এতে চুল আরও খারাপ হতে পারে।
২. সূর্যের আলোতে অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে যাদের বেশি থাকতে হয় তাদের চুলের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে। মাথা ঢেকে রাখতে হবে।
৩. চুল পাকলে শুষ্ক হয়ে যায়। এজন্য আর্দ্রতা ঠিক রাখতে সঠিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
৪. পাকা চুল ভঙ্গুর থাকে। এজন্য পাকা চুল আঁচড়ানোর সময় মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করতে হবে। চুল জোরে আঁচড়ানো যাবে না।
৫. হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করা। এতে চুল আরও শুষ্ক হয়ে আদ্রর্তা হারাবে।
৬. নিয়মিত চুল আঁচড়াতে হবে। চুলের আগা কাটতে হবে। প্রয়োজনে ছোট করে কেটে রাখতে হবে।
এ ছাড়া পাকা চুল যাতে আর না পাকে, আর যাদের বয়সের আগেই পেকেছে তাদের হেয়ার ফলিকল যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য চুল পাকার কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যেমন-
১. ভিটামিন ই, ভিটামিন বি১২, আয়রন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা থ্রি এগুলোর অভাবে চুল পাকে। কারো যদি এগুলোর ঘাটতি থাকে তাহলে তা পূরণ করতে খাদ্যতালিকায় এসব ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
২. হরমোনজনিত সমস্যার কারণে অল্প বয়সে চুল পাকে। বিশেষ করে কারো থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় বা বেড়ে যায় তাহলে তার চিকিৎসা নিতে হবে।
৩. পাকা চুলের যত্নে উন্নত ও ভালো মানের প্রসাধনীর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. কারো যদি মানসিক চাপ, উদ্বেগজনিত সমস্যা থাকে তাহলে তার জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে।
Comments