বাহারি ব্লাউজ
ব্লাউজের সঙ্গে বাঙালিদের পরিচয় আসলে খুব বেশিদিনের নয়। পরিচয়টা কী করে হলো তা নিয়ে আছে নানা মতামত। কেউ কেউ বলেন, ইংরেজরা যখন ভারতবর্ষ শাসন করেছে তখন রানি ভিক্টোরিয়া শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ ব্যবহার করেন প্রথম। অনেক বছর ব্লাউজ ছিল ভারতবর্ষের অভিজাত রমণীদের আভিজাত্যের প্রতীক। পুরনো বাংলা সিনেমা দেখলেও ব্যাপারটা বেশ ভালোভাবে টের পাওয়া যায়।
আবার কেউ কেউ বলেন, ১৮৬৪ সালে জ্ঞানদানন্দিনী দেবী স্বামী সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে স্বামীর কর্মস্থল বোম্বে যাওয়ার সময় একজন ফরাসি দর্জির শরণাপন্ন হন। সেই দর্জিকে ফরমায়েশ দিয়ে এক ধরনের পোশাক তৈরি করান তিনি, যা আজকের ব্লাউজ।
যেভাবেই ব্লাউজের প্রচলন শুরু হোক, শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানানসই ব্লাউজ শাড়ির সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। জুতসই ব্লাউজ করে তোলে আকর্ষণীয়, সঙ্গে ফুটিয়ে তোলে ব্যক্তিত্বও।
একটা সময় কোনো রকম একটা ব্লাউজ পরলেই মানুষের চলত, কিন্তু সময়ের সঙ্গে ব্লাউজ হয়ে উঠেছে শাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শাড়ি যেমন হোক, সঠিক ব্লাউজের গুণেই ফুটে উঠবে তার সৌন্দর্য, এটা এখন সবার জানা। এ কারণেই ব্লাউজের ডিজাইনে এসেছে নানা পরিবর্তন, নানা ফ্যাশন। কাতান, খাদি, শিফন, সুতি, মসলিন কিংবা সিল্ক—শাড়ি যেমনই হোক না কেন, যদি ব্লাউজের ডিজাইন হয় ট্রেন্ডি তাহলে পুরো লুকটাই বদলে যায়। তাই ফ্যাশন ডিজাইনাররা আলাদাভাবে নজর দিচ্ছেন ব্লাউজের ওপর।
ডিজাইনার আনার কলি খান জানান, শাড়িতে নারীকে কতটা সুন্দর দেখাবে তার অনেকটাই নির্ভর করে শারীরিক গঠনের সঙ্গে মিল রেখে ব্লাউজ নির্বাচনের ওপর। পাড় কিংবা জমিনে কোনো ডিজাইন নেই এমন এক রঙের শাড়িতেও একেবারে ভিন্ন রকমের একটি ব্লাউজ পরে গর্জিয়াস লুক পেতে পারেন।
ফ্যাশন ডিজাইনার পাপন জানান, বর্তমানে পার্টিতে স্লিভলেস ব্লাউজের জনপ্রিয়তা বেশি। আবার শাড়ির সঙ্গে অনেকে হিজাব পরে। সেক্ষেত্রে থ্রি কোয়ার্টার বা টপস স্টাইলের ব্লাউজগুলো নিচের দিকে বাড়িয়ে নিতে হবে। শাড়ি কিংবা ব্লাউজ দুটোই জমকালো হলে বেশ বেমানান দেখায়। তাই যে কোনো একটাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে মনমতো নানা ডিজাইনের ব্লাউজ? অনলাইনে অনেক পেইজ আছে ব্লাউজভিত্তিক। এগুলোতে পেয়ে যাবেন নানা রঙের নানা ঢঙের ব্লাউজ। একেক ডিজাইনারের আছে একেক রকম কালেকশন।
কোনো কোনো ডিজাইনার কাজ করেন দেশি ঢঙে। রঙিন প্যাচওয়ার্কের ব্লাউজ পেয়ে যাবেন এই ডিজাইনারদের কাছে। একটা সাদামাটা শাড়িকেও এ ধরনের ব্লাউজ করে তুলবে ভীষণ আকর্ষণীয়। আবার সুতি, মিক্সড কাপড়, সিল্কে ছাপা, এম্ব্রয়ডারি করা, জয়পুরি ব্লাউজ পিসও চলছে এখন। তা ছাড়া শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে কয়েক ধরনের কাপড় মিলিয়েও তৈরি করা হয় কোনো কোনো ব্লাউজ।
অফ শোল্ডার, হাই নেক, ব্যাকলেস, হল্টার নেক, বোট নেক, জারদৌসি কাজের ব্লাউজ, স্লিভনেস, টিউব চোলি, কলার স্টাইল, সিঙ্গেল শোল্ডার, করসেটসহ নানা কাটের ব্লাউজ এখন পেয়ে যাবেন সহজেই। তাই শুধু রং মিলিয়ে ব্লাউজ না পরে, ব্লাউজে নিয়ে আসুন নতুনত্ব। পরিবেশ, অনুষ্ঠান, বয়স ও রুচি অনুযায়ী বেছে নিন আপনার ব্লাউজ।
Comments