দক্ষিণ এশিয়ার জনপ্রিয় ৫ পাহাড়ি গন্তব্য
সমতল কিংবা উপত্যকার মতো জায়গার তুলনায় হিল স্টেশন বা পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্রের আবেদন আলাদা। শহুরে কোলাহল ও নাগরিক ব্যস্ততা থেকে দূরে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ যেকোনো মানুষের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র আবহাওয়ায় অবস্থিত কিছু পাহাড়ি পর্যটনকেন্দ্র যে কারো মন কেড়ে নেয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি চমৎকার পাহাড়ি গন্তব্য।
উটি, ভারত
আপনি কি 'পৃথিবীর স্বর্গের' নাম শুনেছেন? যদি না শুনে থাকেন তাহলে জেনে রাখুন, ভারতের নীলগিরির উটি হিল স্টেশনকে এই নামে ডাকা হয়। উটির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করার সেরা সময় হলো বর্ষাকাল।
শ্যামল বনভূমির ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ, লাল মাটির সঙ্গে চমৎকারভাবে মানিয়ে যাওয়া সবুজ বনাঞ্চল এবং দূর থেকে দেখা যাওয়া নীল পাহাড়ের সারি- এসব কিছু একসঙ্গে ধরা দেওয়া যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঝরে বৃষ্টি, যা উটির প্রতি মুগ্ধতা বাড়িয়ে দেয়। বৃষ্টির ফোঁটা মাটিতে পড়ে চমৎকার এক জাদুকরী সুবাস ছড়ায়। খুব ভোরবেলা উটি লেকে নৌকা ভ্রমণ যেন নিজের ভেতরের সত্তাকে জাগিয়ে তোলে। হ্রদের স্বচ্ছ পানিতে মেঘলা আকাশের প্রতিচ্ছবি মনকে একদম শান্ত করে দেয়। এসবের পাশাপাশি উটি ভ্রমণে গেলে ডোড্ডাবেটা চূড়া থেকে পুরো উটির মনোমুগ্ধকর বিস্তৃত দৃশ্য দেখার সুযোগটিও হারানো যাবে না।
নুয়ারা এলিয়া, শ্রীলঙ্কা
আপনি যদি কখনও ইংল্যান্ড ভ্রমণ করে না থাকেন তাহলে কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার নুয়ারা এলিয়া ঘুরে আসতে পারেন। এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আপনাকে ইংল্যান্ড ভ্রমণের খুব কাছাকাছি নিয়ে যাবে। শ্রীলঙ্কায় এটি 'লিটল ইংল্যান্ড' নামে পরিচিত।
বিস্তৃত চা বাগান, জলপ্রপাত এবং ব্রিটিশ শৈলীতে তৈরি ভবন নুয়ারা এলিয়াকে দিয়েছে রাজকীয় সৌন্দর্য। পাহাড়ের ঢাল আর উপত্যকা জুড়ে বিস্তৃত চা বাগানের পথ ধরে তাজা বাতাস বুকে ভরে হেঁটে গেলে মন ভালো হয়ে যায়।
নুয়ারা এলিয়া ভ্রমণের আদর্শ সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল। সেসময় এখানকার আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক থাকে। ভোরের কুয়াশা আর আসন্ন বসন্তের বাতাস মিলেমিশে পর্যটককে যেন ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার কথাই মনে করিয়ে দেয়। সবুজ চা বাগান থেকে দৃষ্টি প্রসারিক করতেই দেখা মেলে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ পিদুরুতালাগালার, সে এক অভাবনীয় দৃশ্য!
নুয়ারা এলিয়ার ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো ভিক্টোরিয়ান-শৈলীর। সেখানকার বাড়ি, গির্জা থেকে শুরু করে লাল ডাকঘর ভবনটিতেও রয়েছে এর ছাপ। চমৎকার আবহাওয়া আর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য মিলে এই স্থানটিকে করে তুলেছে আইকনিক হিল স্টেশন।
ঘোরপানি পুন পাহাড়, নেপাল
দ্রুত একটি রোমাঞ্চকর পর্বতারোহণ অভিজ্ঞতা নিতে প্রস্তুত? যদি তাই হয়, তাহলে নেপালের অন্নপূর্ণা অঞ্চলের ঘোরপানি পুন পাহাড় হতে পারে সবচেয়ে ভালো গন্তব্য। যেখানে অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার পাশাপাশি মিলতে পারে অনন্য অভিজ্ঞতাও।
ঘোরপানি পুন পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের সেরা সময় হলো বসন্তকাল। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এখানে প্রকৃতি যেন পূর্ণ উদ্যোমে থাকে। দূর থেকে দেখে মনে হয়, নৈসর্গিক কোনো শিল্পকর্ম বুঝি! অন্নপূর্ণা, নীলগিরি, মাছাপুছরে এবং ধৌলাগিরি পর্বতমালার ওপর দিয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা রীতিমতো স্বর্গীয়।
আপনি যত পাহাড়ের ওপরের দিকে উঠবেন তত পরিচিত হবেন সেখানকার স্থানীয়দের আতিথেয়তা ও বন্ধুবাৎসল্যের সঙ্গে। ঘোরপানি পুন পাহাড়ের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে খুব কাছ থেকে পরিচিত হওয়ার জন্য এটা হতে পারে সেরা সুযোগ।
মুন্নার হিল স্টেশন, ভারত
মুন্নার ভ্রমণে গেলে প্রকৃতির মোহনীয়তা দেখে প্রেমে পড়ে যেতে পারেন! একা ভ্রমণ করুন আর প্রিয় কারও সঙ্গে, এই পাহাড়ি এলাকা নিঃসন্দেহে আপনার হৃদয় ভরিয়ে দেবে। মুন্নারের অবস্থান ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায়। এর নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে কোনো কিছুর সঙ্গেই যেন তুলনা করা যায় না।
ঝোড়ো বাতাসের মধ্যে মুন্নারের পথে হেঁটে চলার সময় ভেসে আসা চা বাগানের সুগন্ধ এক ধরনের মাদকতা তৈরি করে। মুন্নার ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। গ্রীষ্মকাল হলেও এ সময় মুন্নারের আবহাওয়া থাকে ঠান্ডা এবং তাপমাত্রা থাকে বেশ আরামদায়ক। এ সময় দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার পাশাপাশি ট্রেকিং এবং ক্যাম্পিংও করা যায়। পুরো মুন্নার জুড়েই দেখার মতো সব দৃশ্য। এখানে দেখা মেলে নির্ঝর জলপ্রপাত, বিস্তৃত চা বাগান এবং ছবির মতো প্রাকৃতিক দৃশ্য; যা ভ্রমণকে প্রাণময় করে তোলে, নিয়ে যায় যেন এক আধ্যাত্মিকতার জগতে।
পারো, ভুটান
ভুটানের পারো এলাকাটি ঐতিহ্যগতভাবেই দারুণ সমৃদ্ধ। পারো ভ্রমণের পর মনে হয়, যেন অন্তরাত্মা পরিশুদ্ধ হয়ে উঠেছে। মনোরম পাহাড়ি এই সবুজ উপত্যকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে ভুটানের ঐতিহ্যবাহী মঠগুলো। আপনি যদি খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেন তাহলে মনে হবে, দেশীয় ঐতিহ্যশৈলীতে নির্মিত বাড়ি আর মন্দিরগুলো যেন উপত্যকার পবিত্র সত্তারই অংশ।
পারোর সৌন্দর্য দেখতে চাইলে ভ্রমণের সেরা সময় হলো বসন্ত (মার্চ থেকে মে) এবং শরৎকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর)। এই সময়ের উজ্জ্বল সবুজ প্রকৃতি যেন ঝকঝকে নীল আকাশের পরিপূরক। ভূস্বর্গের মতো দৃশ্যসমৃদ্ধ পারোর উপত্যকাজুড়ে কেবল হাঁটতেও ভালো লাগে। চাইলে আপনি পাহাড়ে চড়তে পারেন কিংবা মোটরসাইকেলে চড়ে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন এর অপার সৌন্দর্য।
অবশ্য পারো হিল স্টেশন ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি আপনি বিখ্যাত তাকসাং লাখাং বা টাইগার নেস্ট পরিদর্শন না করেন। টাইগার নেস্ট হিসেবে পরিচিত মন্দিরটি যেভাবে খাড়া পাহাড়ের কোল আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে তা যেন এক অপার বিস্ময়।
অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ
Comments