উত্তাপ কমেনি ফলের বাজারে

কারওয়ান বাজারে ফলের দাম কিছুটা কমলেও তা এখনো ‘সহনীয়’ পর্যায়ে আসেনি। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

চলতি বছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের ভেতর ফলের বাজারে যে আগুন লেগেছিল, তার উত্তাপ এখনো কমেনি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে যেসব ফলের ওপর রোগীরা ভরসা করেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সেগুলোর দাম ছিল বাড়তি। 

এ সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে আজ বুধবার ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের ফলের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এ সময় চাহিদার শীর্ষে থাকা মাল্টা, ডাব, পেঁপে, কমলা, আপেল, আনার, আঙুর ও জাম্বুরার দাম কিছুটা কমলেও তা এখনো 'সহনীয়' পর্যায়ে আসেনি।

কারওয়ান বাজারের অন্তত ১০ জন ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা এই প্রতিবেদকের। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে বাজারে এখন প্রতি কেজি আমদানি করা মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। বিপরীতে সরবরাহ 'যথেষ্ট' থাকায় তারা দেশে উৎপাদিত প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি করছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।

গত বছরের তুলনায় এবার দেশি-বিদেশি সব ফলের দামই বেশি। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

এ সময় প্রতি কেজি সবুজ আপেল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, লাল রঙের 'ফুজি' আপেল ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, লাল আঙুর ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, কমলা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পেঁপে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, নাশপাতি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা, আনার ৪১০ থেকে ৪২০ টাকা ও প্রতি পিস জাম্বুরা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, এ মাসের শুরুতে প্রতি কেজি বিদেশি মাল্টা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকাতেও বিক্রি করেছেন তারা। সে তুলনায় এখন মাল্টার দাম খানিকটা কমলেও আপেল, আনার, পেঁপে, নাশপাতি, আঙুর ও কমলার দাম প্রায় অপরিবর্তিত আছে।

আর ডাব নিয়ে হইচই কমলেও ১০০ টাকার নিচে বাজারে কোনো ডাব নেই। বড় আকারের একটি ডাব কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এক সময় যা ২০০ টাকায় পৌঁছেছিল।

বিদেশি ফলের আমদানি কমে যাওয়ায় দেশি ফলের দাম বেড়ে যায়। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

এর বাইরে বাজারে এখন প্রতি কেজি আমড়া ৬০ টাকা, বড় আকারের প্রতি পিস আনারস ৬০ টাকা, আকারভেদে প্রতি কেজি পেয়ারা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ড্রাগন ২৫০ থেকে ৩২০ টাকা, কাটিমন আম ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফল বিক্রেতা জিয়াউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এবার দেশি-বিদেশি সব ফলের দামই বেশি। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পর গত এক দেড় মাসের মধ্যে দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।

আরেক বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, 'বাজারে যতদিন মৌসুমি আম ছিল ততদিন অন্য ফলের চাহিদা ছিল তুলনামূলক কম। যেমন-দেড় মাস আগেও প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ২০০ টাকাতে বিক্রি হয়েছে। এখন তা ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।'

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে যেসব ফলের ওপর রোগীরা ভরসা করেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সেগুলোর দাম বাড়তি। ছবি: মামুনুর রশীদ/স্টার

বিক্রেতারা আরও বলেছেন, ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছেন না আমদানিকারকরা। তাতে বিদেশি ফল আমদানি কমে গেছে। আর এ সুযোগে দেশি ফলের দামও বেড়ে গিয়েছিল আগেই। এই বাড়তি দামে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে ডেঙ্গু।

বিক্রেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, চলতি মাসের শুরুর দিকেও মাল্টা ৩২০-৩৮০ টাকা, কমলা ৩২০-৩৫৯ টাকা, সবুজ আপেল ৩৫০-৩৭০ টাকা, আনার ৪৫০-৫০০ টাকা এবং আকার ও মানভেদে পেঁপে ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে বিদেশি ফলের চাহিদা বেশি থাকে। কারণ, এ সময় দেশি ফলের সরবরাহ কম থাকে।

আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুসারে, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ফলের আমদানি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কমেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টন ফল আমদানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ টন। সে হিসাবে এক বছরে আমদানি কম হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৫২ টন ফল।

কারওয়ান বাজারের ফল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের মন্তব্য, 'ফলের দাম বাড়ার পেছনে আমদানি কম হওয়া একটি কারণ। এর সঙ্গে সিন্ডিকেটের কারসাজি তো আছেই।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

1h ago