ডিসেম্বরে ঢাকায় যত উৎসব-মেলা
ডিসেম্বর মানেই ঢাকায় উৎসবের মাস। বাতাসে মৃদু শীতলতা,পথের ধারে চালের গুঁড়া আর গুড় দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠার সুঘ্রাণ কিংবা চায়ের টঙে দাঁড়িয়ে এককাপ কড়া দুধ চায়ে চুমুক—এগুলোই ঢাকায় শীতের আমেজ নিয়ে আসে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন ধরনের মেলা, প্রদর্শনী, যোগ ব্যায়ামের উৎসব কিংবা ম্যারাথনের আয়োজন।
সবচেয়ে বড় কথা, এই মাসে ঢাকায় এত ধরনের আয়োজন হয় যে, সবগুলোর ওপর নজর রাখাও আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাই, কাগজ-কলম নিয়ে তৈরি হোন, ডিসেম্বরকে ভালোভাবে উপভোগ করতে লিখিত পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলুন।
ডিসেম্বর মাসজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বসবে বড়দিন উপলক্ষে মেলা, থাকবে বছর শেষের নানা আয়োজনও। এসব জায়গা থেকেই করতে পারেন বড়দিনের কেনাকাটা।
এমাসেই স্প্যাগেটি জ্যাজ আয়োজন করছে জ্যাজ নাইটে। তালিকায় রাখতে পারেন সেটিও। এপর ২০ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের টোকিও স্কয়ার কনভেনশন সেন্টারে আয়োজন করা হবে কে-পপ ফ্যান্সি ফেস্ট ঢাকা ২০২৪ এর। সেখানে থাকবে কে-পপ গান ও নাচের প্রতিযোগিতা।
তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে প্রতীক্ষিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজিত জয়নুল মেলা বা জয়নুল উৎসব। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বছরটাকে দারুণভাবে শেষ করা যেতে পারে। এই মেলায় থাকবে অনুষদের শিল্পীদের পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পীদের হাতের তৈরি বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম।
এসবের পাশাপাশি এমাসে ঢাকায় হয়ে গেল 'বাংলাদেশ রিইম্যাজিনড: ঢাকা ফ্লো ফেস্টিভ্যাল অব ইয়োগা অ্যান্ড ওয়েলনেস' শীর্ষক আয়োজন। ছিল ২১ দশমিক ১ ও ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটারের ম্যারাথনও। হাতিরঝিলে রান ফর দ্য আর্থ ২০২৪ শিরোনামের এই ম্যারাথনের এবারের স্লোগান ছিল 'রান ফর হেলথ, রান ফর ইউনিটি'। সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্তিক দুটি আয়োজনই অনুষ্ঠিত হয়েছে ৬ ডিসেম্বর।
সাম্প্রতিক উৎসবগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় হলো বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে আয়োজিত পাড়া উৎসব। বারিধারা সোসাইটি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আয়োজনে এ বছর গত ৬ ডিসেম্বর হয়ে গেল দিনব্যাপী এই উৎসব। চতুর্থ বছরে পা রাখা এই উৎসব আমার ভীষণ প্রিয়।
এই উৎসবে আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যাপার হলো সারাদিন বেশ স্বস্তি আর আনন্দের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করা যায়। একটি পপসিকল বা কফির কাপ হাতে আপনি সারাদিনই পথে পথে ঘুরতে পারবেন, সঙ্গে যদি থাকে পোষা প্রাণীটি, তাতেও কোনও অসুবিধা নেই। প্রাণীপ্রেমীরা প্রিয় কুকুর বা বিড়ালটিকে নিয়ে উৎসবে যোগ দিতে পারেন, সেখানে আয়োজন করা হয় প্রাণীদের ফ্যাশন শো। চাইলে তাতে অংশও নিতে পারেন। ঢাকার বুকে এ ধরনের চিন্তা সত্যিই অনন্য।
উৎসবের দিন গোটা এলাকার রাস্তাগুলো সাজানো হয়। বসে মেলাও। যেখানে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কারুশিল্পীরা। অ্যাকটিভিটি জোনে থাকে দেশীয় বিভিন্ন খেলার আয়োজন। থাকে বায়োস্কোপ, সবার ছবি আঁকার জন্য উন্মুক্ত থাকে একটি দেয়াল, থাকে গল্প বলার জন্য আলাদা কর্নার আর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত স্টল। চারু ও কারুশিল্পে আগ্রহীদের জন্য থাকে ছোট কর্মশালার ব্যবস্থা।
সেখানে গেলে দেখা যাবে এক কোনায় হয়তো কয়েকজন বসে ক্যারাম বোর্ড খেলছে, অন্যদিকে কেউ হয়ত জ্যোতিষীর সামনে বসে গেছে ভাগ্য গণনায়।
নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে মুখর এই উৎসব এবার যারা মিস করেছেন, তারা আগামী বছরের জন্য এখনই ক্যালেন্ডারের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন।
এ ছাড়া এ মাসেই দ্য ডেইলি স্টার প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে 'জুলাইয়ের ৩৬ দিন: সাহসীদের সালাম' শীর্ষক অসাধারণ এক প্রদর্শনীর।
এই প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। যেখানে আমরা সাংবাদিকতা উদযাপন করছি। রিপোর্টিং, ফটোসাংবাদিকতা ও মাল্টিমিডিয়া ভিডিওর মাধ্যমে জুলাই বিদ্রোহকে যেভাবে তুলে ধরেছি আমরা, সেসবই প্রদর্শিত হচ্ছে। ডেইলি স্টারের এই অনন্য প্রদর্শনীতে মূলত ঐতিহাসিক জুলাই বিদ্রোহের সাহস ও ত্যাগের চেতনাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
এরকম নানা আয়োজনে মুখর এখন ঢাকা। যেহেতু এসব আয়োজনের খবর বেশ আগে থেকেই প্রকাশ হয়, তাই মাস শুরু হতেই সাজিয়ে নিন আপনার পরিকল্পনা, প্রয়োজনে মোবাইলের ক্যালেন্ডারে নোটিফিকেশন সেট করে রাখুন। যেন একটি উৎসবও মিস না হয়ে যায়।
অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ
Comments