কালার করা চুলের যত্ন

ছবি: সংগৃহীত

'চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা' কিংবা 'একটা ছিল সোনার কন্যা, মেঘবরণ কেশ'- নারীর চুল নিয়ে যেন কবিতা আর গানের শেষ নেই, শেষ নেই উপমার। কিন্তু সোনার কন্যাকে যে সবসময় মেঘবরণ কালো চুলেরই অধিকারী হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। সোনার কন্যার সোনালী চুলও থাকতে পারে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে ফ্যাশনের অন্যান্য অনুষঙ্গের সঙ্গে চুলের রঙেও এসেছে ভিন্নতা।

চিরন্তন কালো, ব্রাউন, মেরুন, গোল্ডেন, বার্গান্ডির শেড তো আছেই। পার্পল, পিঙ্ক বা নীলের শেডও আজকাল খুব ব্যবহার হচ্ছে চুলে। চুলের রঙ এখন শুধু ফ্যাশন নয় বরং ব্যক্তিত্বের অন্যতম পরিচায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত

যেমন- চুলে নীল, বেগুনি কিংবা গোলাপি রঙের শেড যারা ব্যবহার করেন, তাদেরকে প্রথাবিরোধী, বোল্ড, আত্মবিশ্বাসী হিসেবে ভাবা হয়।

তবে চুল রঙ করলেই কাজ ফুরিয়ে যায় না। বরং এই রঙ ধরে রাখার পাশাপাশি চুলের যত্নে দিতে হয় বাড়তি মনোযোগ ও সময়। নাহয় চুল রুক্ষ হয়ে ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। হেয়ার কালারে রয়েছে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া যা এক ধরনের ক্যামিকেল ব্লিচিং এজেন্ট যা চুলকে কালার করার সঙ্গে সঙ্গে রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ করে তোলে। চুলের গোড়া নরম করে ফেলে, তাই চুল পড়ার হারও বেড়ে যায়। তাই কালার করা চুলের জন্য অবশ্যই বাড়তি যত্ন নেওয়া আবশ্যক।

ছবি: সংগৃহীত

রঙ করার সময়ে উপযুক্ত ও ভালো মানের 'ডেভেলপার' ব্যবহার করুন। ডেভেলপার হল এক ধরনের ক্রিম জাতীয় জিনিস যাতে থাকে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। এটি চুলে রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। অবশ্যই ২০ বা ৩০ ভলিউম ডেভেলপার ব্যবহার করতে হবে। এতে চুলের ক্ষতি কম হবে।

কিছু ঘরোয়া উপায়েই কালার করা চুলের যত্ন নেওয়া সম্ভব।

তেলে চুল তাজা

একটি প্রবাদ আছে, 'জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা'। চুলে তেল দেওয়ার এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার হেয়ার প্যাক জাতীয় বস্তুর ভিড়ে। তবে চুলের যত্নে তেলের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি কখনো।

যারা নিয়মিত হেয়ার কালার করেন, তাদের চুল সহজেই রুক্ষ আর শুষ্ক হয়ে যায়। চুলকে রুক্ষতা থেকে রক্ষা করতে চুলে তেল মাখার অভ্যাস করতে হবে। বিশেষ করে শ্যাম্পু করার আগের দিন রাতে হট অয়েল মাসাজ নিতে পারলে তা চুলের জন্য খুবই উপকারী।

ছবি: সংগৃহীত

শ্যাম্পু করুন বুঝেশুনে

চুল কালার করার সঙ্গে সঙ্গে শ্যাম্পু না করাই ভালো। এতে করে চুলে কালার বসার সময় পায়। যার ফলে রঙ তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আর ২ দিন শ্যাম্পু না করলে যে সাধারণ তেল মাথার তালুতে তৈরি হয় তা চুলকে স্বাভাবিক সুরক্ষা দেবে। কালার করার জন্য চুল শুষ্ক, রুক্ষ হয়ে যাওয়ার যে সমস্যা তা থেকে পরিত্রাণ মিলবে।

প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে চুল এমনিতেই রুক্ষ হয়ে যায়, কালার করা চুলে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার চুলে শ্যাম্পু করুন।

কালার করা চুলের জন্য বাজারে কালার প্রটেক্টিং শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করুন। এসব শ্যাম্পু চুলের কালার এবং চুলের আর্দ্রভাব বজায় রাখে।

চুলের বন্ধু কন্ডিশনার

চুলের যত্নে কন্ডিশনার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। কন্ডিশনার মাখলে চুলের নিষ্প্রাণ ভাব দূর হয়, চুল ঝলমলে মসৃণ হয়, ভঙ্গুরতার মতো সমস্যাগুলোও নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডিম, কলা এবং টক দই সমান পরিমাণে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। চুলের যত্নে এটি একটি ভালো প্রাকৃতিক কন্ডিশনার। চুল কালার করার আগে এই হেয়ার প্যাকটি চুলের গোঁড়ায় এবং সারা চুলে ভালো মতো লাগিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন। তাতে চুলের গোড়া শক্ত থাকবে, চুলের ভলিউম বাড়বে।

বাড়তি যত্ন নেবে হেয়ার মাস্ক

চুল রঙ করালে তাতে বাড়তি পুষ্টির জন্য ভালো মানের হেয়ার মাস্কের বিকল্প নেই। বাজারে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার মাস্ক কিনতে পাওয়া যায়। প্যাকেটের গায়ে লেখা উপাদান দেখে হেয়ার মাস্ক বাছাই করতে হবে। এতে করে চুল আর্দ্র থাকবে, রুক্ষ, ক্ষতিগ্রস্ত চুলের সমস্যা দূর হবে। কালার করা চুলের সৌন্দর্য ও নমনীয়তা বজায় রাখতে সপ্তাহে অন্তত দুবার হেয়ার মাস্ক লাগানোর বিকল্প নেই।

হেয়ার সিরাম ব্যবহার করুন

চুল ধুয়ে ফেলার পরে চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে হেয়ার সিরাম ব্যবহার করতে হবে। আধভেজা চুলে কয়েক ফোঁটা হেয়ার সিরাম মেখে নিলে চুলের ময়েশ্চারাইজিং নিয়ে আর ভাবনাই নেই। বিভিন্ন অনলাইন শপ ও মার্কেটে ভালো মানের হেয়ার সিরাম পাওয়া যায়। চুলের ধরণ বুঝে নিয়ে নেন আপনার পছন্দের হেয়ার সিরাম।

ড্রয়ারে থাকুক হেয়ার ড্রায়ার

আপনার চুল শুকানোর সরঞ্জাম হেয়ার ড্রায়ার ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারেই রেখে দিন। চুল কালার করার পর তা আর ব্যবহার না করাই ভালো।

শুধু হেয়ার ড্রায়ার নয়, যতটা সম্ভব কার্লার বা চুল আয়রন করা থেকে বিরত থাকুন। এসব জিনিস চুলকে ভেতর থেকে ড্যামেজ করে ধীরে ধীরে চুল রুক্ষ ও ভঙ্গুর করে দেয়।

লিভ ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করুন

চুল নরম ও উজ্জ্বল রাখতে লিভ ইন কন্ডিশনার খুবই উপকারী। এই কন্ডিশনারের সুবিধা হচ্ছে এটিকে চুল থেকে ধুয়ে ফেলতে হয় না এবং এটি চুলকে কোমল করে ও চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে। চুলে শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে বা হালকা ভেজা চুলে লিভ ইন কন্ডিশনার লাগিয়ে রাখুন। এটি সরাসরি গোড়ায় না দিয়ে স্ক্যাল্পের ১-২ ইঞ্চি নিচ থেকে অ্যাপ্লাই করা শুরু করুন। কেনার আগে কন্ডিশনারের উপাদান গুলোতে দেখে কিনুন তাতে সিলিকন, সালফেট বা সালফার আছে কিনা কারণ এই উপাদান গুলো চুলের জন্য খুব ক্ষতিকর।

Comments

The Daily Star  | English
 Al Bakhera killings Al Bakhera killings

Killings in Chandpur: Water transport workers go on strike

Water transport workers has started an indefinite strike from midnight

4h ago