ধনে পাতা শুধু স্বাদ বাড়ায় না, আছে যেসব পুষ্টিগুণ
ধনে পাতা সাধারণত রান্নায় স্বাদ এবং সুগন্ধ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এটি শুধু খাবারের রং ও স্বাদ উন্নত করে না, এতে থাকা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ধনে পাতার পুষ্টিগুণ জানুন ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মাহফুজা নাসরিন শম্পার কাছ থেকে।
ধনে পাতার পুষ্টিগুণ
ধনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে থাকা প্রধান পুষ্টিগুণগুলো হলো-
ভিটামিন ও খনিজ
ধনে পাতা ভিটামিন এ, সি এবং কে-এর চমৎকার উৎস।
ভিটামিন এ: এটি চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
ভিটামিন সি: শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে কার্যকর।
ভিটামিন কে: রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং হাড়কে মজবুত রাখে।
ফাইবার: ধনে পাতায় থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: ধনে পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ক্যারোটিন, কোরিয়ান্ড্রল, এবং কুইরসেটিন রয়েছে, যা ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এটি ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস এবং ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক।
লোহা ও পটাসিয়াম
লোহা: রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
পটাসিয়াম: এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কম ক্যালরি: ধনে পাতায় খুব কম ক্যালরি থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি ডায়েটিংয়ের জন্য আদর্শ খাদ্য উপাদান।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
ধনে পাতার পুষ্টিগুণের কারণে এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কার্যকর।
হজমশক্তি উন্নত করা
ধনে পাতায় থাকা প্রাকৃতিক তেল হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। এটি পাকস্থলীর অম্লতা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে ধনে পাতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি ঠান্ডা, সর্দি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধ
ধনে পাতায় থাকা পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
ধনে পাতার নির্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি ইনসুলিন নিঃসরণকে উন্নত করে।
ত্বক ও চুলের যত্ন
ধনে পাতা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ ও অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।
কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি
ধনে পাতা প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে এবং কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
ধনে পাতা কাঁচা অথবা রান্না করে খাওয়া যায়। এটি সালাদ, স্যুপ, চাটনি, ডাল, তরকারি, এবং বিভিন্ন রেসিপিতে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা ধনে পাতা খাওয়া বেশি পুষ্টিকর। কারণ এতে পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণ মাত্রায় থাকে।
সতর্কতা
যদিও ধনে পাতা উপকারী, তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন: অ্যালার্জির সমস্যা। এ ছাড়া, অতিরিক্ত খেলে রক্তচাপ বেশি কমে যেতে পারে।
Comments