ভালো ব্যবহার-সদয় আচরণের ৫ ভালো দিক
জীবনের সব রং যদিও সাদা-কালোতে পরিমাপ করা যায় না, তবু মানুষ মাত্রই ভালো-মন্দের মাপকাঠিতে জীবনকে পরিমাপ করতে চায়। এমনকি নিজেকেও। মানুষ মাত্রই ধরে নেয় মানুষ হয় ভালো হবে, নয়তো মন্দ। প্রায় সবারই ইচ্ছে থাকে অন্তত নিজেকে 'ভালো মানুষের' তকমাটি দিতে। একটু খেয়াল করলেই তা সম্ভব। ভালো হওয়ার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে অন্যের সঙ্গে ভালো ও সদয় আচরণ। আজকের লেখায় আলোচনা হবে ভালো হওয়ার তথা ভালো-সদয় ব্যবহারের ভালো দিকগুলো নিয়ে।
হাসির মতো ভালো ব্যবহারও 'সংক্রামক'
আমরা যে শুধু রোগব্যাধিতেই সংক্রমিত হই, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। আমরা আনন্দেও সংক্রমিত হই। এমন হয় না যে এক বন্ধু কোনো বিষয়ে হাসছে আর তার হাসির কারণ না জেনেই বাকিরাও হাসিতে ফেটে পড়ল? ভালো ব্যবহার ও সদয় আচরণের বিষয়টিও সেরকম। এই ইতিবাচক বিষয়টি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ভালো ব্যবহার জরুরি।
সম্পর্কে বোঝাপড়া বৃদ্ধি পায়
এ কথা সত্য যে জীবনে সবসময় ভালো-আনন্দের বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে না। কখনো কখনো আপন মানুষের সঙ্গেও কঠিন বিষয়ে আলাপ করতে হয়। সেক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো, খুব কঠোর কথা বলতে হলেও কারো ওপর রাগ না ঝেড়ে, তেড়ে না উঠে তার সঙ্গে এক কাপ চা খেতে খেতে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা যায়। বরং এভাবে বললেই আলোচনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যে ধরনের সম্পর্কই হোক না কেন, ভালো ব্যবহার ও ইতিবাচক যোগাযোগ চর্চা করলে তাতে বোঝাপড়া বৃদ্ধি পায়।
সুস্থ দেহে সুন্দর মন
অন্যের প্রতি সদয় আচরণ শুধু মনেই নয়, দেহেও ভালো প্রভাব ফেলে। সহমর্মিতা ও আন্তরিকতার মতো ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোকে ব্যক্তি যখন আপন করে নেন, তখন তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর ফলে রক্তচাপ, স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে। অন্যের সঙ্গে সংযোগ অনুভব করলে নিজের একাকিত্বও কমে যায়, একা একা চার দেয়ালে বন্দী থাকতে হয় না। দলীয়ভাবে অংশ নেওয়া যায় বিভিন্ন শরীরচর্চার অভ্যাসেও। মানবীয় সম্পর্কের পাশাপাশি সুস্থ থাকে শরীরও। সদয় মনোভাব মস্তিষ্কেও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। মস্তিষ্কে সন্তুষ্টি ও ভালো থাকার অনুভূতি জন্ম হয়।
আলাদা পরিচয় তৈরি হয়
বাসের সিট ছেড়ে দেওয়া, লিফটের দরজা ধরে রাখা, মন দিয়ে কারো মন খারাপের কথা শোনা, রক্তদান– আদতে ভালো হওয়ার চর্চাটা কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের পরিচয় তৈরি করা যায় ভালো কিছু কাজের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে সচেতনভাবে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে না চাইলেও শুধু আচরণের বাড়তি ইতিবাচকতা সবার কাছে ব্যক্তিকে বিশেষ করে তুলে ধরে। ১৯৮০ সালের এক গবেষণাতে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর করা এক জরিপে দেখা যায়, সঙ্গী নির্বাচনে সদয় আচরণ বাহ্যিক সৌন্দর্যের বহু উপরে জায়গা পেয়েছিল।
সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি পায়
ধরা যাক, দুজন অপরিচিত ব্যক্তি আমাদের সামনে আছেন। তাদের মধ্যে একজন যদি খিটখিটে মেজাজের হয় আর অপরজন সুমিষ্ট স্বভাবের, তাহলে আমরা কথা বলার জন্য কাকে বেছে নেব? খুব স্বাভাবিকতই দ্বিতীয় জনকে, কারণ তার কাছে পৌঁছানো বেশি সহজ। এমনটা হতেই পারে যে খিটখিটে মেজাজের মানুষটি প্রকৃতপক্ষে স্বভাবে দ্বিতীয় জনের চেয়ে বেশি ভালো। তবু প্রথম পরিচয়ে কিন্তু আমাদের দ্বিতীয় জনকেই ভালো লাগবে। তাই ভালো আচরণ করলে সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধি তথা নেটওয়ার্কিং সহজ হয়, যা সামাজিক জীব মানুষের জন্য সবসময়ই জরুরি।
নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার 'অপেক্ষা' উপন্যাসে লিখেছিলেন, 'পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় জিনিসগুলোর জন্যে কিন্তু টাকা লাগে না। বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেমন ধর জোছনা, বর্ষার দিনের বৃষ্টি, মানুষের ভালোবাসা।' হাসির ছলে ঠাট্টা করে আমরাও বন্ধুদের বলে থাকি, 'ভালো হয়ে যা, ভালো হতে পয়সা লাগে না!' কথাটা কিন্তু ভুল নয়। সত্যিই তো, ভালো হতে বা ভালো ব্যবহার করতে পকেটের পয়সা খরচ করতে হয় না। শুধু একটু সংবেদনশীল হওয়াই যথেষ্ট। অন্যের ও নিজের দিন ভালো করতে, মন ভালো রাখতে এবং সর্বোপরি জীবনকে ইতিবাচক গড়ে করে তুলতে ভালো হওয়ার ভালো দিক তাই আসলে শুধু এই ৫টিই নয়, সীমাহীন। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Comments