কাপ্তান বাজার যে কারণে অনন্য

কাপ্তান বাজার
ছবি: প্রবীর দাশ

মাংস, শুকনো ফল, চা পাতা, মসলা, কিংবা ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী- ঢাকার কাপ্তান বাজার যেন সব কিছুর এক বিশাল সমারোহ, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগত। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই বাজারের অন্যতম বড় পরিচয় হচ্ছে এটি ঢাকার সবচেয়ে বড় কবুতর বাজার।

নোংরা, দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিবেচনার বাইরে রাখলে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি পাইকারি ও মানসম্মত পণ্য বিক্রির জন্য বিখ্যাত। তাই ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম পাড়ি দিয়েও মানুষ এই বাজারে বিভিন্ন মানসস্মত পণ্যের খোঁজে আসেন।

এ বাজারের চা পাতা, শুকনো মরিচ, শুকনো ফলের মান নিয়ে বাজি ধরা যায়। এখানকার পাইকারি বিক্রেতারা পণ্যের মান নিয়ে কখনো আপস করেন না।

শুকনো ফলের দোকানগুলোতে চিনিমুক্ত সাকুরা পামের বিশাল সংগ্রহ পাওয়া যায়, যা খুবই সুস্বাদু, মজাদার। যারা ক্যালরি গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক, তাদের জন্য আছে শুকনো ডুমুর ফল। অনেকে স্লাইস করা বা কাটা অবস্থায় খেলেও আস্ত শুকনো ডুমুর ফল কিছুটা বিরল। কিন্তু কাপ্তানবাজারে গেলে অনায়াসে এসব পাওয়া যাবে। অত্যন্ত দামি মসলা, কালো, সবুজ ও সোনালি কিশমিশ এবং জাফরান সবই এখানে পাওয়া যায়।

স্থানীয় বাজারে সাধারণত মিষ্টি এবং সুঘ্রাণযুক্ত সবুজ এলাচি পাওয়া না গেলেও কাপ্তান বাজারে পাওয়া যায়। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের এলাচি যেমন আছে, আবার কিছুটা পুরোনো এলাচিও পাওয়া যাবে। মিষ্টি এবং মসলাদার উভয় খাবারেই এটি ব্যবহার করা যায়।

চা পাতা বিক্রির জন্য অনেক পাইকারি দোকান আছে কাপ্তান বাজারে। মসলা চা, দুধ চা কিংবা র চায়ের জন্য উৎকৃষ্ট মানের চা পাতা প্রয়োজন। এই বাজারে অরেঞ্জ পেকো (উচ্চমানসম্পন্ন কালো চা), অর্থোডক্স, ফেনিং অর্থোডক্স কিংবা প্রিমিয়াম ব্লেন্ড টিসহ সব ধরনের চা পাতা পাওয়া যায়। এসব চা পাতা আপনার স্থানীয় বাজারে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এই বাজারে অনেক দোকান আছে, যারা সরাসরি নিলামের মাধ্যমে চা পাতা কিনে তা এখানে পাইকারি দামে বিক্রি করে। ঢাকার বেশিরভাগ চা দোকানিরা এসব পাইকারদের কাছ থেকেই চা পাতা কেনেন।

একটি জরাজীর্ণ ভবনে পুরোনো মাছের বাজারও কাপ্তান বাজারের খ্যাতির অংশ। আর কবুতরের বাজার তো এই বাজারের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এটি রাজধানীর সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে জনপ্রিয় কবুতরের বাজার। এখানে ৫০০ টাকায়ও যেমন এক জোড়া কবুতর পাওয়া যায়, তেমন কবুতরের বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভতার ওপর নির্ভর করে অত্যন্ত চড়া দামেও বিক্রি হয়।

অনেকের দাবি, এই বাজারটি ১৯৪০ এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রথমে মূলত ঠাটারী বাজারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পরে অনেক জাহাজ সদরঘাটে অবস্থান করার সময় জাহাজগুলোর ক্যাপ্টেনরা এই গলিতে কেনাকাটা করতে আসতেন এবং সেখান থেকেই এটি কাপ্তান (captain) বাজার নামে পরিচিতি লাভ করে।

অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

6h ago