স্মৃতিশক্তি তরতাজা করার ৪ কৌশল

ছবি: সংগৃহীত

স্মৃতিকে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে কোনোভাবেই আমাদের হাত-পা-মাথা-চুল ইত্যাদি স্পর্শযোগ্য ধারণার ছাঁচে ফেলা যায় না। স্মৃতিকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না- তবু মানবমস্তিষ্কের এক অতি জটিল রহস্য এই স্মৃতি।

স্মৃতি নিয়ে বোধ করি সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়া হয় 'ভুলে যাওয়া' নিয়ে। মনে রাখার মতো জিনিস যখন মনে থাকে না, সে নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। এমন ভোগান্তি থেকে পাঠকদের বাঁচিয়ে দিতে, আজকের এ লেখায় তাই মানবস্মৃতিকে তরতাজা রাখতে কিছু কার্যকরী কৌশল নিয়ে কথা হবে।

ভিজ্যুয়ালাইজেশন বা দৃশ্যায়ন

যেকোনো বিষয়, বস্তু, ঘটনা– তা সে কাজের বা অকাজের যাই হোক না কেন, মনে রাখার জন্য সেটিকে মনে মনে কয়েকবার চোখ বুলিয়ে নেওয়ার, অর্থাৎ 'ভিজ্যুয়ালাইজ' করে নেওয়াটা সবসময়ই ভালো কৌশল। এতে করে মনের মধ্যে একটি ইমেজ তৈরি হয়, যা সেই বিষয়টির সঙ্গে স্মৃতিকে যুক্ত করে দেওয়ার কাজ করে। এজন্যই বাচ্চাদের, এমনকি বড়দেরও বিভিন্ন শিখন উপকরণে ছবি বা ভিজ্যুয়ালের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়। কারণ শব্দ বা ধারণার চাইতে ছবি মনে রাখা আমাদের জন্য সহজ।

কেউ কেউ অনেক কিছু মনে রাখতে পারলেও রাস্তাঘাট ভুলে যেতে ভীষণ পটু। তাদের জন্য এই কৌশলটি বেশি কাজে দেবে। কোনো রাস্তা মনে রাখার ক্ষেত্রে শুধু সেই রাস্তার আশপাশ, দোকানপাট, সাইনবোর্ড, বিভিন্ন ইমারত এবং কোন গলির পর কোন মোড় আসে– এমন একটা ম্যাপ মাথার মধ্যে গড়ে নিলেই রাস্তা ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কমবে, আর সেইসঙ্গে পথ হারাবার ভয়ও।

পুনরাবৃত্তি

ছোটবেলায় নামতা শিখতাম কীভাবে, মনে আছে তো? বুঝে, না বুঝে– বারবার আওড়ে যাওয়া সেইসব দিনগুলো কারোরই ভোলার কথা নয়। এর পেছনে ছিল একটাই 'সায়েন্স'। পুনরাবৃত্তি আমাদের স্মৃতিকে শক্তিশালী করে। আর তাই একবার পড়ে যেটুকু মনে থাকে, কয়েকবার পড়লে তার চাইতে বেশি। শুধু কি পড়াশোনা? মানুষের চেহারার মতো আপাতদৃষ্টিতে সহজ বিষয়ও তো পুনরাবৃত্তিরই মুখাপেক্ষী। তাই তো রাস্তাঘাটে দেখা অচেনা লোকেদের চেহারার চাইতে বেশি মনে গেঁথে থাকে বারবার দেখা মানুষের মুখচ্ছবি।

অঙ্কের কারিকুরি

পড়াশোনার সকল বিষয়ের অঙ্কের অলিগলি অনেকের জন্যই বিশেষভাবে কঠিন মনে হয়, আবার অনেকের কাছে অঙ্কের চেয়ে মজার আর কিছু নেই। মূলত গাণিতিক সমস্যাগুলো অন্য যেকোনো প্রশ্নের চাইতে আমাদের মস্তিষ্ককে বেশি চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম। তাই স্মৃতিশক্তির মতো বিষয়গুলোকে 'সুপার' ফর্মে নিয়ে যেতে হলে যেতে হবে অঙ্কের কাছে।

২০২১ সালে 'অ্যাডভান্সেস ইন এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিন অ্যান্ড বায়োলজি' জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে জরিপে অংশগ্রহণকারীর চেতনাগত অংশগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হয়তো পড়াশোনার গণ্ডি বহু দূরে ফেলে এসেছেন, তবু মাথা খাটানোর জন্য মজার মজার অঙ্কের বই সংগ্রহে রাখতে পারেন। এতে মাথাও অলস থাকবে না, স্মৃতিশক্তিও হবে তরতাজা।

মেডিটেশন বা ধ্যান

মস্তিষ্ক সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রেই মনোযোগের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। আর মনোযোগ বৃদ্ধি কিংবা একই জায়গায় ফোকাস ধরে রাখতে নিয়মিত মেডিটেশনের বিকল্প নেই। মেডিটেশনের ফলে স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। এমনকি 'ব্রিফ মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন ইনডিউসেস গ্রে ম্যাটার' নামক গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, মেডিটেশনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে 'গ্রে ম্যাটার' বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য, এই 'গ্রে ম্যাটার' অংশেই থাকে নিউরন কোষদেহ। সাধারণত বয়সের সঙ্গে গ্রে ম্যাটার কমে যায়, যার ফলে স্মৃতির মতো বিভিন্ন সহজাত সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তাইওয়ানের কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে, মেডিটেশন চর্চাকারীদের মধ্যে যারা মেডিটেশন করেন না, তাদের চেয়ে অধিকতর ভালো 'স্পেশিয়াল ওয়ার্কিং মেমোরি' কাজ করে। এই বিশেষ ধরনের স্মৃতির মাধ্যমে মানুষ তথ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান সম্পর্কে মনে রাখে।

এসব পদ্ধতি ছাড়াও বিদেশি ভাষা শিক্ষা, রান্নাবান্না, নিয়মিত ব্রেইনস্টোর্মিংয়ের মতো বিভিন্ন কৌশল চর্চার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তি– উভয় দিকেই সুফল পাওয়া সম্ভব। প্রতিদিনকার রুটিনে একটি বা দুটি এমন 'মেমোরি বুস্টিং' কৌশল প্রয়োগ করলে অসময়ে আলঝেইমার্স বা ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিভ্রমের আতঙ্ক থেকেও নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English

The constitution: Reforms only after a strong consensus

Constitutional reforms should be done after taking people’s opinions into account, said Dr Kamal Hossain, one of the framers of the constitution.

2h ago