শীতের আগেই মজাদার হাঁসের মাংসের খোঁজ

হাঁসের মাংস
ছবি: শাদাব শাহরুখ হাই

এ বছর শীত এখনও আসেনি, তবে হাঁসের মৌসুম কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে স্থানীয় বাজারগুলোয় দেখা মিলছে বেশ চর্বিওয়ালা হাঁস, যা রসনাবিলাসীদের দৃষ্টি কাড়ছে।

কথা হলো উত্তরা কাঁচাবাজারের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী আপন ব্রয়লারের মালিক মোহাম্মদ সুজনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, 'হাঁসের মতো জলচর পাখিরা প্রাকৃতিকভাবেই চর্বিযুক্ত হয়। তাদের পেশী আর চামড়ার নিচে চর্বির স্তর থাকে। মূলত শীতকালে পানিতে ভেসে থাকার সময় শরীর উষ্ণ রাখতেই প্রকৃতির এই ব্যবস্থা। সে কারণেই শীতকালকে হাঁসের মৌসুম বলেও ডাকা হয়।'

ঢাকার বাজারগুলোয় দুই ধরনের হাঁস দেখা যায়। একটা হলো বাণিজ্যিক খামারে চাষ করা, যাকে বলা হয় চাষের হাঁস। অন্যটি গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় খাবার খেয়ে বড় হওয়া দেশি হাঁস।

হাঁসের মাংস
ছবি: শাদাব শাহরুখ হাই

সুজন বলেন, 'আমার দোকানে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থেকে হাঁস আনি। যেখানে স্থানীয় নারীরা তাদের গৃহস্থালীতেই ২০-৩০টি করে হাঁস-মুরগি পালেন। সকালে এসব হাঁস-মুরগিগুলো খাঁচা বা তাদের জন্য নির্ধারিত ঘর থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর সেগুলো নিজেরাই ঘুরে ঘুরে খাবার খুঁজে খায়।'

যেহেতু হাঁস প্রকৃতি থেকেই তার খাবার সংগ্রহ করে তাই তারা পুকুর বা কোনো জলাধার থেকে ছোট পোকা, শামুক, বিভিন্ন গাছের শিকড়, ব্যাঙ, পোকামাকড়, ছোট মাছ ইত্যাদি খাবার নিজেরাই খুঁজে খুঁটে খায়। প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহ করা এসব খাবার তাদের শক্তপোক্ত করে।

অন্যদিকে, খামারে যে হাঁসের চাষ করা হয় সেগুলোকে খাওয়ানো হয় ফার্ম ফিড বা ব্রয়লার ফিড। যেগুলো খাওয়ার ফলে এসব হাঁসের মাংস তুলনামূলক নরম হয়।

সাধারণত বাংলাদেশের মানুষ শীতকালে চর্বিযুক্ত শক্ত হাড়-মাংসের দেশি হাঁসের মাংসই খেতে বেশি পছন্দ করে।

সে কারণেই ঢাকার বাজারে দেশি হাঁস বা রাজহাঁসের চাহিদা বেশি, যা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, দাম প্রতিদিন ওঠানামা করে। এই রকম দামের একটি হাঁসের ওজন হয় প্রায় ৪ কেজি, যা প্রায় ২০ জন মানুষ খেতে পারে।

নভেম্বর শুরু হতেই ঢাকার রাস্তায় দেখা মেলে ভ্রাম্যমাণ চিতই পিঠার দোকান। এটি মূলত চালের আটা দিয়ে তৈরি এক ধরনের পিঠা, যা বিশেষ প্রক্রিয়ায়, বিশেষ পাত্রে তৈরি করতে হয়। এর সঙ্গে বিক্রি হয় হাঁসের মাংস। এই পিঠার সঙ্গে সাধারণত খাওয়া হয় সরিষা, মরিচ বা শুটকি ভর্তা। তবে গত কয়েক বছর ধরে অনেক দোকানেই সাধারণ ভর্তাগুলোর পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে হাঁসের মাংস ভুনাও।

সরিষার তেলে বিভিন্ন মশলার সমন্বয়ে রান্না হয় এই হাঁসের মাংস। যার সঙ্গে মেশানো হয় নারকেলের দুধও। যা স্বাদহীন চিতই পিঠাকে দেয় অন্য মাত্রা। শীতের সন্ধ্যায় গরম গরম চিতই পিঠা আর হাঁস ভুনার কোনো তুলনাই হয় না।

ঢাকার পূর্বাচল নিউ টাইনের ১ নম্বর সেক্টরের ভোলানাথপুরে নীলা মার্কেটের অবস্থান। এখানেই একটি অস্থায়ী খাবারের দোকান আছে মেহেদি আর তার মা রোজিনার। যেখানে বিক্রি হয় চাপাতি, চিতই আর হাঁস ভুনা। পাশেই আরেকটি দোকানে মেহেদির বোন শিল্পীও একই ধরনের খাবার বিক্রি করেন।

মেহেদি জানালেন, প্রতি শুক্রবার তারা ১৫ থেকে ১৮টি হাঁস রান্না করেন। গত শুক্রবারেই তিনি ২৫ হাজার টাকার হাঁসের মাংস বিক্রি করেছেন। তিনি এটাও বললেন, হাঁসের মাংস এখন স্ট্রিট ফুড হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়।

নীলা মার্কেটে অনেকগুলো খাবারের দোকান রয়েছে। প্রতিটির মেন্যুতেই রয়েছে ভিন্নতা। হাঁসের মাংস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ভাজাপোড়া, কাবাব সবই পাওয়া যায় এখানে।

এই মার্কেটে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যেতে হয়। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় ভোজনরসিকরা ঢাকা থেকে বালু ব্রিজ হয়ে নীলা মার্কেটে যান, যা তাদের কাছে রীতিমতো স্ট্রিটফুডের স্বর্গরাজ্য।

খাবারের আনন্দকে দ্বিগুণ করে দেয় মিষ্টির দোকানগুলো। যেখানে মেলে গরম গরম রসগোল্লা আর লালমোহন। 

 অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Beximco workers' protest turns violent in Gazipur

Demonstrators set fire to Grameen Fabrics factory, vehicles, vandalise property

2h ago