দুই দিনে ঘুরে দেখতে পারেন বগুড়ার যেসব স্থান

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

বগুড়া ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শহর। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারও বলা হয়ে থাকে একে। বগুড়া শুধু দইয়ের জন্যই বিখ্যাত না, অনেক দর্শনীয় স্থানও আছে এখানে। 

চাইলে দুই দিনেই ঘুরে দেখতে পারেন পুন্ড্রবর্ধন খ্যাত বগুড়ার কয়েকটি সুন্দর জায়গা।

মহাস্থানগড়

বগুড়ায় আসার সঙ্গেই আপনাকে স্বাগত জানাবে মহস্থানগড়। বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র এটি। বগুড়ার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এটি। বগুড়ার প্রাণকেন্দ্র সাত মাথা থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মহাস্থানগড়। সাতমাথা থেকে অটোরিকশায় করে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় ঘুরে আসতে পারেন স্থানটি।

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

মহাস্থানগড়ে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। এরমধ্যে গোকূল মেধ বা বেহুলার বাসর ঘর সর্বাধিক পরিচিত। এ ছাড়াও রয়েছে শাহ সুলতানের মাজার, খোদার পাথর ভিটা, জিয়ৎ কুণ্ড, ভাসু বিহার, গোবিন্দ ভিটা, প্রত্নতাত্মিক জাদুঘর, শীলাদেবীর ঘাট, মানকালীর কুণ্ড, পশুরামের প্রাসাদ মশলা গবেষণাকেন্দ্র। এসব জায়গা দেখতে হলে আপনাকে দিনের অর্ধেক সময় হাতে নিয়ে বের হতে হবে।

মহাস্থানগড়ে পাবেন বগুড়ার বিখ্যাত খাবার চালের কটকটি। রয়েছে আরও নানা রকমের কটকটি। চাইলে ফেরার সময় সঙ্গে করে নিয়েও আসতে পারেন।

সাইবানি বিবির দরগা

বগুড়ার চেলোপাড়া সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা নিজস্ব গাড়ি করে যেতে পারেন সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছা ইউনিয়নের সাইবানি বিবির দরগায়। প্রায় ১২ একর জায়গা জুড়ে এ দরগাটি প্রতিষ্ঠিত। লোকমুখে জানা যায়, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

দরগাটির চারপাশে ঘন সবুজ অরণ্য। পুরোনো এই দরগাটি মোঘল স্থাপত্য রীতির চমৎকার একটি নিদর্শন। একটিতে বড় ও উঁচু আকুতির গম্বুজ থাকলেও অন্যটিও প্রায় গোলাকার। দরগাটিতে টেরাকোটার (পোড়ামাটির ফলক) কাজ করা। দরগাগুলোর চারপাশের তিন পাশেই ছোট ছোট প্রবেশপথ। ভিতরে দুই বা তিনজন অবস্থান করার মতো জায়গা। দেখতে অনেকটা শিয়া ধর্মাবলম্বীদের ইমামবাড়ার মতো। যাদের প্রাচীন স্থাপত্য টানে তারা চাইলে এই জায়গা ভ্রমণ করতে পারেন।

পারুল বৃক্ষ

সাইবানি বিবির দরগা ঘুরে মাত্র আধা ঘণ্টায় চলে আসতে পারেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে। এখানেই সরকারি নাজির আখতার কলেজ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছে পারুল গাছ। ৪০–৫০ ফুট উঁচু গুল্মজাতীয় এ গাছ সারাদেশেই বিরল বলে জানিয়েছেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী ও বৃক্ষ গবেষকরা।

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় এ গাছতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের দু-একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে কলেজকেন্দ্রিক ছাত্ররাজনীতি ও সাংস্কৃতিক চর্চার একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠে গাছতলাটি।

প্রেম যমুনার ঘাট

বগুড়ার যমুনার তীরবর্তী উপজেলা সারিয়াকান্দি। নদী-বিধৌত সারিয়াকান্দির মানুষদের সুখ-দুঃখ একটাই, তা হলো যমুনা। যমুনার ভাঙন থেকে সারিয়াকান্দিকে রক্ষার্থে তৈরি করা হয় গ্রোয়েন বাঁধ। আর এই বাঁধই হয়ে ওঠে বগুড়ার আরেকটি পর্যটন কেন্দ্র।

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

নদীর সৌন্দর্য উপভোগ, জেলেদের নদীতে মাঝ ধরা, ছোট বড় ইঞ্জিন চালিত ও ইঞ্জিন ছাড়া নৌকা, স্টিমার, স্পিড বোট দেখতে দেখতে কেটে যাবে সুন্দর কিছু মুহূর্ত। আর পাশেই ছোট ছোট খাবারের হোটেলগুলোতে তো রয়েছেই টাটকা মাছসহ বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার। বগুড়ার চেলোপাড়া সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে জনপ্রতি ৬০ টাকা ভাড়ায় অটোরিকশা করে সরাসরি আসতে পারবেন এই জায়গায়।

খেরুয়া মসজিদ

বগুড়া থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে বগুড়ার শেরপুরে ঘুরে দেখতে পারেন আরেক দর্শনীয় স্থান খেরুয়া মসজিদ। এটি বগুড়া থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে শেরপুর উপজেলায় অবস্থিত। প্রায় সাড়ে চারশ বছর ধরে টিকে আছে এ মসজিদটি।

ছবি: সাজেদুর আবেদীন শান্ত

মোঘল ও সুলতানি স্থাপত্যের সমন্বয়ে নির্মিত এ মসজিদ। চারটি বড় মিনারের ওপর ভর করে টিকে আছে মসজিদটি। মসজিদে অনেক টেরাকোটা বা পোড়ামাটির ফলকের কাজ দেখা যায়। মসজিদের ওপরে তিনটি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। এগুলোর দৈর্ঘ্য ৩.৭১ মিটার ব্যাসার্ধ। খেরুয়া মসজিদ বাইরের দিক থেকে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ১৭.২৭ মিটার, প্রস্থ ৭.৪২ মিটার।

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন বগুড়ায়

ঢাকার গাবতলী বা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাসে এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনে করে বগুড়া শহর যেতে পারেন। বাসে নন-এসিতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ও এসিতে ১২৫০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা ভাড়া। ট্রেনে গেলে যেতে পারেন আন্তনগর রংপুর এক্সপ্রেস বা লালমনি এক্সপ্রেসে। 

বগুড়ায় থাকতে পারবেন হোটেল মম ইন (ফাইভ স্টার মানের), হোটেল নাজ গার্ডেন (ফোর স্টার মানের), পর্যটন মোটেল (বনানী মোড়ে), সেফওয়ে মোটেল (চারমাথা), নর্থওয়ে মোটেল (কলোনী বাজার), সেঞ্চুরি মোটেল (চারমাথা), মোটেল ক্যাসল এমএইচ (মাটিডালি) ইত্যাদি জায়গায়। এগুলো প্রত্যেকটাই শহরের নিরিবিলি পরিবেশে। এসব হোটেলে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায় থাকতে পারবেন।

আর হ্যাঁ, বগুড়ায় গিয়ে আকবরিয়ার দই, এশিয়ার দই ও মিষ্টি, চিনিপাতার দই ও কলোনির চুন্নুর গরুর চাপ খেতে ভুলবেন না কিন্তু। 

 

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

6h ago