স্কুবা ডাইভিং: কোথায় যাবেন, কখন করবেন
ভূমির রূপ যেখানে অসীম সৌন্দর্যের খনি, সমুদ্রের তলদেশ আপনাকে দেবে তার চেয়েও বেশি। সামনে তাকালেই দেখা মিলবে ঝাঁকে ঝাঁকে রঙবেরঙের মাছের, কাছ থেকে উপভোগ করা যাবে হাঙ্গরের শিকার ধরার খেলা, হারিয়ে যেতে পারবেন ভিন্ন এক রাজ্যে, যেখানে শুধু মুগ্ধতা আর স্নিগ্ধতা। ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে? চলুন তাহলে স্কুবা ডাইভিং করে ঘুরে আসি সমুদ্রের জগতে।
গ্রেট ব্লু হোল, বেলিজ
বেলিজ সিটির উপকূল লাইটহাউস রিফের গ্রেট ব্লু হোল ক্যারিবীয় অঞ্চলের সেরা স্কুবা ডাইভিং সাইট। এটি এত বড় যে মহাকাশ থেকেও এটির অস্তিত্ব দেখা যায়। বিশ্বের বৃহত্তম এই সমুদ্র সিংকহোলটিতে গেলে সাক্ষাৎ হতে পারে ব্ল্যাকটিপ টাইগার, নার্স হাঙ্গর, বুল হাঙ্গর, হ্যামারহেডসহ অ্যাঞ্জেলফিশ, বেগুনি সিফান, পেডারসন চিংড়ির সঙ্গে। কোরাল রিফ ডাইভ না হলে উপরের অংশে পাওয়া যাবে এলখর্ন ও ব্রেন প্রবাল। আর অভিজ্ঞ স্কুবা ডাইভার হলে ১১০ থেকে ২৭০ ফুট গভীরে যাওয়ার চমৎকার অভিজ্ঞতা মিলবে। ইচ্ছে পূরণের তালিকায় স্কুবা ডাইভিং থাকলে এখানে যেতে পারেন। বেলিজের জন্য সেরা সময় এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে।
ব্যারাকুডা পয়েন্ট, মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার সিপাদান দ্বীপে গেলে দেখা মিলবে ব্যারাকুডা পয়েন্টের। সুপ্ত আগ্নেয়গিরির রিমের চারপাশের প্রবাল থাকায় স্ফটিক-স্বচ্ছ জলে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ, বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র, রয়েছে তিন হাজারের বেশি প্রজাতির মাছ। একেবারে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ বটে। ঝিকিমিকি রূপালি ঢেউয়ের ছবি তুলতে সারাবিশ্ব থেকে ফটোগ্রাফাররা ছুটে আসেন। এ ছাড়া কচ্ছপ, রিফ হাঙ্গর, প্যারটফিশও আপ্যায়নে মেতে ওঠে তাদের সঙ্গে। দারুণ অভিজ্ঞতার সঙ্গে স্কুবা ডাইভিং শেখার সুযোগও হতে পারে। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরে ছুটি থাকলে সেখানে ঘুরে আসতে পারেন।
ডারউইনস আর্ক, গ্যালাপাগোস
গ্যালাপাগোস দ্বীপশৃঙ্খলের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্য ডারউইনকে জীববিজ্ঞান নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী করে তুলেছিল। এজন্য দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বিশাল পাথরের খিলান আজও তার নাম বহন করে। ইকুয়েডরের উপকূলে অবস্থিত ডারউইনস আর্ক দ্বীপটি বৈচিত্র্যময়, সামুদ্রিক প্রাণিসম্পদে পূর্ণ। স্রোতের তোড়ে এখানে একত্রিত হয় বার জ্যাক, ঈগল রে, সি লায়ন, মোরে ঈল, সবুজ সামুদ্রিক কচ্ছপ, ডলফিন। এখানকার ভাণ্ডার এত সমৃদ্ধ যে লাইভবোর্ডগুলোকে ছয় বা তার বেশি ডাইভ অফার করতে হয়। আপনি যেখানে যাবেন সেখানেই দারুণ দৃশ্যে মুগ্ধ হবেন। একটি ডাইভ সাইট থেকে ক্লান্ত হওয়া কঠিন যখন আপনি যেখানেই ঘুরবেন সেখানে নতুন কিছু দেখতে পাবেন৷ হ্যামারহেড পরিষ্কারের স্টেশনে গেলে দেখতে পাবেন, হাঙ্গররা স্রোতের বাইরে বসে আছে, আর রিফ মাছ তাদের মুখ পরিষ্কার করছে। অবাক কাণ্ড যাকে বলে আর কী! শীতকালে এখানে ডাইভিং করলে আরও চমৎকার দৃশ্য পাওয়া যায়।
সাউথ আরি এটল, মালদ্বীপ
মালদ্বীপ স্কুবা ডাইভিংয়ের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বের সেরা স্কুবা ডাইভিং কিন্তু পর্যটকের সংখ্যা কম, এমন স্থান পেতে চাইলে মালদ্বীপে আসতে পারেন। মায়াফুশি দ্বীপের ঠিক উত্তর-পশ্চিমের ডাইভ সাইটটি একটি ডুবো দ্বীপ।
মায়া থিলা নামক সাইটের চারপাশে প্রবালের আউটক্রপ ও গুহা দিয়ে ঘেরা। এখানে সব ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে৷ দৈত্যাকার কচ্ছপ, দাঁতওয়ালা টুনা, নীল মুখের অ্যাঞ্জেলফিশ, প্যারটফিশ, ক্লাউন ট্রিগারফিশ রয়েছে তার মধ্যে।
মান্তা রে নাইট ডাইভ করলে হাঙ্গরকে শিকারে যেতে, ঈলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ মিলবে৷ তবে ঝোঁকের বশে নিরাপত্তার কথা ভুলে গেলে চলবে না। এখানকার জন্য সেরা সময় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত।
রিচেলিউ রক, থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডে স্কুবা ডাইভিং সাইট হিসেবে রিচেলিউ রকের নামডাক রয়েছে। ভাটার সময় এখানে কয়েক মিটারজুড়ে পাথরের চূড়া দেখা যায়৷ এটির উপরের অংশ লাল এবং বেগুনি কোরালে আচ্ছাদিত। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে সি হর্স, পাইনাপলফিশ, হারলেকুইন চিংড়ি, প্রসেলেইন কাঁকড়া, ঘোস্ট পাইপফিশের বাস। ফিল্টার ফিডার যেমন মান্তা রে, রিফ হাঙ্গর ও তিমি হাঙ্গর ছাড়াও এ অঞ্চলে ঘন ঘন ব্যানারফিশ, লায়নফিশ ও শোভেলনোজ রে দেখা যায়৷
তবে এখানকার স্রোত সামলাতে বেগ হতে পারে এবং স্কুবা ডাইভিংয়ের জন্য পার্ক পারমিট প্রয়োজন হবে। সুরিন দ্বীপপুঞ্জের জাতীয় উদ্যানের অংশ রিচেলিউ রক এবং এটি ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত খোলা থাকে।
তথ্যসূত্র: মালেয়া টাউন, স্কুব্লু, ওয়ার্ল্ড অ্যাডভেঞ্চার ডাইভ
Comments