ফেসবুকে অপরিচিতদের পোস্টে নেতিবাচক মন্তব্য করার মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা কী

ফেসবুকে অপরিচিতদের পোস্টে বাজে কমেন্ট
ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরিচিত কারো পোস্টে আক্রমণাত্মক কমেন্ট করার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে তারকা বা পাবলিক ফিগারদের যেকোনো পোস্ট বা ছবির নিচে মানুষকে প্রায়ই আজেবাজে মন্তব্য করতে দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাউকে মেসেজ বা কমেন্ট দিয়ে হয়রানি করার বিষয়টি আগেও ছিল। কিন্তু বর্তমানে ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় নেতিবাচক কমেন্ট করে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার মাত্রা আরও অনেক বেড়ে গেছে। অনেক সময় পাবলিক ফিগাররা নেতিবাচক কমেন্ট আসতে পারে ভেবে কমেন্ট সেকশন বন্ধ করে রাখেন।

সামনাসামনি না করলেও মানুষ কেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরিচিতদের পোস্টে আজেবাজে মন্তব্য করে, এখানে মনস্তত্ত্ব কী কাজ করে তা নিয়ে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ দান কেন্দ্রের উপপরিচালক (মনোবিজ্ঞান) শুভাশীস কুমার চ্যাটার্জি।

শুভাশীস কুমার চ্যাটার্জি বলেন, অন্যকে কষ্ট দেওয়ার প্রবণতা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে মানুষের মধ্যে ভর করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ধরনটা পাল্টেছে মাত্র। যেকোনো পাবলিক পোস্টের নিচে উটকো মন্তব্য প্রায়ই চোখে পড়ে। এমনকি কিছু শিক্ষামূলক পোস্টের বেলায়ও মানুষ অসামঞ্জস্যপূর্ণ নেতিবাচক কমেন্ট করে। সাধারণত যারা ব্যক্তিজীবনে অসুখী এবং ব্যক্তিগত অর্জন বলে কিছু নেই তারাই অন্যকে কষ্ট দিয়ে কমেন্ট করতে মজা পান। আপনি যত ভালো কাজই করুন না কেন, তারা বাজে মন্তব্য করবেনই। এটিকে সমাজে তাদের টিকে থাকার অন্যতম ত্রুটিপূর্ণ কৌশলও বলতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের নেতিবাচক কমেন্টের মাধ্যমে তারা যে শুধু একজন ব্যক্তিকে কষ্ট দিচ্ছেন তা না, এর মাধ্যমে অনেক সময় অন্যের ধর্ম বা পেশাকেও আক্রমণ করে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কেউ কেউ আছেন, যারা বিশেষ করে তারকা বা পাবলিক ফিগারদের ছবিতে বিভিন্ন উস্কানিমূলক মন্তব্য করেন। তাদের এসব মন্তব্যে ওই তারকাদের জীবনের কোনোকিছু পরিবর্তন হবে না জানার পরেও তারা একের পর এক মন্তব্য ছুড়ে দিতেই থাকেন।

মনোবিদ বলেন, যারা অন্যের পোস্টে নেতিবাচক কমেন্ট করেন তাদের মধ্যে স্যাডিস্ট মানসিকতা আছে। অর্থাৎ তারা অন্যকে কষ্ট দিয়ে নিজেকে সন্তুষ্ট করেন। তারা মূলত ব্যক্তিজীবনে প্রচণ্ড হতাশায় থাকার কারণে অন্যের মাঝেও সেই হতাশা ছড়িয়ে দিতে চান। এটিকে আমরা সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ভাষায় স্থানচ্যুতি বলতে পারি। অর্থাৎ যে জায়গায় রাগ বা হতাশা দেখানোর কথা, সে জায়গায় না দেখিয়ে অন্যকে দেখানো। অন্যের প্রতি বিদ্বেষ তারা পাবলিক পোস্টের কমেন্টে দেখাতে চান তারা।

এ ধরনের মন্তব্যকে অনেকে গায়ে না মাখলেও কেউ কেউ আছেন যারা এই নেতিবাচক কমেন্টকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নেন। ফলে অন্যের বাজে মানসিকতার কারণে হতাশায় ডুবে থাকতে হয় নিজেদের।

এক্ষেত্রে করণীয় হিসেবে শুভাশীস চ্যাটার্জি বলেন, 'এই ধরনের নেতিবাচক মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কিছুই না করা। মূলত আপনাকে রাগিয়ে দিতে বা আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতেই তারা আজেবাজে মন্তব্য করেন। আপনি যদি কমেন্টের পাল্টা জবাব দেন বা রেগে যান, এতে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।

ফলে একই কাজ তারা বারবার করতেই থাকবে। তাই যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তাছাড়া যারা আপনাকে চেনেন না, জানেন না তাদের মন্তব্যকে আমলে না নিলেই ভালো থাকবেন। তবে যদি অন্যের নেতিবাচক মন্তব্য একেবারেই অসহনীয় মনে হয়, সেক্ষেত্রে মনোবিদের সাহায্য নিতে পারেন।'

 

Comments

The Daily Star  | English

One killed in multi-vehicle crash on Dhaka-Mawa highway

The chain of crashes began when a lorry struck a private car from behind on the Mawa-bound lane

51m ago