বাঙ্গির যত গুণ

গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে একটি দেশীয় ফল বাঙ্গি। অনেকেরই পছন্দের তালিকায় থাকা এই ফলটি খুব বেশি সুস্বাদ না হওয়ায় অনেকের অপছন্দের তালিকাতেও রয়েছে। কিন্তু পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই ফলটির রয়েছে অনেক উপকারিতা।

চলে এসেছে গ্রীষ্মকাল। দেশের বিভিন্ন অংশে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। গ্রীষ্মে পাওয়া যায় অনেক ফল। এই গরমে শরীর সুস্থ রাখতে মৌসুমি ফল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

গ্রীষ্মকালীন ফলের মধ্যে একটি দেশীয় ফল বাঙ্গি। অনেকেরই পছন্দের তালিকায় থাকা এই ফলটি খুব বেশি সুস্বাদ না হওয়ায় অনেকের অপছন্দের তালিকাতেও রয়েছে। কিন্তু পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই ফলটির রয়েছে অনেক উপকারিতা।

আসুন জেনে নেই বাঙ্গির উপকারিতাগুলো। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের সিনিয়র পুষ্টিবিদ শরীফা আক্তার শাম্মী।

তিনি বলেন, বাঙ্গি ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ একটি ফল। গরমে শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী এটি।

পুষ্টি উপাদান

বাঙ্গির প্রায় ৯০ শতাংশই জলীয় অংশ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার।

এ ছাড়া, বাঙ্গিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

উপকারিতা

১. বাঙ্গি থেকে পাওয়া যায় প্রচুর পানি, যা শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে।

২. গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। বাঙ্গি এই পানির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।

৩. গরম ও অতিরিক্ত রোদের কারণে সানবার্ন, ফিট হাইপার পাইরেক্সিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। বাঙ্গির রস এসব সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৪. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রয়োজন হয়। বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি। ফলে, এই ফল শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

এ ছাড়া, বিটা-ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।

৫. বাঙ্গিতে প্রচুর ফাইবার থাকায় তা খাবার হজমে সহায়তা করে। অর্থাৎ হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সহায়ক বাঙ্গি।

৬. বাঙ্গিতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। হার্টের রোগীরা শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ অর্থাৎ ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স করার জন্য খাদ্যতালিকায় বাঙ্গি রাখতে পারেন।

৭. বাঙ্গিতে সুগারের পরিমাণ কম। এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও অনেক বেশি না। ডায়াবেটিস রোগীরা এই ফলটি ৯০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়া ভালো।

৮. বাঙ্গি ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস। এই ফল ফলিক অ্যাসিড তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং যাদের শরীরে রক্ত কম এবং তাদের জন্য বাঙ্গি খুবই উপকারী ফল।

৯. বাঙ্গিতে রয়েছে ভিটামিন বি এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইন্সনিটল। এই উপাদান নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে। তাই নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হয়।

১০. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বকের সুস্থতায় বাঙ্গি ভূমিকা রাখে। ত্বকতে করে উজ্জ্বল ও মসৃণ।

১১. বাঙ্গিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত করে এবং হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধে সাহায্য করে।

১২. বাঙ্গিতে ফ্যাট না থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ সাহায্য করে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, ফলে বারবার অন্য খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কম হয়।

১৩. অ্যাসিডিটি, খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসারের মতো বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধেও সাহায্য করে বাঙ্গি।

কীভাবে খাবেন

বাঙ্গি কেটে ছোট ছোট টুকরো করে খেতে পারেন অথবা শরবত বা স্মুদি তৈরি করেও খেতে পারেন।

অনেকেই বাঙ্গিতে চিনি মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। চিনি দিয়ে খেলে বাঙ্গির উপকারিতা পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায় না। কারণ, চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

শরবত বা স্মুদি তৈরি করার ক্ষেত্রেও চিনি পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে চিনির বিকল্প উপাদান—যেমন: গুড়—অল্প পরিমাণে যোগ করা যেতে পারে।

সতর্কতা

বাঙ্গির তেমন কোনো অপকারিতা নেই। কিন্তু অপকারিতা নেই মনে করে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক হবে না।

কারণ, অতিরিক্ত বাঙ্গি খেলে সুগারলেভেল ওভারলোড হতে পারে। এ ছাড়া, যাদের কিডনিতে সমস্যা আছে, তাদের বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। কারণ, কিডনি রোগীদের অতিরিক্ত পটাশিয়াম নেওয়ার ক্ষমতা কম।

Comments