পরচর্চা থেকে দূরে থাকার ১০ উপায়

আমরা প্রায়ই অন্যের আড়ালে তাকে নিয়ে বহু মন্দ কথা বলি। বলার সময় রং চড়িয়ে এমন অনেক কিছুই বলি, যা হয়তো সত্যিও নয়। সত্যি-মিথ্যা যাই হোক না কেন, পরচর্চার এই স্বভাবটা ব্যক্তিজীবনে খুব একটা ভালো কিছু বয়ে আনে না। সম্ভব হলে সবারই উচিত পরচর্চা, পরনিন্দা থেকে দূরে থাকা এবং সেভাবেই জীবনটাকে চালিত করা।
পরচর্চা থেকে দূরে থাকার উপায়গুলো কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সচেতন হওয়া
সবার প্রথমে আমাদেরকে এই অভ্যাসটি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। পরচর্চা থেকে সরে আসার আগে আমাদেরকে জানতে হবে এটির কুফল সম্পর্কে। পরচর্চার ফলে ব্যক্তির মধ্যে ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, অসন্তুষ্টি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক অনুভূতি কাজ করে। তাই যখন বুঝতে পারবেন যে আপনি বারবার পরচর্চায় জড়িয়ে যাচ্ছেন, সেটিই প্রাথমিক ধাপ- এই বাজে অভ্যাস থেকে দূরে সরে আসার।
আড়ালে নয়, সামনে বলুন
পরচর্চার ক্ষেত্রে দুই ধরনের মানুষ আলোচনার বিষয় হয়। প্রথমত, যাদেরকে আমরা চিনি। দ্বিতীয়ত, যারা সমাজের অন্য স্তরের মানুষ এবং তাদের সঙ্গে আমাদের অতটা ওঠাবসা হয় না। দুই ধরনের মানুষের ক্ষেত্রেই আমাদের নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, 'এই কথাটি কি এই ব্যক্তির সামনে বলতে পারব?' যদি উত্তর 'না' হয়, তখন থেমে যেতে হবে।
আবেগতাড়িত হবেন না
অন্য কারো সম্পর্কে কিছু বলার আগে একটু ভেবে নিন, আপনি কি আসলেই কথাটি বলতে চান? এই কথাটি কি কোনোভাবে ব্যক্তিটি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছে? কথার তোড়ে ভেসে গিয়ে এমন কোনো কিছু বলে বসবেন না, যার ফলে অন্য কারো বাজে 'ইমেজ' তৈরি হয়। তাই একটু ভেবেচিন্তে আলাপ করুন, আবেগের বশে যা ইচ্ছে তাই বলে বসা থেকে বিরত থাকুন। এমন কোনো নেতিবাচক বিষয় চলে এলে নিজের মধ্যে বিরতি নিয়ে, তারপর কথাটা বলুন।
আলাপের বিষয় বদলে নেওয়া
কোনো দলীয় আড্ডার ক্ষেত্রে যদি মনে হয় যে আপনি এবং অন্যান্য সদস্যরা পরচর্চার দিকে যাচ্ছেন, তাহলে সচেতনভাবে আলাপের বিষয়টি বদলে নিন। কাউকে পরচর্চা নিয়ে বা অন্য কোনো বিষয়ে উপদেশ বা পরামর্শ দেওয়ার দরকার নেই। শুধু আলাপের বিষয়টি একটু ইতিবাচক করে তুলুন, তাহলেই কিছুটা মাত্রায় পরচর্চা থামিয়ে দেওয়া সম্ভব।
অভিযোগ নয়, সমাধানে মন দিন
কাউকে নিয়ে যদি আপনার মনে ক্ষোভ জমে থাকে, তাহলে তাকে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে অভিযোগের পসরা না বসিয়ে নিজে নিজে ভাবুন- এ বিষয়ে কী করা যায়? ব্যক্তিটির সঙ্গে সরাসরি কথা বলা কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, তাহলে তা-ই করুন। তা না হলে, বিষয়টি নিয়ে অযথা বিস্তৃত পরিসরে আলাপ না করাই বরং আপনার এবং উপরোক্ত ব্যক্তিটির জন্য ভালো। তবে সমাধান সম্ভব হলে, অভিযোগের পথ বেছে নেবেন না।
পরচর্চাকারীদের থেকে দূরে থাকুন
যদি এমনটা মনে হয় যে আপনার পরিচিত কিছু নির্দিষ্ট মানুষ আদতেই পরচর্চা করতে পছন্দ করেন এবং তাদের সঙ্গে থাকলে আপনি নিজেও এই বদভ্যাসে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে সেই মানুষগুলোর কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। এমন ক্লান্তিকর কথোপকথন আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
সহমর্মিতার চর্চা করুন
যে মানুষটি নিয়ে সাধারণত পরচর্চা করা হয়ে থাকে, তার দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন। এমনও তো হতে পারে, সেই মানুষটির ব্যক্তিজীবনে থাকা সমস্যাগুলো শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আপনিও বোঝার চেষ্টা করেননি বলেই তার জন্য মনের ভেতর এত ক্ষোভ জন্মেছে। সহমর্মিতার চর্চাই পারে জীবনে ইতিবাচকতার জন্ম দিতে।
পরচর্চার প্রভাব নিয়ে ভাবুন
কাউকে নিয়ে পরচর্চা করার আগে তার জীবনে সেটির প্রভাব নিয়ে ভাবুন। যদি আপনার বলা কোনো কথার কারণে তার জীবনে বাজে প্রভাব পড়ে, তাহলে সেটির দায় কিন্তু অনেকাংশে আপনার উপরই বর্তায়। তাই কারো বিষয়ে নেতিবাচক কথা বলার আগে প্রভাব সম্পর্কে বিবেচনা করে তারপর বলুন। এই কৌশল মেনে চললে পরচর্চার অভ্যেস অনেকটাই কমে যাবে।
অন্য বিষয়ে কথা বলুন
পরচর্চার মতো অহেতুক কথোপকথন বাদ দিয়ে ইতিবাচক বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। কাজ, শখের বিষয়, সিনেমা, বই, জীবনের উদ্দেশ্য ইত্যাদি গভীর ও ইতিবাচক বিষয়ে বেশি বেশি কথা বললে জীবনে পরচর্চা বা পরনিন্দার আর জায়গাই থাকবে না।
দায়িত্ব নিন
দায়িত্বশীল হওয়া যেকোনো ক্ষেত্রেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই যদি আপনি অন্য কারো বিষয়ে নেতিবাচক কোনো কথা ছড়িয়ে থাকেন বা পরচর্চায় মশগুল থাকার অভ্যাস থেকে দূরে না থাকতে পারেন, তবে সে বিষয়ে দায়িত্ব নিতে শিখুন। দায় না এড়িয়ে, সামনে এসে নিজের কাজের ও কথার দায়িত্ব নিন। এভাবে এগোলে পরচর্চার অভ্যাস নিশ্চয়ই থেমে যাবে।
কথা হোক এমন কিছু, যা মানুষের উপকার করে। পরচর্চার মাধ্যমে মানুষের পরোক্ষ ক্ষতি হয়, তাই এ অভ্যাস থেকে দূরে থাকুন। নিজেও ভালো থাকুন, অন্যকেও ভালো থাকতে দিন।
Comments