প্যারাগ্লাইডিং: কোথায়-কখন করবেন, খরচ কত

বাজেটের মধ্যে প্যারাগ্লাইডিং করার কয়েকটি সেরা জায়গার খোঁজ জানুন।
প্যারাগ্লাইডিং
ছবি: সংগৃহীত

আকাশ থেকে পাহাড়, উপত্যকা দেখার ইচ্ছা অনেক দিনের। কিন্তু দেশে তো সেই উপায় নেই। বিদেশে বেড়াতে গেলে প্যারাগ্লাইডিং করার ইচ্ছে পূরণ অনায়াসে করা যেতে পারে। কিন্তু কোথায়, কেমন অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে তা নিয়ে ভাবনা তো থেকেই যায়। বাজেটের মধ্যে প্যারাগ্লাইডিং করার কয়েকটি সেরা জায়গার খোঁজ দিচ্ছি তাই।

কুইন্সটাউন, নিউজিল্যান্ড

কুইন্সটাউনের দক্ষিণ দ্বীপ শহরকে নিউজিল্যান্ডের অ্যাডভেঞ্চার রাজধানী বলা হয়। এখানে ওয়াকাটিপু লেকের একপাশের পুরোটাই দক্ষিণ আল্পসের রেঞ্জ ঘিরে রয়েছে। আকাশ থেকে নিউজিল্যান্ডের সৌন্দর্য দেখলে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। থার্মাল আর পর্বত থেকে আসা বাতাসে দীর্ঘ সময় উড়ে বেড়ানো যেতে পারে প্যারাগ্লাইডিং করে। শীতকালে ঠান্ডা বেশি পড়ে এদিকে। খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৫০০ নিউজিল্যান্ড ডলার।

হিমাচল প্রদেশ, ভারত

ভারতের উত্তর হিমাচল প্রদেশের কাংড়া উপত্যকায় অবস্থিত বীর এবং বিলিং গ্রামের আকাশ ভারতের প্যারাগ্লাইডিং করার জন্য সেরা জায়গা বলা যায়। ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার রুপিতে দেখা পাবেন হিমালয় পর্বতের পাদদেশে বনে আচ্ছাদিত পাহাড়ের মনোরম পরিবেশের। ট্যান্ডেম প্যারাগ্লাইডিং ফ্লাইটগুলো সাধারণত বিলিং থেকে যাত্রা শুরু করে এবং বীর গ্রামে অবতরণ করে। হিমাচল প্রদেশের পরিবেশ শীতকালে বেশ ঠান্ডা এবং গ্রীষ্মে থাকে উষ্ণ। বীর বিলিংয়ে প্যারাগ্লাইডিং করার জন্য অক্টোবর থেকে জুন মাসের মধ্যে যেতে হবে।

পোখারা, নেপাল

নেপালের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পোখারায় গেলে আকাশে রং বেরঙের প্যারাগ্লাইডার চোখে পড়ে। এখানে একদিকে রয়েছে অন্নপূর্ণা পর্বতমালা, অপরপাশে ফেওয়া লেক, সোপানযুক্ত সবুজ কৃষি জমি ও গ্রাম। ফেওয়া লেকের ঠিক উত্তরে সারাংকোট পাহাড়ের থার্মাল প্যারাগ্লাইডিংয়ের জন্য বেশ ভালো। পোখারা নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর থেকে বেশি উষ্ণ হয়। তাই শীতের মাঝামাঝি সময়েও আকাশ পরিষ্কার থাকায় এখানে প্যারাগ্লাইডিং করা যায়। সবসময় প্যারাগ্লাইডিং করা গেলেও জুন থেকে সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হয়। খরচ হবে ১০০ থেকে ১৫০ ডলার।

গুদাউরি, জর্জিয়া

ককেশাস পর্বত এবং স্থিতিশীল আবহাওয়ার জন্য গুদাউরিতে বিশ্বের সেরা প্যারাগ্লাইডিং অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। প্রায় ৯ হাজার ৮০০ ফুট উচ্চতা থেকে প্যারাগ্লাইড করা যায়। থার্মালের উপর নির্ভর করে ২০ থেকে ৪৫ মিনিটে আরও উঁচুতে যাওয়া যায় অবতরণ করার আগে। গুদাউরি একটি স্কি রিসর্ট শহর হওয়ায় সঠিক সময়ে এলে পাহাড়ের ঢাল ছোঁয়া যায়। সারা বছর প্যারাগ্লাইডিং করা গেলেও অন্যান্য পাহাড়ি অঞ্চলের মতো শীতকালে তাপমাত্রা খুবই ঠান্ডা থাকে। প্রয়োজন পড়বে ১০০ থেকে ১৫০ ইউরো।

ওলুডেনিজ, তুরস্ক

দক্ষিণ তুরস্ক ভূমধ্যসাগরীয় সমুদ্র সৈকতের জন্য পরিচিত। তবে প্যারাগ্লাইডাররা সমুদ্রের আকাশ থেকে ওলুডেনিজ ব্লু লেগুন এবং সাদা বালির উপকূলরেখার ভিন্ন ছবির দেখা পেতে পারেন। ৬ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় মাউন্ট বাবাদাগ থেকে ফ্লাইটগুলো যাত্রা করায় টরাস পর্বতের সাথে সাক্ষাৎ করা যায়। সমুদ্র থেকে আসা উষ্ণ থার্মালের জন্য ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ওড়া যায়। তারপর আকাশ থেকে সরাসরি সমুদ্রে নামা যায়। ভাবলেই যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই দারুণ দৃশ্য। লাগবে ১৫০ থেকে ২০০ ইউরো।

ফার্স্ট, সুইজারল্যান্ড

ছোট, পাহাড়ি সুইজারল্যান্ডের আশেপাশে নানা জায়গায় প্যারাগ্লাইডিং করা যায়। তবে ১৩ হাজার ৬৪১ ফুট উচ্চতার অভিজ্ঞতা শুধু মাউন্ট জংফ্রাউয়ের ফার্স্টে পাওয়া যায়। ফার্স্ট গ্রিন্ডেলওয়াল্ড শহরের উপরে বার্নিস ওবারল্যান্ডের ৭ হাজার ১০৯ ফুটের এক চূড়া।

সুইস প্যারাগ্লাইডিং পাইলটদের জন্য প্রশিক্ষণ খুবই কঠোর হয়। তাই প্রথমবার একজন প্রশিক্ষকের সঙ্গে ফ্লাইট নিতে হয়। খরচ হবে ২০০ থেকে ৩৫০ ফ্রাঙ্ক। অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে সুইজারল্যান্ডে প্রশিক্ষণও নেওয়া যেতে পারে।

আমব্রিয়া, ইতালি

কাস্তেলুচিওর উমব্রিয়ান গ্রামটি অ্যাপেনাইন পর্বতমালার সর্বোচ্চ উচ্চতার গ্রাম। সমতল ভূমি এবং পাহাড়ের মিলনে তৈরি আপড্রাফট ইতালির সেরা প্যারাগ্লাইডিং স্থানে পরিণত করেছে। যার উচ্চতা প্রায় ৪ হাজার ৭৬৩ ফুট উঁচু। অন্যান্য সব পাহাড়ের থেকে কাস্তেলুচিওতে ভিন্ন অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। শহরের চারপাশের পাহাড় এবং উপত্যকাগুলো বসন্ত এবং গ্রীষ্মে রঙিন বন্য ফুলে সেজে ওঠে। এজন্য মে এবং জুনে যেতে পারেন ইতালিতে। খরচ হবে ১৫০ থেকে ২৫০ ইউরো।

আইসল্যান্ড

আইসল্যান্ড নামক ছোট দেশের জলপ্রপাত, হিমবাহ, আগ্নেয়গিরি এবং লাভা ক্ষেত্র সবই দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে আকাশ থেকে। রেইকজাভিক সংস্থাগুলো ছোট ট্যুর থেকে দীর্ঘ দিনের ভ্রমণ প্রস্তাব দেয় এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে। কিছু প্যারাগ্লাইডিং রেইকজাভিক থেকে করা যায়। আবার কয়েকটি দক্ষিণ উপকূলের ছোট শহর ভিক থেকেও করা যায়। খরচ হবে ২৫০ থেকে ৩৫০ ইউরো।

কেরিও ভ্যালি, কেনিয়া

এলজিও এসকার্পমেন্টের দৃশ্য সব স্থান থেকে চমৎকার হলেও কেনিয়ার কেরিও উপত্যকা থেকে তা অনন্য। পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ভেতর দিয়ে চলা গ্রেট রিফ্ট ভ্যালির অংশ দেখলে আপনার পিলে চমকে উঠবে। ৬২ মাইলের রিজলাইন অভিজ্ঞ প্যারাগ্লাইডারদের জন্য আদর্শ। প্রশিক্ষকদের সঙ্গে ট্যান্ডেম ফ্লাইটও সম্ভব। সেরা অভিজ্ঞতা দেবে ডিসেম্বর থেকে মার্চে গেলে। খরচ হবে ৮ হাজার কেনিয়ান শিলিং।

তথ্যসূত্র: গো টু ফ্লাই, এভারেন্ট, বিএসটোকড

 

Comments

The Daily Star  | English
Gazipur factory fire September 2024

Column by Mahfuz Anam: Business community's voice needed in the interim government

It is necessary for keeping the wheels of growth running and attracting foreign investment in the new Bangladesh.

7h ago