রান্নায় গ্যাসের চুলার কিছু বিকল্প ও দরদাম

গ্যাসের চুলার বিকল্প
ছবি: ইউএনবি থেকে নেওয়া

প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশজুড়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন এলপিজি (লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) বা সিলিন্ডার গ্যাসের দিকে। কিন্তু এগুলোর দামের অসঙ্গতি এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে জনজীবন শিকার হচ্ছে নানা বিড়ম্বনার।

গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীরা লাকড়ি বা মাটির চুলা ব্যবহার করতে পারলেও শহরের বাসাবাড়িতে গ্যাস ছাড়া রান্না করা কঠিন। এ অবস্থায় জরুরি হয়ে পড়েছে রান্নার জন্য গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা। তাই চলুন, গ্রাম বা শহরে বাসা-বাড়িতে গ্যাস ছাড়া রান্না করার উপযুক্ত কিছু উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ইন্ডাকশন চুলা

তড়িৎ চৌম্বকশক্তিকে ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তাপশক্তির যোগান দেয় ইন্ডাকশন চুলা। এর কাচ-সিরামিক প্লেটের নিচে থাকে তামার কয়েল, যেটি তাড়িৎ চৌম্বক শক্তির যোগান দেয়। প্লেটের উপর নির্দিষ্ট দাগাঙ্কিত স্থানে রাখা হয় রান্নার পাত্র।

বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকা অবস্থায় চৌম্বক পদার্থের তৈজসপত্র রাখা হলে চুলাটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাজ শেষে পাত্র সরিয়ে ফেলা হলে চুলা সঙ্গে সঙ্গেই তাপ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এই পাত্রগুলোর মধ্যে অধিকাংশ স্টেইনলেস-স্টিল ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও রয়েছে কাস্ট আয়রন এবং এনামেল্ড ঢালাই লোহা।

এই চুলাগুলো সহজে পরিষ্কারযোগ্য এবং অল্প তাপেই গ্যাস ও অন্যান্য সাধারণ বৈদ্যুতিক চুলার থেকে দ্রুত রান্না করতে পারে। ইন্ডাকশন চুলা বিভিন্ন পাওয়ার রেটিংয়ের ভিত্তিতে ৩ থেকে ৯ হাজার টাকার হয়ে থাকে। বাজারে সাধারণত ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ ওয়াটের চুলাগুলো বেশি পাওয়া যায়। ৪ থেকে ৫ সদস্যের পরিবারের জন্য যাবতীয় রান্নার কাজ এই চুলা দিনে সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টায় সম্পন্ন করতে পারে। ফলে আবাসিক এলাকার সর্বোচ্চ ইউনিট রেট হিসেবে মাসে বিদ্যুৎ খরচ হতে পারে ৯০০ থেকে ৯৬০ টাকা।

ইনফ্রারেড চুলা

বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে আভ্যন্তরীণ তামার কয়েলকে উত্তপ্ত করে রান্নার জন্য তাপ উৎপন্ন করে ইনফ্রারেড চুলা। এগুলো মূলত হ্যালোজেন লাইট (যা ইন্ডাকশন লাইট নামেও পরিচিত) ব্যবহার ইনফ্রারেড বিকিরণ প্রক্রিয়ায় পাত্র গরম করে। এগুলোতে ইন্ডাকশন চুলার মতো নির্দিষ্ট কোনো তৈজসপত্র ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা নেই। তবে চুলার পৃষ্ঠের সঙ্গে সমতলে থাকা অর্থাৎ ফ্ল্যাট পাত্রগুলোতে গরম করার ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায়।

পাওয়ার রেটিং ইন্ডাকশন চুলার মতোই, ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ ওয়াট। সেই সঙ্গে দামের পরিধিও ৩ থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে। তবে একই রেটিং থাকা সত্ত্বেও ইনফ্রারেড চুলা রান্নার সময় ইন্ডাকশন কুকারের চেয়ে কিছুটা বেশি শক্তি খরচ করে। সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ঘণ্টা লাগতে পারে প্রতিদিনের রান্নায়, যেখানে মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল আসতে পারে ১ হাজার টাকার কাছাকাছি।

রাইস কুকার

সুনির্দিষ্টভাবে ভাত রান্না করার জন্য তৈরি রাইস কুকারের রয়েছে একটি হিট সোর্স, একটি রান্নার পাত্র এবং একটি থার্মোস্ট্যাট। থার্মোস্ট্যাট রান্নার পাত্রের তাপমাত্রা পরিমাপ করে এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। চাল ভর্তি পাত্রটি পানি দিয়ে ভরার পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই থার্মোস্ট্যাট স্বয়ংক্রিয়ভাবে কুকার বন্ধ করে দেয়। তাই এখানে পুড়ে যাওয়ার বা কোনো ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকে না।

৫ থেকে ৬ সদস্যের পরিবারের রান্নায় ৩ থেকে ৫ লিটারের কুকার যথেষ্ট। এগুলোর মূল্য সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা ছাড়াতে পারে।

রাইস কুকারের পাওয়ার রেটিং সাধারণত ইলেক্ট্রিক চুলার থেকে কম হয়ে থাকে; সাধারণত ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ওয়াট। স্বভাবতই এগুলো কম বিদ্যুৎ শোষণ করে। সারা দিনের রান্নার কাজ সাড়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যেই করতে সক্ষম এই কুকারগুলো। ফলে সাশ্রয়ী এই কিচেন সামগ্রী ব্যবহারে মাসিক বিদ্যুৎ বিল হতে পারে প্রায় ৮০০ থেকে ৮৪০ টাকা।

কারি/মাল্টি-কুকার

রাইস কুকারেরই উন্নত সংস্করণ হচ্ছে কারি কুকার, যেখানে ভাত ছাড়াও অন্যান্য নানা খাবার বিভিন্ন উপায়ে রান্না করার কার্যকারিতা আছে। তরকারি রান্নার জন্য এর সিরামিক বা স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি বাটিটি বেশ বড় থাকে। এই কুকারগুলো ফুটানো, বেকিং, সিদ্ধ, ভাজা, রোস্ট, প্রেসার কুকিং, স্লো কুকিং এবং খাবার গরম রাখার জন্য উপযোগী।

রাইস কুকারের মতো এগুলোর পাওয়ার রেটিংও ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ওয়াটের হয়ে থাকে। প্রায় ৪ লিটার ক্ষমতার একটি মাল্টি-কুকার দিয়ে ৪ থেকে ৫ সদস্যের পরিবারের রান্নার কাজ বেশ ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়। গুণগত মানের ভিত্তিতে এগুলোর দাম সাধারণত ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা হয়ে থাকে। এগুলো মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে সারা দিনের রান্নার কাজ শেষ করতে সক্ষম। মাল্টি-কুকার ব্যবহারে মাস শেষে সম্ভাব্য বিদ্যুৎ খরচ আসতে পারে প্রায় ৭০০ থেকে ৭২০ টাকার মধ্যে।

বৈদ্যুতিক প্রেসার কুকার

সাধারণ প্রেসার কুকারের সঙ্গে বৈদ্যুতিক প্রেসার কুকারের (ইপিসি) মূল পার্থক্য হচ্ছে ইপিসি গ্যাসের বদলে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আর বাষ্প চাপের মাধ্যমে দ্রুত খাবার রান্নার বাকি প্রক্রিয়া সব একই। এর মজবুতভাবে বদ্ধ পাত্র তরলকে বাষ্পে পরিণত করে ভেতরে দ্রুত চাপ বাড়াতে পারে।

ইপিসির পাওয়ার রেটিং সাধারণত ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ওয়াটের হয়ে থাকে। পাত্রের ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করে এই পাওয়ার রেটিং। সাধারণত ৫ থেকে ৭ লিটারের একটি ইলেক্ট্রিক প্রেসার কুকার ৩ থেকে ৫ জনের রান্নার কাজ করতে পারে। ইপিসিগুলোর দাম ৬ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার টাকা। এগুলোর মাধ্যমে সারাদিনের রান্না শেষ করতে আড়াই ঘণ্টা বা তার কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে। এতে করে সারা মাসের বিদ্যুৎ বিল হতে পারে প্রায় ৭০০ টাকা।

গ্রাম বা শহরের বাসায় গ্যাস ছাড়া রান্নার কাজে ইতোমধ্যেই দেশবাসী এই বৈদ্যুতিক চুলাগুলোর সুফল ভোগ করা শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে রান্নাতে সবচেয়ে সময় বাঁচালেও বৈদ্যুতিক প্রেসার কুকারগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। কম খরচে বেশি সুবিধা পেতে ইন্ডাকশন চুলাগুলো পছন্দ করা যেতে পারে রান্নাঘরের নান্দনিক সামগ্রী হিসেবে।

তবে এখানে বিড়ম্বনার কারণ হচ্ছে সামঞ্জস্যপূর্ণ তৈজসপত্রের বিষয়টি। এক্ষেত্রে রান্নাঘরের স্থান সংকুলান এবং খরচকৃত অর্থের সঠিক মূল্যপ্রাপ্তি উভয় ক্ষেত্রে সেরা উপায় হতে পারে মাল্টি-কুকার ব্যবহার করা।

Comments

The Daily Star  | English
Apparel Buyers Delay Price Increases Post-Wage Hike Promise

Garment exports to US grow 17%

Bangladesh shipped apparels worth $5.74 billion in the July-March period to the USA

6h ago