চুল কালার করা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ

ছবি: সংগৃহীত

একটা সময় ছিল যখন পাকা চুল ঢাকার জন্য মানুষ কালার ব্যবহার করত। এখন চুলে কালার করাই ট্রেন্ড। লুকে পরিবর্তন আনতে নারী-পুরুষ সবাই চুলে নানা কালার করছেন।

একসময় শুধু কালো রংয়ের প্রচলন থাকলেও এখন চুল লাল, নীল, বেগুনি, এমনকি সাদা রংও করছেন অনেকে। মডার্ন ফ্যাশনেবল লুকের জন্য জনপ্রিয় হাইলাইটিং, যাতে কয়েক গুচ্ছ চুলকে বিভিন্ন রংয়ে সাজানো যায়।

ফ্যাশন সচেতন সাবরিনা সুলতানা (২৮) কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। যখন যে ট্রেন্ড চলে সেই ট্রেন্ড অনুযায়ী নিজেকে সাজিয়ে নেন। কাপড়-চোপড় পরা, সাজ-সজ্জা সব কিছুতেই তিনি ট্রেন্ড ফলো করেন। চুলে কালার করা তার খুব পছন্দ। 

তিনি জানান, বেশ কয়েকবার হাইলাইটিং করিয়েছেন। প্রতি মাসে অন্তত একবার চুল কালার করেন তিনি। তবে এবার পার্মানেন্ট কালার করার কথা ভাবছেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। কারণ ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে খুব ভালো জানা নেই তার। পার্লারে হেয়ারড্রেসারকে জিজ্ঞাসা করলেও উত্তরটা পছন্দ হয়নি। কারণ বেশি লাভের জন্য পার্লার থেকে সবসময় পার্মানেন্ট কালার করানোর পরামর্শ দেয়।  

অন্যদিকে ৩৭ বছর বয়সী রুবাইয়া হক পাকা চুল নিয়ে খুব বিরক্ত। জানান, বাজারে যেসব কালার প্যাক পাওয়া যায় সেগুলো বেশিদিন টেকে না। ১০ দিন পরপর চুলে কালার করতে হয় তাকে। তাই তিনিও স্থায়ীভাবে চুল কালার কথা ভাবছেন। তবে স্থায়ী কালারে কতটা ক্ষতি হতে পারে সে সম্পর্কে জানা নেই।  

সাবরিনা ও রুবাইয়ার মতো অনেকেরই চুলে কালার করা আদৌ ক্ষতিকর কি না, বা কতটা ক্ষতিকর সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে যেমন বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যায়, তেমনি গুজবও কম নেই।

চুলে বিভিন্ন ধরনের রঙের ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত

চুলে কালার করলে কি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে?

গুগলে সার্চ দিলে দেখা যায়, চুলে কালার করলে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে—এমন বেশকিছু প্রতিবেদন আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে চুলের কালার ও ক্যানসারের সম্পর্ক নিয়ে অনুসন্ধান করছেন।

তবে এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণাতেই চুলের কালার সরাসরি ক্যানসার সৃষ্টি করে—এমন প্রমাণ পাননি বিজ্ঞানীরা। তবে, ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, এমনটা দেখা গেছে।

মার্কিন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ড. ডেভিড গোল্ডবার্গ জানান, ১৯৮০'র দশকের আগে চুলে রং করার জন্য যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হতো, সেগুলোর জন্য মূত্রাশয় ক্যানসারের ঝুঁকি ছিল। 
তবে ৮০'র দশকের পর চুলের কালারে কম বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করছে কোম্পানিগুলো।    

কিন্তু, চুলের জন্য স্থায়ী কালার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে বলে জানান গোল্ডবার্গ।

২০১৯ সালে ৪৬ হাজার বেশি নারীর ওপর গবেষণায় দেখা যায়, বারবার (প্রতি পাঁচ থেকে আট সপ্তাহে) চুলে স্থায়ী কালার ব্যবহারে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৯ শতাংশ বাড়ে। 

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্সের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক ডা. আলেকজান্দ্রা হোয়াইট বলেন, এই সংখ্যাটা দেখতে বড়ো মনে হলেও বিষয়টা তা নয়। স্বাভাবিকভাবেই গড়ে প্রায় সব নারীর স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১৩ শতাংশ। সে অনুযায়ী, চুলের কালার ব্যবহারে ঝুঁকি মাত্র এক পয়েন্ট বেড়ে একজনের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ১৪ শতাংশে উন্নীত করে।
  
তবে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ক্ষেত্রে এই হিসাব সম্পূর্ণ ভিন্ন। একই গবেষণায় দেখা যায়, ঘন ঘন চুলে স্থায়ী কালার ব্যবহার করলে কৃষ্ণাঙ্গ নারীর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়, যা তার পুরো জীবনকালের হিসেবে ২১ শতাংশ ঝুঁকি তৈরি করে।   
 
চুলের কালারে ক্ষতির দিক হিসেবে কেন এই জাতিগত বিভেদ, তা এখনো স্পষ্ট নয় গবেষকদের কাছে। 

যদিও তারা কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ জানিয়েছেন। আর তা হলো—কালো নারীরা রিভলভিং, কেমিক্যাল হেয়ার স্ট্রেইটনার, চুল সোজার রাখার বিভিন্ন ধরনের তেলসহ অনেক ধরনের হেয়ার প্রোডাক্ট তুলনামূলক বেশি ব্যবহার করেন।

বিভিন্ন ধরনের রঙ

ডা. গোল্ডবার্গ জানান, একেক নারী একেক কোম্পানির কালার ব্যবহার করে। তাই গবেষণার ফলাফল এসেছে মিশ্র। এ কারণে বাজারে প্রচলিত সব কালার সম্পর্কে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাচ্ছে না।

অধিকাংশ দেশেই চুলের জন্য ব্যবহৃত পণ্যের গুণগত মান যাচাইয়ে কঠোর কোনো নীতিমালা নেই। ফর্মুলেশনের স্বত্বাধিকার থাকায় বাজারজাত করার আগে পণ্য কতটা নিরাপদ তার প্রমাণ দিতে হয় না প্রস্ততকারক কোম্পানিগুলোকে।

তাই কোনো চুলের কালারে কী ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় এবং তা ক্যানসারের জন্য কতটা ঝুঁকি তৈরি করে জানা কঠিন বলে জানান সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডার্মাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাডা এলবুলুক।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য মতে, অস্থায়ী ও আধা স্থায়ী যেসব চুলের কালার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে যায়, স্থায়ী কালারের চেয়ে তা তুলনামূলক নিরাপদ। স্থায়ী কালারে থাকে সুগন্ধযুক্ত অ্যামাইন ও ফেনল—যা ডিএনএর কোষে পরিবর্তনের মাধ্যমের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
  
গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। সেগুলো হলো—

১. ঘন ঘন চুলে কালার করা থেকে বিরত থাকা

২. অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় চুলে স্থায়ী কালার করা যাবে না

৩. প্যাকেটে লেখা নির্দেশনা সতর্কতার সাথে মেনে চলতে হবে

৪. কালার যতক্ষণ চুলে রাখার নির্দেশ, তার বেশি সময় কখনোই রাখা যাবে না

৫. সবচেয়ে ভালো হয়, যদি রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার না করে মেহেদীর মতো প্রাকৃতিক কালার ব্যবহার করা যায়

তথ্যসূত্র: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস

Comments

The Daily Star  | English

Will protect investments of new entrepreneurs: Yunus

Yunus held a meeting with young entrepreneurs at the state guest house Jamuna where15 male and female entrepreneurs participated

5h ago