বডি শেমিং কেন করা হয়, কীভাবে মোকাবিলা করবেন

যারা এ ধরনের কথা বলেন তাদের অনেকে বোঝেনই না, যাকে ‘সরল মনে’ বা ‘মজা করে’ হাসতে হাসতে কথাটি বলে দিলেন, তার মনে এর কী প্রভাব পড়তে পারে।
বডি শেমিং
ছবি: সংগৃহীত

'বডি শেমিং' টার্মটির সঙ্গে আমাদের সমাজের মানুষের পরিচয় থাকুক বা না থাকুক, বিষয়টির চর্চা এখানে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। অন্যের শারীরিক বৈশিষ্ট্য কিংবা অবয়ব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা, কাউকে মোটা বা চিকন বলা, কারো শারীরিক গড়ন, উচ্চতা, চেহারাসহ যেকোনো কিছু নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা খুবই পরিচিত দৃশ্য আমাদের সমাজে। এই বিষয়গুলোর সবই বডি শেমিংয়ের মধ্যে পড়ে।

যেহেতু এর চর্চা বহুদিনের, তাই বডি শেমিং করাটাকে অনেকেই বেশ স্বাভাবিকভাবে দেখে থাকেন। অনেকের কাছেই এটি শুধু মজা করে বলা। 'কোন গুদামের চাল খেয়ে এই স্বাস্থ্য বানালে', 'তুমি এত চিকন যে ঝড় আসলেই উড়ে যাবে', 'তুমি তো তালগাছ' এই জাতীয় কথা তাই খুব সাধারণ কথা এখানে।

যারা এ ধরনের কথা বলেন তাদের অনেকে বোঝেনই না, যাকে 'সরল মনে' বা 'মজা করে' হাসতে হাসতে কথাটি বলে দিলেন, তার মনে এর কী প্রভাব পড়তে পারে এবং তার জন্য বিষয়টা কতটা বিব্রতকর ও অপমানজনক হতে পারে।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের উপপরিচালক (মনোবিজ্ঞান) স্নেহাশীস কুমার চ্যাটার্জি বলেন, 'বডি শেমিংয়ের চর্চা আমাদের সমাজে যুগ যুগ ধরে চলমান। এটি বেশ নতুন একটি টার্ম, যার সঙ্গে পূর্ববর্তী জেনারেশনের অনেকেরই হয়তো পরিচয় নেই। তবে অনেক সচেতন মানুষ আছেন যারা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যকে কষ্ট দিতে বডি শেমিং করেন। যাদের নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কম বা নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছেন, তারাই অন্যকে বডি শেমিং করে থাকেন। কেউ কেউ আছেন যারা নিজের চেহারা বা আকৃতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন, তারা নিজের মনকে শান্ত করতে অন্যের চেহারা বা আকার নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকেন। যারা ত্রুটিপূর্ণ সামাজিক মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে ওঠেন, তারা বডি শেমিংকে মন্দ কিছু মনে করেন না।'

হয়তো বডি শেমিং একটি সাধারণ মন্তব্য মাত্র, কিন্তু এটির প্রভাব অনেক সময় মারাত্মক হতে পারে। এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, অনেকে বডি শেমিংয়ের শিকার হয়ে হতাশায় নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে ফেলেন।

মনোবিদ স্নেহাশীস কুমার চ্যাটার্জি বলেন, 'বিশ্বের প্রতিটি মানুষ আলাদা। তাই একই কথায় একেকজন একেকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে এটিই স্বাভাবিক। যেমন- আপনি কাউকে মোটা বলে শেমিং করলেন, তিনি হয়তো বিষয়টাকে বেশ স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করতে পারছেন। কিন্তু একই কথায় আরেকজন বেশ আঘাত পেতে পারেন কিংবা অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারেন। তাই কেউ স্বাভাবিকভাবে নিলেই যেমন বডি শেমিং করা ইতিবাচক হয়ে যায় না, ঠিক তেমনি কেউ এই কথায় আঘাত পেলেও তা ওভার রিয়্যাক্ট নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি। যিনি বডি শেমিং করেন, তিনি সবাইকে নিয়েই অযাচিত মন্তব্য করে থাকেন। আপনি পাতলা গড়নের হোন বা ভারী গড়নের, আপনি লম্বা হোন বা খাটো কিংবা আপনার চোখ টানাটানা হোক বা গোল; কিছু মানুষকে আপনি কখনোই সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি নিখুঁত নন বলে তারা আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। কিন্তু তাদের কাছে আশপাশের সবাই ত্রুটিযুক্ত।'

বডি শেমিংয়ের শিকার হলে কী করতে হবে তার উত্তরে মনোবিদ স্নেহাশীস কুমার চ্যাটার্জি বলেন, 'কথায় আছে, এড়িয়ে যাওয়া আশীর্বাদ স্বরূপ। অন্যের বাজে মন্তব্য নিয়ে যত কম ভাববেন, তত সুখী হবেন। অন্যের কথায় গুরুত্ব দেওয়ার আগে দেখবেন, আপনি নিজেকে কীভাবে দেখতে ভালবাসেন। অন্য কারো মন্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে বিচার করতে যাওয়া ঠিক নয়। সবার আগে নিজেকে ভালোবাসা জরুরি। যারা নিজেকে ভালোবাসেন না, তারাই অন্যের শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করেন।'

'বডি শেমিং কমাতে সামাজিক সচেতনতা ও কাউন্সিলিং খুবই প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তকের বইগুলোতে এই বিষয়ক অধ্যায় থাকা দরকার, যাতে শৈশব থেকেই মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন হতে পারে', যোগ করেন তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladeshi students terrified over attack on foreigners in Kyrgyzstan

Mobs attacked medical students, including Bangladeshis and Indians, in Kyrgyzstani capital Bishkek on Friday and now they are staying indoors fearing further attacks

6h ago