সরিষার তেল-বাদাম বাটায় শীত স্পেশাল হাঁস ভুনা

হাঁস ভুনা রেসিপি
ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল

শীত এলেই হাঁসের মাংস খাওয়ার তোড়জোড় পড়ে যায় ভোজনরসিকদের দুনিয়ায়। আজকে কথা হবে হাঁসের বিশেষ এক আইটেম নিয়ে, যা নিয়ে কথা বলতে ভোলেননি খাদ্যরসিক সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদও। 'হেমন্তে নতুন ধান খেয়ে হাঁসের গায়ে চর্বি হয়, সেই হাঁস নতুন আলু দিয়ে ভুনা করে শীতের সকালে চালের রুটি দিয়ে খাওয়ায় যে কী স্বাদ!'

আমরা অবশ্য আজকের রেসিপিতে আলু এড়িয়ে যাব। শুধু মাংস দিয়েই হবে এই রান্না। মজার বিষয় হচ্ছে, শুধুমাত্র রান্নার প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করেই কিন্তু মেনুর নামটাও পালটে যায়– ভাজা, ভাজি, ভর্তা, তরকারি ইত্যাদি আরো কত কী! হাঁস ভুনার ক্ষেত্রেও তাই। প্রথমেই 'ভুনা' বললে আমাদের মাথায় যে পদটি আসে, তাতে ঝোল বেশি হয় না, একটা মাখো মাখো ভাব থাকে।

মশলাগুলো মাংসের গায়েই লেগে থাকে অনেকটা, তবে ভাত মেখে খেতে গেলে ওই মশলাই যথেষ্ট! কারণ হাঁস ভুনার এই সহজ রন্ধনপ্রণালীতে অনেক যত্ন নিয়ে এই মেরিনেশন বা মশলা মাখানো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কেউ কেউ প্রথমে আলাদা করে মশলা কষিয়ে নিতে চাইলেও এই প্রক্রিয়ায় মাংস সবসময়ই বেশি সুস্বাদু হয়।

হাঁস ভুনা রেসিপি
ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা ইত্যাদি সকল বাটার সঙ্গে যোগ করে হলুদ, মরিচ, জিরে, ধনিয়া ইত্যাদি অনান্য গুঁড়ো মশলা যোগ করে নিতে হবে। এমনিতে যে আলাদা মাংসের মশলা কিনতে পাওয়া যায়, সেটিও দিলে স্বাদ আর রং দুটোই ভালো আসবে। আর পরিমাণমতো লবণ দিতে ভুলবেন না যেন। তো এই সব মশলা একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে ধুয়ে রাখা মাংসের সঙ্গে। মাংসের টুকরোগুলো ইচ্ছেমতো নেওয়া যাবে। তবে সাধারণ তরকারির চেয়ে একটু ছোট ছোট হলে ভুনা ভাবটা বেশি ভালোভাবে বোঝা যাবে। সব মশলা মিশিয়ে নেওয়ার পর ৪-৫ টেবিল চামচ টক দই ফেটিয়ে নিয়ে আবারও মাংসের সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর মাংস ঢেকে বিশ্রাম করতে দিন অন্তত আধাঘণ্টা, এতে করে মশলা আর মাংসের মধ্যে সম্পর্কটা জমবে ভালো।

ওদিকে অবশ্য বসে থাকা চলবে না। ততক্ষণে এক চুলোয় বসিয়ে দেবেন পানি গরম হতে, ওটা পরে কাজে লাগবে। আর অন্য চুলোয় প্রস্তুত হতে থাকবে রান্নার পাত্র। এই ভুনা পুরোটাই হবে সরিষার তেলে। রান্নার পর সরিষার তেলের যে মিষ্টি গন্ধটা বেরিয়ে আসবে, তাতে হিম হাওয়া ম-ম করে উঠবে।

মেরিনেশনের আধা ঘণ্টা পর চুলা মধ্যম আঁচে রেখে তৈরি করে রাখা পাত্র অর্থাৎ কড়াই কিংবা ফ্রাইপ্যানে (তেমন বেশি মাংস হলে হাঁড়িও হতে পারে) সরিষার তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল একটু গরম হয়ে এলে তাতে মেরিনেটেড মাংস দিয়ে দেবেন। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কষিয়ে নিতে হবে। মশলা যখন তেল থেকে একটু আলাদা হয়ে আসবে, তখন অন্য চুলোয় রাখা ফুটন্ত গরম পানি একটু একটু করে যোগ করতে হবে।

অনেক বেশি পানি লাগবে না, যেহেতু এতে ঝোল রাখা হবে না। তবে সেদ্ধ হওয়ার উপযোগী পানি অবশ্যই দিতে হবে এবং এরপর সেদ্ধ হবার জন্য পাত্র ঢেকে দিতে হবে। আধাঘণ্টা পর একটু দেখে নিতে হবে রান্নার কী অবস্থা, মাংস সেদ্ধ হচ্ছে কি না এবং লবণের স্বাদ ঠিকঠাক আছে কি না। সব ঠিকঠাক হলে আর তখনো বাড়তি ঝোল থাকলে চুলার আঁচ একটু বাড়িয়ে শুকিয়ে নিতে পারেন। তবে এর আগে দুই চামচের মতো বাদাম বাটা ও দু-তিনটি কাঁচামরিচ চিরে নিয়ে রান্নায় দিয়ে দিন।

রান্নার এ সময়টায় কাঁচামরিচ দিলে মরিচ বেশি নরম হবে না, সুন্দর গন্ধ হবে আর একটু সবুজ ভাব থাকবে– এতে দেখতেও ভালো লাগবে। আর বাদামবাটা ভুনার স্বাদ, আঠালো ভাব দুটোই বৃদ্ধি করবে। ঝোল অনেকটা শুকিয়ে এলে, মাখো মাখো ভাব চলে আসলে এক চিমটি চিনি ছড়িয়ে দিয়ে চুলার আগুন বন্ধ করে পাত্র ঢেকে রাখুন। যেকোনো ঝাল ঝাল রান্নায় এই চিনি কিন্তু ম্যাজিকের কাজ করে, যদিও অনেকেই তা গোপন রাখে!

চালের রুটি, ভাত, পোলাও, ছিটা রুটি, পরোটা– যেকোনো কিছুর সঙ্গেই জমে যাবে এই বিশেষ হাঁস ভুনা। নিজের স্বাদকোরকগুলোকে খুশি করে তুলতে চাইলে এই শীতে চটজলদি বানিয়ে ফেলুন ইচ্ছেমতো ঝাল দিয়ে হাঁস ভুনা। যারা ঝাল কম খান– তারা নাহয় মরিচটা একটু বুঝেশুনেই দিলেন। উপভোগ করাটাই বড় কথা!

 

Comments

The Daily Star  | English

Reimagining Dhaka’s parks: Rasulbagh shows the way

Tucked into the narrow confusing lanes of Lalbagh is Rasulbagh Children’s Park -- a rare slice of serenity in a city that often forgets to breathe.

18h ago