ভ্রমণ তালিকায় রাখতে পারেন গাইবান্ধার যেসব স্থান

গাইবান্ধা
এসকেএস ইন। ছবি: এসকেএস ইনের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

ইতিহাস-ঐতিহ্যের জেলা উত্তরবঙ্গের গাইবান্ধা। গাইবান্ধার প্রধান নদ-নদী তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় রয়েছে ছোট বড় নানা চর। চরের মানুষের জীবন-বৈচিত্র্য দেখতে হলে আসতে হবে গাইবান্ধায়। দেখার আছে আরও নানা কিছু।

তাই কোনো এক ছুটিতে ঘুরতে যেতে পারেন গাইবান্ধা।

পৌর পার্ক

গাইবান্ধা সদরেই অবস্থিত পৌর পার্ক। একটি পুকুরকে ঘিরে তৈরি এটি। পুকুরের চারপাশে ফুল-ফল-ঔষধি গাছ।

পৌরপার্ক
পৌর পার্ক। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

পুকুরে শান বাঁধানো ঘাট, রঙিন মাছ, খোলা আকাশ সব মিলিয়ে যে কোনো বয়সী মানুষদের জন্য দারুণ এক সময় কাটানোর জায়গা। এখানে প্রাণীদের ভাস্কর্যসহ পত্রিকা ফলকও রয়েছে। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও একটি সৌধ রয়েছে। 

ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার

গাইবান্ধা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ায় ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার অবস্থিত। জনপ্রতি ১০ টাকা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে গাইবান্ধা সদর থেকে এখানে যাওয়া যায়।

ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

প্রায় ৮ বিঘা জায়গা খনন করে সম্পূর্ণ মাটির নিচে এ সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। ভূপৃষ্ঠ সমতলে ভবনের ছাদ আর সেই ছাদে শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয়েছে নয়নাভিরাম সবুজ ঘাস। এটি মূলত বেসরকারি একটি সংস্থার কার্যালয়। এটি নির্মাণশৈলীর জন্য ইতোমধ্যেই দেশি-বিদেশি নানান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ সেন্টারটি ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এখানে প্রবেশ করতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে।

বালাসী ঘাট

বালাসী ঘাট গাইবান্ধার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার দেখে যেতে পারেন বালাসী ঘাটে। জনপ্রতি ১০ টাকা অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে মাত্র ১০ মিনিটে এখানে যাওয়া যায়। এর অবস্থান ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়াতে।

বালাসী ঘাট
বালাসী ঘাট। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

বর্ষায় বালাসী ঘাট পানিতে থৈ থৈ করলেও শীতকালে এখানে চর ভেসে ওঠে। বর্ষার সময় ও শীতকালে দুই সময়ে দুই রূপ ধারণ করলেও দেখতে সবসময় আকর্ষণীয় লাগে। নদীতে সূর্যাস্ত দেখার দারুণ এক জায়গা এটি। বালাসী ঘাটে ছিল বাংলাদেশের একমাত্র রেলওয়ে ফেরি। এ ফেরি দিয়ে পুরো একটি ট্রেন পার হতো।

বালাসী ঘাট থেকে নৌকায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর যাওয়া যায়। এ ছাড়াও বালাসী ঘাটে ঘোড়া ভাড়া করে চর দেখা ও নৌকা ভাড়া করে নদী ভ্রমণ করা যায়। ঘণ্টা প্রতি এসব নৌকা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় ভাড়া নেওয়া যায়।

এসকেএস ইন

গাইবান্ধা জেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে কলেজ রোডে অবস্থিত এটি। ১০ টাকা অটোরিকশা ভাড়ায় এখানে যাওয়া যায়।

এসকেএস ইন
এসকেএস ইন। ছবি: এসকেএস ইনের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

এসকেএস ইন মূলত সবুজে ঘেরা ১৯.২ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত নজকাড়া একটি রিসোর্ট। নানা প্রজাতির গাছ, কৃত্রিম লেক, পানির ফোয়ারা, সুইমিং পুল, দৃষ্টিনন্দন পুকুর, ঝুলন্ত সেতু, জিম, সেমিনার কক্ষ, উন্মুক্ত মঞ্চ, কিডস জোন, কটেজসহ নানান সুবিধা রয়েছে এখানে। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাইডও রয়েছে।

দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে বিভিন্ন খাবার, পানীয়সহ বুফে খাওয়ার সুবিধা আছে। এখানে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিতে হয়। চাইলে এখানে রাতযাপন করতে পারবেন। ডিলাক্স রুম, ওয়াটার ভিলা, গার্ডেন ভিউ ভিলা, লেক ফ্রন্ট ভিলা, ফ্যামিলি স্যুট ছাড়াও রয়েছে এক্সিকিউটিভ টুইন রুম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী এসব রুমের ভাড়া সর্বনিম্ন ৯ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট

এটি মূলত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিষ্ঠানের পেছনে পুরোনো সারি সারি গাছের কারণে অপূর্ব এক স্থানে পরিণত হয়েছে এটি। এখানে দর্শনার্থীরা এসে সময় কাটান। পাখির কিচির মিচির ডাক, সারি সারি সবুজ গাছ ও খোলা প্রকৃতি মিলিয়ে এটি বিকেলে সময় কাটানোর জন্য দারুণ এক জায়গা।

গাইবান্ধা
কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

গাইবান্ধা সদর থেকে ২০ টাকা অটোরিকশা ভাড়ায় ১০ মিনিটেই এখানে যাওয়া যায়।

রংপুর চিনিকল লিমিটেড

রংপুর চিনিকল লিমিটেড ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চিনি কারখানা, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সার কারখানা এবং অফিস ও আবাসন ভবনসহ এর মোট আয়তন ১ হাজার ৮৪২ একর। এখানে আসলে চিনি তৈরির সমস্ত প্রক্রিয়া দেখতে পারবেন।

রংপুর চিনি কল লিমিটেড
রংপুর চিনি কল লিমিটেড। ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

এটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত। গাইবান্ধা সদর থেকে লোকালে ২০ টাকা ও আন্তঃনগরে ৪৫ টাকা ভাড়ায় সরাসরি ট্রেনে মহিমাগঞ্জ আসা যায়। এরপর ১০ টাকা দিয়ে চিনি কলে যাওয়া যায়। এ ছাড়াও সিএনজিচালিত অটোরিকশায়ও যাওয়া যায়।

ড্রিমল্যান্ড এডুকেশনাল পার্ক

পার্কটি গাইবান্ধা সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণমারী গ্রামে অবস্থিত। জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এখানে যাওয়া যায়।

পার্কে একটি শান বাঁধানো পুকুর রয়েছে। শোভা বর্ধনের জন্য দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফুলের গাছ রয়েছে। গাছগাছালিতে সাজানো পার্কটি। এসব গাছের ফাঁকে ফাঁকে আছে ২৫৫ জন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের ভাস্কর্য।

এ ছাড়াও এখানে বাংলাদেশের মানচিত্র, পলাশী যুদ্ধের মানচিত্রসহ নানা প্রাণীর ভাস্কর্য রয়েছে। পার্কটিতে প্রবেশ করতে ১০ টাকায় টিকিট কাটতে হয়।

ঢাকা থেকে গাইবান্ধা যেভাবে যাবেন

ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে গাইবান্ধায় নিয়মিত বাস চলাচল করে। এরমধ্যে এস আর ট্রাভেলস, অরিন, শ্যামলী, হানিফ, আল হামরা, হিনো উল্লেখযোগ্য। এসি-নন এসি ভেদে এসব বাসের ভাড়া ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

এ ছাড়াও ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সরাসরি গাইবান্ধায় যাওয়া যায়। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে রংপুর এক্সপ্রেস ও রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন গাইবান্ধার দিকে চলাচল করে। এসি-নন এসি ভেদে ট্রেনের সিট ভাড়া ৪৪৫ থেকে ৮৫০ টাকা ও এসি কেবিন ১ হাজার ৫৩৬ টাকা।

যেখানে থাকবেন

গাইবান্ধায় বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। সার্কিট হাউজ, এসকেএস ইন, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র ইত্যাদি। এগুলোতে ১ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় থাকা যায়।

যা খাবেন

গাইবান্ধার রমেশ সুইটসের বিখ্যাত রসমঞ্জরি না খেলে আপনার গাইবান্ধা ভ্রমণই অপূর্ণ থেকে যাবে। এ ছাড়াও দুপুরের খাবার খেতে পারেন মেরাজ, পূবালী হোটেলে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

1h ago