ফুলকপি নাকি বাঁধাকপি
শুরু হয়েছে শীতের মৌসুম। শীত মানেই নানা রঙের সবজি। এসব সবজির মধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপির জনপ্রিয়তা অত্যধিক। শীতের মৌসুমে সবার ঘরেই ফুলকপি ও বাঁধাকপি দিয়ে সুস্বাদু তরকারি রান্না হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই এ দুটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানি না। আবার অনেকের মধ্যেই সংশয় আছে বাঁধাকপি ও ফুলকপির মধ্যে কোনটি বেশি উপকারী।
আজ জানব ফুলকপি ও বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ এবং দুটির মধ্যে কোনটির কেমন উপকারিতা। জানিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।
শরীফা আক্তার শাম্মী বলেন, ফুলকপি ও বাঁধাকপি সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেলস। লো ক্যালরি সমৃদ্ধ হওয়ায় ওজন কমানোর জন্য এই দুই সবজি অনেক উপকারী।
১০০ গ্রাম ফুলকপি থেকে পাওয়া যায়-
শক্তি - ৩০ ক্যালরি
প্রোটিন -১.৯২ গ্রাম
ফাইবার -২ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট -৪.৭ গ্রাম
এক কাপ বা ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে পাওয়া যায়-
শক্তি -২৬ ক্যালরি
প্রোটিন - ১.৩ গ্রাম
ফাইবার -২ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট -৪.৭ গ্রাম
এ ছাড়া ফুলকপি ও বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও সালফার জাতীয় উপাদান।
ফুলকপির উপকারিতা
- এতে প্রচুর ফাইবার আছে যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে
- ফুলকপিতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফ্লোরাইড শরীরের হাড় শক্ত করে
- এর ভিটামিন সর্দি, ঠান্ডা, কাশি, গা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিবোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- সালফার জাতীয় উপাদান শরীরের প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে
- এই সবজিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় এ সবজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
- ফুলকপি পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখে
- ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
- চোখ সুস্থ রাখতে ফুলকপিতে থাকা ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
- ফুলকপিতে রয়েছে সালফোরাপেন নামক উপাদান, যা ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এ উপাদান রক্তচাপ কমায়, কিডনি ভালো রাখে
- ফুলকপিতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি নিউট্রিয়েন্ট
- এটিতে আছে কলিন ও ভিটামিন বি, যা মস্তিষ্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
বাঁধাকপির উপকারিতা
- বাঁধাকপি পাকস্থলির আলসার ও পেপটিক আলসার প্রতিরোধ করে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আলসারের জন্য উপকারী প্রাকৃতিক ওষুধ হলো বাঁধাকপির রস
- লাল প্রজাতির বাঁধাকপিতে আছে বেটা- ক্যারোটিন, লুটিন, যা হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়ায়
- রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়
- এটির ফাইবার হজমে সহায়তা করার পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পেট ফাঁপা, বুক জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা দূর করে
- বাঁধাকপি থেকে সালফারসমৃদ্ধ উপাদান গ্লুকোসাইনোলেটস তৈরি হয়, যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে
- বাঁধাকপির ফলিক এসিড শরীরের ডিএনএ পুনর্গঠন করে থাকে
- অকাল বার্ধক্য রোধ করে। বেগুনি বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, যা ভেতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
কোনটির উপকারিতা বেশি
বাঁধাকপি ও ফুলকপির পুষ্টিগুণ প্রায় একই। তবে সাদা বাঁধাকপির তুলনায় ফুলকপিতে ভিটামিন 'সি' এর পরিমাণ বেশি থাকে। এ ছাড়া তেমন পুষ্টিগত পার্থক্য লক্ষণীয় নয়। তবে প্রতিদিন এই সবজিগুলো খেতে থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সপ্তাহে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চার থেকে পাঁচদিন খাওয়া যেতে পারে এবং দিনে এক কাপ পরিমাণ খাওয়া ভালো।
Comments