ডায়েরি লেখার ৫ বিকল্প

ছবি: সংগৃহীত

মনের ভাব ধরে রাখতে ডায়েরি লেখার অভ্যাস অনেক কার্যকর একটি উপায় হলেও সবার জন্য তা উপযোগী নাও হতে পারে। অন্য অনেক উপায়েই আমরা আমাদের নিয়মিত স্মৃতি সংরক্ষণ করে যেতে পারি।

এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে–

ছবি তোলা

স্মৃতি সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ছবি তোলা। পেশাদার ফটোগ্রাফার না হলেও আমরা সবাই হয়তো টুকটাক ছবি তুলি। শুধু নিজের বা প্রিয়জনদেরই নয়, যে কোনো মুহূর্তকে সময়ের ভাঁজে একটু হলেও বন্দী করে রাখতে পারে একটি আলো-ছায়ার মিশেলে তৈরি আলোকচিত্র। তৈরি করে নেওয়া যায় একটি ছবির অ্যালবাম বা ডায়েরি। সাধারণত ডায়েরিতে যেমন তারিখ বা সময় উল্লেখ করা হয়, এক্ষেত্রেও একই রকম– শুধু একটানা লেখার জায়গায় থাকবে ছবি আর ছবি সংক্রান্ত দুয়েকটি তথ্য।

এই 'ভিজ্যুয়াল ডায়েরি' কাগুজে বা ডিজিটাল, যে কোনো মাধ্যমেই করা যেতে পারে। কেউ কেউ স্পর্শযোগ্য স্মৃতি বেশি ভালোবাসেন, তাই কাগুজে ডায়েরি হলে পাতা উল্টে দেখার আনন্দটাও পাওয়া যাবে। তাদের জন্য পোলারয়েড বা ইনস্ট্যান্ট ক্যামেরা হয়ে উঠতে পারে একটি জাদুর বাক্স। সহজে আর কম সময়ে ছবি হাতে পেয়ে যাওয়ার পর স্কচটেপ বা আঠা দিয়ে ডায়েরিতে সেঁটে নেয়া যাবে। অনেকটা বলিউডের 'এক ভিলেন' সিনেমার সেই নায়িকাটির উইশলিস্টের মতো!

ছবি আঁকা

অনেকে আবার ক্যামেরার চেয়ে ভরসা রাখেন নিজের চোখে। খুব উঁচু দরের আঁকিয়ে না হলেও রেখার আঁকিবুঁকি কাটতে ভালোবাসেন– এমন ব্যক্তিদের জন্য ডায়েরির বিকল্প হতে পারে যে কোনো আকারের স্কেচবুক। জার্নালিংয়ের জন্য তারা নিজেদের আঁকার ইচ্ছেটাকে এবেলা ঝালিয়ে নিতে পারেন। সেইসঙ্গে মনের ভাবনা ও স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দেশ্যও সফল হবে।

এছাড়া শিল্পের অন্যতম শিল্পগুণ হচ্ছে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি। একঘেয়ে কোনো কাজ হোক বা মনের অস্থিরতা, বিরতি নিতে বসে পড়া যায় এক খণ্ড সাদা ক্যানভাসের সামনে। তাতে যাই বেরিয়ে আসুক না কেন, অন্তত হাড় জ্বালানো স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে।

ভয়েস নোট

কেউ লিখতে ভালোবাসেন, তো কেউ বলতে। একটানা কথার তুবড়ি ছোটানোই যাদের পছন্দের কাজ, জার্নাল তৈরির জন্য তারা কেন বৃথা কলম-কিবোর্ডে হাত ছোটাতে যাবেন? সেক্ষেত্রে 'ভয়েস নোট' নেওয়ার মতো ভালো কিছু হয় না। এমনকি অনেক লেখকও নিজেদের কাজের জন্য টুকরো টুকরো ভয়েস নোট নিয়ে থাকেন, পরে লেখায় ব্যবহার করবেন বলে। বর্তমানে আমাদের সবার ফোনেই একটা করে ভয়েস রেকর্ডার সেট করা থাকে, এ ছাড়া আলাদা ভালো মানের অ্যাপও নামিয়ে নেওয়া যায় প্লেস্টোর থেকে। রেকর্ডের মান ভালো করতে আলাদা মাইক্রোফোন বা সেটআপও ব্যবহার করা যায়– ঠিক যার যেমন সুবিধা।

মাইন্ড ম্যাপ

নামটা নতুন নতুন মনে হলেও এমন জিনিস আমরা প্রায়ই ব্যবহার করি অফিস বা ক্লাসরুমের প্রেজেন্টেশনে। মূলত ডায়াগ্রাম বা ফ্লোচার্টের মাধ্যমে আমাদের মনের হাল-হকিকত বয়ানের চেষ্টাই হচ্ছে 'মাইন্ড ম্যাপিং'। মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাওয়া চিন্তার কণা, পেঁচিয়ে যাওয়া ভাবনার সুতোকে একটু গোছানোরূপে নিজের চোখের সামনে উপস্থাপন করা হয় এতে। প্রতিটি মাইন্ড ম্যাপের কেন্দ্রে থাকে নির্দিষ্ট আলোচনার বিষয় এবং তারপর এর ডালপালা বিস্তার করা হয়। বিষয় যত গভীর, তাকে ঘিরে নির্মিত মাইন্ড ম্যাপ তত বিস্তৃত। যে কোনো পরিকল্পনা, অভিজ্ঞতা, ইচ্ছা, স্বপ্ন এমনকি কল্পনা নিয়েও তৈরি করা যায় দারুণ কিছু মাইন্ড ম্যাপ। অনলাইনে একটু খুঁজলেই মাইন্ড ম্যাপ তৈরির টেমপ্লেট পাওয়া যাবে, আবার কেউ চাইলে একেবারে শূন্য থেকেও শুরু করতে পারেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যালবাম তৈরি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়মিত ব্যবহারকারীদের জন্য এটি বেশ ভালো বুদ্ধি। এতক্ষণ আলাপ করা অন্য পদ্ধতিগুলোর যে কোনো একটি বা সবগুলোর সম্মিলনে ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে অ্যালবাম তৈরি করা যায়। একবার পোস্ট করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই এতে। বিশেষ করে ফেসবুকে আবার বছর ঘুরে 'মেমোরি' আসার ব্যাপারটা স্মৃতিগুলোকে মাঝে মাঝেই তাজা করে তোলে। অন্য কারো বাড়তি মনোযোগ না চাইলে 'অনলি মি' প্রাইভেসি দিয়ে ইচ্ছেমতো অ্যালবাম চালু করা যায়। ছবি, ভিডিও– যে কোনো ফরম্যাটের সঙ্গেই ক্যাপশনে সময় আর স্থান উল্লেখ করে দিয়ে নিজস্ব একটা ডিজিটাল স্মৃতির ভাণ্ডার গড়ে তোলা বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হতে পারে।

মনে রেখে দেওয়া কথাগুলোকে কোনো না কোনোভাবে চোখের সামনে দেখতে পেলে, ছুঁতে পারলে মনে যে ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি হয়, তার জন্যও অন্তত ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে জার্নালিং আমাদের সাহায্য করে। সংরক্ষণের পদ্ধতি যেমনই হোক না কেন, জীবন যতই পাল্লা দিয়ে ছুটুক না কেন ব্যস্ত সময়ের সঙ্গে– স্মৃতি ধরে রাখার অভ্যেসে আমাদের স্মৃতিরা বেঁচে থাকুক।

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

2h ago