মিরপুরের লাভ রোড: শহুরে সন্ধ্যার আড্ডা জমে যেখানে

মিরপুরের লাভ রোড

ঢাকার প্রায় সব এলাকাতেই এমন একটা নির্দিষ্ট জায়গা থাকে, যেখানে মানুষজন জড়ো হয় খাবার, আড্ডা আর আরামের আমেজে ভাসতে। মিরপুরের সেই জায়গাটি হলো লাভ রোড।

প্রতিদিনের লাভ রোড

বিকেল থেকেই লাভ রোডে মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সন্ধ্যা নাগাদ আড্ডাবাজদের হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠে চারপাশ। তারুণ্যের ঝলমল মুখ আর আনন্দ উল্লাসে এখানকার সন্ধ্যাগুলো প্রতিদিনই উৎসবমুখর। আবছা আঁধারে মাখা রাস্তা, উপরে স্ট্রিট লাইটের সারি বাঁধা– প্রাণবন্ত সময়ে মেখে থাকে আড্ডা, গান আর দারুণ সব খাবারের সুগন্ধ।

মিরপুর
ছবি: শাদাব শাহরুখ হাই
 

অন্যান্য দিনের চাইতে এখানেও ছুটির দিনে বেশি মানুষ আসে। লাভ রোডের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে তরুণদের আনাগোনাই সবচেয়ে বেশি। কপোত-কপোতী হোক বা বন্ধুদের জমাটি আড্ডা– লাভ রোড কাউকে নিরাশ করে না।

স্লোগান আহমেদ অনিকের কথাই ধরা যাক। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিংয়ের শিক্ষার্থী অনিকের পড়াশোনা প্রায় শেষের পথে, প্রায় সব শুক্রবারেই বন্ধুদের সঙ্গে তিনি চলে আসেন লাভ রোডে।

পাশেই আড্ডায় মগ্ন ছিল এক দল তরুণ। মাঝখানে বসে একজন গিটার বাজাচ্ছে, বাকি সবাই সুরে সুর মেলাচ্ছে।

তাদেরকে দেখে অনিক বললেন, 'এখানে এলে ক্যাম্পাস লাইফের কথা মনে পড়ে যায়। এখানে যারা আসে, সবারই বয়স কম– ফূর্তিতে ভরপুর সময় কাটায়।'

এই দলটি ছাড়াও আরও অনেককেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের অনেকের সঙ্গে আছে বিভিন্ন রকমের বাদ্য-বাজনা, যখন ইচ্ছে হচ্ছে বাজাচ্ছে, গান গাইছে।

মিরপুর-১ এর বাসিন্দা লাবণ্য এ বছর একজন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু।

আগে প্রায়ই আসতেন লাভ রোডে, জানালেন এই রোডকে ঘিরে তার স্মৃতিকথা।

তিনি বলেন, 'আগের মতো আর আসা হয় না। এই জায়গাটাও আগের মতো নেই। এমনকি পাঁচ কি ছয় বছর আগেও এইখানটা আরও বেশি প্রাণবন্ত ছিল। আরও রং, আরও সুর ছিল। এখন একটু আলাদা লাগে।'

যদিও মিরপুরনিবাসীরাই এখানে বেশি আসেন, তবে ঢাকার অন্যান্য এলাকা থেকে আসা মানুষের সংখ্যাও কম নয় লাভ রোডে। অনিক মিরপুর-১০ এ থাকেন, কিন্তু হেঁটে হেঁটে প্রায়ই এখানে চলে আসেন। তার এক বন্ধু এখানে আড্ডা দিতে আসেন মিরপুর-১৩ থেকে, অন্য আরেকজন ধানমন্ডি থেকে। একসঙ্গে সময় কাটাতে এটুকু দূরত্ব পাড়ি দেওয়া তাদের কাছে কিছুই মনে হয় না।

খাবারের পসরা

লাভ রোডের স্ট্রিটফুডগুলো দেখতে ভীষণই আকর্ষণীয়। রাস্তার ধারে রয়েছে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, খাবারের স্টল। মটকা চা, ফুচকা, পানিপুরি এখানকার জনপ্রিয় মেনু। এ ছাড়া হকারদের ফেরি করা বাদাম, চাটনি, চিপস আর চা তো রয়েছেই।

মিরপুর
ছবি: শাদাব শাহরুখ হাই

একটু ভারি কিছু খেতে চাইলে কাবাব ও গ্রিলের সঙ্গে রয়েছে বার্গার ও পিজ্জার দোকানও। জুস বারগুলোতে মিলবে মন শীতল করা জুস, কফি বা হরেক রকমের শেক।

মটকা চা বা পানিপুরির স্টলগুলো এমনভাবে সাজানো হয় যে ক্রেতারা চোখ ফেরাতে পারেন না। সেইসঙ্গে বালু চায়ের মতো মজার সব জিনিসও রয়েছে লাভ রোডের এই দোকানগুলোতে।

একটি কনসালটেন্সি ফার্মে কর্মরত শিহাবুর রহমান নিয়মিত লাভ রোডে আসেন।

এই জায়গাটি নিয়ে তিনি তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, 'এখানকার কিছু খাবার আসলেই খুব মজা। স্টলের পিজ্জাগুলো ভালো, তবে ড্রিংক অত ভালো লাগেনি আমার।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি প্রায়ই রাস্তার ধারের চা স্টলে বসি। কিন্তু এই জায়গাটা চা স্টল থেকে আরও ভালো।'

লাভ রোডের এই রোজনামচা থেকে বোঝা যায়, ঢাকা শহরে বিনোদনের জায়গার খুবই অভাব। পার্ক বা খোলা মাঠ যেন এ শহরের জন্য উপকথা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই একটুখানি আরামে বসে গল্প করার মতো খোলামেলা জায়গা পেলেই মানুষ তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। লাভ রোডও এমনই একটি স্থান, ক্লান্তিময় দিনের শেষে মানুষ যেখানে শান্তি খুঁজে পায়।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Trump launches trade war with tariffs on Mexico, Canada and China

President Donald Trump announced broad tariffs Saturday on major US trading partners Canada, Mexico and China, claiming a "major threat" from illegal immigration and drugs -- a move that sparked promises of retaliation.

3h ago