বাড়ির রান্নাঘরে পুরুষ

বাড়ির রান্নাঘরে পুরুষ
ছবি: সংগৃহীত

রান্না লিঙ্গভিত্তিক কোনো কাজ না হলেও আমাদের সমাজে সাধারণত রান্নাঘরের দায়িত্ব থাকে নারীদের ওপর। রান্না করা থেকে শুরু করে বাসন মাজা, ঘর গোছানো, পুরো সংসার দেখভাল করার এক অলিখিত দায়িত্ব এ সমাজ নারীর হাতে তুলে দিয়েছে।

এখন পরিস্থিতি যে কিছুটা পাল্টাচ্ছে, তা সত্যি। বিশেষ করে শহরের দিকে এখন অনেক পুরুষই বাড়ির রান্নাঘরে সময় দিচ্ছেন। তারপরও এখনও দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষকে রান্নার কাজে আগ্রহী হতে দেখা যায় না। রান্না করাটাকে তারা ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষের জন্য অসম্মানজনক কাজ হিসেবে দেখেন। অনেক পরিবারে নারীরাও তাদের ছেলে বা স্বামীকে রান্নাঘরে কাজ করতে দিতে চান না। তারা মনে করেন, পুরুষদের রান্নার কাজে মানায় না।

এই চিন্তাগুলোর কারণ আসলে কী এবং এখানে মনস্তত্ব কী কাজ করে এ নিয়ে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের উপপরিচালক (মনোবিজ্ঞান) শুভাশীস কুমার চ্যাটার্জি

শুভাশীস কুমার চ্যাটার্জি বলেন, শুধু নারীই রান্না করবে, পুরুষ রান্না করতে পারবে না- এ ধরনের ভাবনা আসলে একটি মনোসামাজিক সমস্যা। শুধু একটি পরিবারে এমনটা ভাবা হচ্ছে, তা কিন্তু না। একটি পুরো সমাজব্যবস্থাই চাইছে রান্নাঘরের দায়িত্ব নারীর হাতে অর্পণ করতে। শুধু এই কাজের ক্ষেত্রেই নয়; পুরুষ কোন কাজ করবে, নারী কোন কাজ করবে এটি ঠিক করে দিচ্ছে সমাজ।'

তাই কোনো পুরুষের যদি রান্না করার বা শেখার ইচ্ছাও থাকে, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারেন এমন ভয় থেকে তিনি আর ওই কাজ করার সাহস পান না।

যুগ যুগ ধরে রান্নাঘরের কাজে নারী সদস্যদের আমরা দেখে আসছি। মেয়েরা একটু বড় হওয়ার পর থেকেই রান্নার কাজে পারদর্শী হতে পরিবার থেকে চাপ দেওয়া হয়। একই পরিবারে ছেলে সন্তান থাকার পরেও তাকে এ কাজ শেখানো হয় না। ছেলে সন্তানের যদি রান্নার প্রতি আগ্রহও থাকে, তাকে পরিবার থেকে বারবার নিরুৎসাহিত করা হয়।

মনোবিদ শুভাশীস কুমার চ্যাটার্জি আরও বলেন, আমাদের সমাজব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক। তবে এই পুরুষতান্ত্রিকতার আবরণে শুধু যে পুরুষই থাকবেন তা কিন্তু না। অনেক সময় একজন নারীও পুরুষতন্ত্রের ধারক ও বাহক হতে পারেন। হতে পারে, পরিবারের পুরুষ সদস্য চাইছেন রান্না করতে, ঘরের কাজে সাহায্য করতে। কিন্তু এটা তথাকথিত 'পুরুষের কাজ' না বলে হয়তো তাকে পরিবারের নারীরাই রান্না করতে নিরুৎসাহিত করছেন। সমাজ নির্মিত কুসংস্কার, পারিবারিক সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও স্টেরিওটিপিক্যাল মানসিকতা থেকে পুরুষের রান্না করাকে অনেকে ভালো চোখে দেখেন না। তবে দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভাবনাতেও ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এখন অনেক পুরুষই রান্না করেন। এটি যে শুধু নারীর কাজ না, এমন বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসছেন অনেকেই।

তিনি আরও বলেন, রান্না জীবনের অন্যতম জরুরি মৌলিক দক্ষতা। সব বাবা-মার উচিত তার সন্তানদের রান্না থেকে শুরু করে ঘরের কাজে পারদর্শী করে তোলা। এতে করে তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে। পুরুষের রান্নার কাজে লজ্জার কিছু তো নেই-ই, বরং এটি জীবনের পাতায় আরও একটা বাড়তি দক্ষতা যুক্ত করা। এতে আরেকটি উপকার হবে। আর তা হলো, তারা উদার মানসিকতা নিয়ে বড় হবে। ভবিষ্যতে কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ করবে না।

 

Comments

The Daily Star  | English

Have patience for election

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday said the government would issue a roadmap to the election as soon decisions on electoral reforms are made.

5h ago