লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ: দূরে থেকেও কি কাছে থাকা যায়
পড়াশোনা, চাকরিসহ নানা কারণে প্রিয়জনের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয় অনেককে। কাছাকাছি থেকেও যেখানে সম্পর্কে নানা টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়, সেখানে দূরে থেকে সম্পর্কের বন্ধন অটুট রাখা মোটেই সহজ নয়। চোখের আড়াল হলে মনেরও যেন কিছুটা আড়ালেই চলে যায় প্রিয়জন।
তবে কি লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ সুন্দর থাকবে না? দূরে থাকতে থাকতে একসময় হারিয়ে যাবে প্রিয় মানুষটি? তা কিন্তু নয়। দূরে থাকলেও প্রিয়জনকে চাইলে কাছেই রাখা সম্ভব। তবে সেজন্য অবশ্যই প্রয়োজন আরেকটু বাড়তি মনোযোগ, ধৈর্য আর আন্তরিক প্রচেষ্টা।
এ ক্ষেত্রে কিছু টিপস জানা থাকলে দূরে থেকেও সম্পর্ক থাকবে সুন্দর, আসবে না মনের দূরত্ব।
নিয়মিত যোগাযোগ করুন
প্রযুক্তির কল্যাণে এখন দূরে থেকেও প্রিয়জনের কাছে থাকা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে অনেকে একই বাড়িতে থেকে যতটুকু না যোগাযোগ করে একে অন্যের সঙ্গে, দূরে থেকে তার চেয়ে বেশি কাছে থাকা যায় বিভিন্ন উপায়ে।
প্রতিদিনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো ছবি কিংবা টেক্সটের মাধ্যমে শেয়ার করে অনুভূতির আদান-প্রদান করুন প্রিয়জনের সঙ্গে। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু কী করছেন তা না বলে কিছুটা বিস্তারিত বর্ণনা দিলে ভালো হয়। যেমন বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলেন, ভালো সময় কাটিয়েছেন এভাবে না বলে কোথায় গিয়েছিলেন, সঙ্গে কে কে ছিল, কী কী দেখেছেন ইত্যাদি বিস্তারিত বলুন নিজে থেকে। এতে দুজন দুজনের জীবন কেমন চলছে সে সম্পর্কে জানবেন এবং সম্পর্ক ভালো থাকবে।
আলাদা থেকেও একসঙ্গে সময় কাটান
সামনাসামনি না থাকলেও একসঙ্গে সময় কাটানো যায় নানাভাবে। প্রয়োজন শুধু সময়ের ও ইচ্ছার। সঙ্গীর অবসর সময়ের সঙ্গে আপনার সময় মিলে গেলেই মুভি নাইটের পরিকল্পনা করুন। আজকাল ভিন্ন জায়গায় থেকেও একসঙ্গে মুভি দেখার উপায়ের অভাব নেই। এ ক্ষেত্রে স্কাইপি থেকে নেটফ্লিক্স যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া কাজের ফাঁকে অনলাইন কুইজ, গেইম তো খেলাই যায়!
বিশ্বাস রাখুন, সন্দেহ করবেন না
ভালো সম্পর্ক যেমন গড়ে উঠে বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ, সততার ওপর ভিত্তি করে, তেমনি সম্পর্কে ফাটলও ধরতে পারে ছোটখাট সন্দেহ থেকে। দূরে থাকা প্রিয়জন কী করছে তা জানার জন্য যতটা, তারচেয়ে বেশি সন্দেহ থেকে বারবার কল, টেক্সট করেন অনেকে। এতে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।
কোনো কারণে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তা নিয়ে সঙ্গীর সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে। ভালো হয় কল কিংবা টেক্সটে যুক্তিতর্কে না জড়িয়ে সামনাসামনি দেখা করে সমাধান করা। সেটা সম্ভব না হলে যুক্তি দিয়ে খোলামেলা কথা বলে নিন ফোনেই।
এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখবেন, নিজেদের মধ্যে কিছু সীমানা নির্ধারণ কার জরুরি। একে অন্যের ব্যক্তিগত পছন্দকে শ্রদ্ধা করতে হবে। সঙ্গীর জীবনে আপনি একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ হতে পারেন, তবে তার ব্যক্তিগত জীবন পুরোটাই আপনাকে নিয়ে হবে না। তাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন না, সবসময় ও অকারণে সন্দেহ করবেন না। তাতে সম্পর্ক তিক্ত হবেই।
মাঝেমাঝেই দেখা করার পরিকল্পনা করুন
সঙ্গী দূরে থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পরপর দেখা করা উচিত। এতে নিজেদের বন্ধন দৃঢ় থাকবে। দেশের বাইরে থাকলে অপেক্ষার সময়টা বেশ দীর্ঘ হয়। কিন্তু একই দেশের ভিন্ন জায়গায় থাকলে সময় বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সময় নির্ধারণ করে দেখা না করলে সম্পর্কের আস্থা নষ্ট হতে পারে। তাই বুঝেশুনে সময় বেছে নিতে হবে।
দেখা হওয়ার পর সঙ্গীকে কী উপহার দেবেন, তাকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবেন তা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখুন। দীর্ঘদিন পর স্বল্প সময়ের জন্য দেখা করলে সঙ্গী মনঃক্ষুণ্ন হতে পারে। তাই কিছুটা সময় হাতে নিয়ে দেখা করুন।
মনের খবর রাখুন
সরাসরি যখন সঙ্গীর পাশে থাকা সম্ভব হয় না, তখন নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া যায় মনের খবর রাখার মাধ্যমে। অনেক সময় প্রিয়জন মুখে না বললেও বুঝে নিতে হবে তার মানসিক অবস্থার খবর। মন খারাপ থাকলে এমনভাবে কথা বলতে হবে যাতে তার মন ভালো হয়। কারণ দূরে থেকে কথার মাধ্যমেই শুধু তার মন ভালো করার সুযোগ থাকে।
নির্দিষ্ট সময়ে কথা বলার অভ্যাস থাকলে তা অবহেলা করা যাবে না। বিশেষ দিনে দূর থেকেও কীভাবে শুভেচ্ছা জানালে সঙ্গী খুশি হবে তা নিজেকেই ভাবতে হবে।
নিজেকে দুর্বোধ্য করে রাখবেন না, অনুভূতি প্রকাশ করুন
দূরের সম্পর্কে বেশিরভাগ সময় সন্দেহ, নিরাপত্তাহীনতার উপস্থিতি দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। এজন্য প্রিয়জনের সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন, নিজেকে প্রকাশ করুন। সঙ্গীর প্রশংসা করুন, তার সম্পর্কে আপনার মনোভাব প্রকাশ করুন। আপনার জীবনে তার গুরুত্ব বুঝতে দিন।
লং ডিসটেন্স রিলেশনশিপ কিছুটা কঠিন সত্যি, কিন্তু আস্থা আর ভালোবাসা অটুট থাকলে এবং যোগাযোগ ঠিক রাখলে সেখানে মনের দূরত্ব হানা দেয় কম। তাই চেষ্টা করুন সম্পর্কের একটু বাড়তি যত্ন নিতে। তখন দেখবেন, দূরে থেকেও আসলে কাছে থাকা যায়।
Comments