দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার ৫ কৌশল

কারো কারো জন্য হয়তো যেকোনো পরিস্থিতিতেই ঘুমিয়ে পড়া খুব একটা মুশকিল কাজ নয়। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, যাদের জন্য ঘুমিয়ে পড়া এবং ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা– দুটোই বড়সড় চ্যালেঞ্জ।
ছবি: সংগৃহীত

সুস্থ জীবনযাপনের জন্য পরিমিত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মন-মেজাজ ভালো রাখার সঙ্গে শরীর ও মনকে কার্যকর রাখতে ভালো ঘুম দরকার। কারো কারো জন্য হয়তো যেকোনো পরিস্থিতিতেই ঘুমিয়ে পড়া খুব একটা মুশকিল কাজ নয়। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন, যাদের জন্য ঘুমিয়ে পড়া এবং ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা– দুটোই বড়সড় চ্যালেঞ্জ।

অপর্যাপ্ত ঘুম ব্যক্তির স্মৃতি, চেতনা, আবেগ, সংবেদনশীলতা ও মস্তিষ্ক ও দেহের বহু প্রক্রিয়াতে ব্যাঘাত ঘটায়। যদি কারো ঘুমের সমস্যা হয়, তবে এই ৫টি কৌশলের যেকোনো একটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

৪-৭-৮ পদ্ধতি

ডক্টর অ্যান্ড্রু ওয়েইলসের '৫-৭-৮' পদ্ধতি পালনের ফলে মানবমনে আরাম ও প্রশান্তি আসে। এটি যোগব্যায়াম থেকে অনুপ্রাণিত এক ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি, যা কি না ব্যক্তির স্নায়ুতন্ত্রকে আরামদায়ক অবস্থায় নিয়ে যায়। যখনই কোনো ধরনের মানসিক চাপ অনুভূত হবে তখন এই পদ্ধতিটি কাজে লাগানো যায়। এর জন্য প্রথমেই জিভকে সবচেয়ে সামনের দিকে ওপরের দাঁতের পেছনে নিয়ে যেতে হবে। এরপর 'হুশ' শব্দ করে বড় একটি শ্বাস ছাড়তে হবে।

ঠোঁট দুটো বন্ধ করে ৪ পর্যন্ত গুনে আবার শ্বাস গ্রহণ করতে হবে। তারপর শ্বাস আটকে রেখে মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনতে হবে এবং এ পদ্ধতির চূড়ান্ত পর্যায়ে আবারও একটি 'হুশ' শব্দে বড় একটি শ্বাস ছাড়তে হবে। এ সময় মনে মনে ৮ পর্যন্ত গুনে যেতে হবে। এই পদ্ধতিটি মোট ৩ বার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। ভালোভাবে মেনে চলতে পারলে একইসঙ্গে মানসিক বিশ্রাম ও দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পদ্ধতি কার্যকর হবে।

 

মিলিটারি বা সামরিক পদ্ধতি

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে প্রি-ফ্লাইট স্কুলের একটি প্রোগ্রামের জন্য ২ মিনিট বা তারও কম সময়ে পাইলটদের ঘুমিয়ে পড়ার জন্য এই সামরিক পদ্ধতিটি শ্যারন অ্যাকারম্যানের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়। এমনকি ঘুমের আগে কফি পান করলে বা বন্দুকের গুলির আওয়াজ শোনার পরও এ পদ্ধতি কার্যকর হয়। এজন্য মুখের পেশিগুলোকে শিথিল করে নিতে হবে। কাঁধটা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে হাত দুটোকে ২ পাশে বিশ্রামের অবস্থায় রাখতে হবে। এরপর বুকের অংশটুকুও শিথিল করে রেখে শ্বাস ছাড়তে হবে। এবার আপনার হাতের উপরের অংশ, উরু ও পাগুলোও শিথিল অবস্থায় ছেড়ে দিন।

১০ সেকেন্ডের জন্য প্রশান্তিদায়ক কোনো দৃশ্য ভাবুন। যদি এতেও কাজ না হয়, তবে ১০ সেকেন্ডের জন্য 'কোনো চিন্তা নেই' বা এমন ধরনের কোনো নিজস্ব 'মন্ত্র' আওড়ান। সামরিক ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি যেহেতু ঘুমের জন্য বেশ ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে, শোবার ঘরে আরও সহজ হবার কথা।

স্কেজিউল বা রুটিন পদ্ধতি

মানুষের শরীরে সার্কাডিয়ান রিদম নামে একটি নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা রয়েছে। এই দেহঘড়ি দিনে শরীরকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এবং রাতের বেলা ঘুম ঘুম ভাব আনে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠা এবং বিছানায় যাওয়ার ফলে দেহঘড়িতে ভালোভাবে 'দম দেওয়া' তথা একটি রুটিন তৈরি করা সম্ভব। একবার শরীর এই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে প্রতিদিন একই সময় ঘুমিয়ে পড়া সহজ হয়ে যায়।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি বেশ অনুকূল একটি পদ্ধতি, বিশেষ করে তাদের মানসিক স্থিরতা ও সুস্থতার জন্য এই রুটিনটি সহায়ক ভূমিকা রেখে থাকে। সেইসঙ্গে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রতি রাতে ৩০-৪৫ মিনিট নিজেকে সব ঝামেলা ও দুশ্চিন্তা থেকে মানসিকভাবে প্রশান্ত করার চেষ্টা করুন। এতে করে শরীর ও মন উভয়েই বিশ্রাম পায় এবং ঘুমিয়ে পড়তেও সুবিধা হয়।

পিএমআর পদ্ধতি

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের সঙ্গে দেহের পেশিগুলোর ছন্দময় উঠানামার পদ্ধতিকে বলা হয় প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন বা পিএমআর। এ প্রক্রিয়ায় দেহের প্রধান পেশিগুলোকে কিছুটা সক্রিয় করে তারপর শিথিল করে দিতে হয়। প্রথমেই চোখ বন্ধ করে নিয়ে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিতে হবে। এরপর ১০ সেকেন্ড মুখের পেশিগুলোর ওপর চাপ দিতে হবে। এরপর আবার পেশিগুলো শিথিল করে দিয়ে গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে শান্ত হতে হবে।

এরপরের ১০ সেকেন্ড কাঁধের পেশিগুলোর ক্ষেত্রেও একই কাজ করতে হবে। কয়েকটি গভীর শ্বাস নিতে হবে এবং ছাড়তে হবে। শরীরের অন্য পেশিগুলোর সঙ্গেও একই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপেই 'আপাদমস্তক', শুরুটা কাঁধের পেশি থেকে হবে এবং শেষটা হবে পা ও পায়ের আঙুলের পেশির ব্যায়াম দিয়ে। কোনো অংশে ব্যথা হলে সেটি বাদ দিতে হবে এবং এভাবেই পিএমআর পদ্ধতি মেনে দ্রুত ঘুম চলে আসবে।

গাইডেড ইমেজারি পদ্ধতি

ঘুমানোর আগে এদিক-সেদিকের নানা অপ্রীতিকর ঘটনার কথা চিন্তা না করে নিজেকে কল্পনায় নিয়ে যেতে হবে মনোরম কোনো স্থানে। যেখানে শুধু আনন্দ আর আনন্দ। একটি গবেষণার অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে দেখা গেছে, মানসিকভাবে মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার জন্য 'গাইডেড ইমেজারি', তথা কল্পিত দৃশ্যাবলীর পদ্ধতিটি বেশ কার্যকর। এতে করে তারা দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন।

বিছানায় যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করলে রাতে ঘুম ভালো আসে এবং মন থেকে আজেবাজে চিন্তা সরে গিয়ে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়। রাতে ঘুমানোর সময় যেসব চিন্তা চোখের ঘুম কেড়ে নেয়, তা থেকে মন সরিয়ে নেওয়াই বিচক্ষণের কাজ। এতে করে বিশ্রামের সময়টা প্রশান্ত আর আনন্দময় দৃশ্য ভেবে নিয়ে ভালোভাবে বিশ্রাম করা যাবে।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Create right conditions for Rohingya repatriation: G7

Foreign ministers from the Group of Seven (G7) countries have stressed the need to create conditions for the voluntary, safe, dignified, and sustainable return of all Rohingya refugees and displaced persons to Myanmar

5h ago