বর্ষায় পোশাক-জুতা-আসবাব-ক্যামেরা-আচারের বিশেষ যত্ন

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর আবহাওয়া পরিস্থিতি যেন অনেকটাই ভিন্ন। মধ্য শ্রাবণে এসে কিছুটা দেখা মিলেছে বর্ষার। তবে অল্প হোক বা বেশি বর্ষায় স্যাঁতসেঁতে ও গুমোট ভাব আর ছত্রাকের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ তো থাকছেই। তাই এ সময় পোশাকের জন্য প্রয়োজন হয় আলাদা যত্নের।

পোশাকের যত্ন

বর্ষাকালে কাপড়ে, বিশেষ করে সুতি কাপড়ে বৃষ্টির পানি লাগলে এবং তা দ্রুত শুকানো না গেলে ছত্রাক পড়ার ভয় থাকে। এজন্য বৃষ্টির দিনে বাইরে গেলে সুতি কাপড় না পরে দ্রুত শুকিয়ে যায় এমন কাপড় পরা উচিত। তবে বাইরে গিয়ে সুতি কাপড় বৃষ্টিতে ভিজলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা পানিতে ডুবিয়ে ধুয়ে ভালোভাবে নিঙড়ে শুকাতে হবে।

অনেক সময় বাইরে সরাসরি রোদে কাপড় শুকানোর সুযোগ থাকে না। এ জন্য ফ্যানের নিচে ভালো করে কাপড় শুকিয়ে নিতে হবে। না হলে কাপড়ে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব থেকে ছত্রাক জন্মাবে। এই ঋতুতে পোশাককে ছত্রাক থেকে রক্ষা করার সবচেয়ে ভাল উপায় হলো কাপড় ধুয়ে শুকানোর পর তা ইস্ত্রি করে রাখা।

জুতা নিয়ে বাড়তি চিন্তা

বর্ষায় জুতা নিয়ে বাড়তি সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ রাস্তার কাদা লেগে পছন্দের জুতাখানি দ্রুতই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ জন্য এই মৌসুমের জন্য একটু সাবধানী হয়ে জুতা কেনা উচিত। বর্ষায় বৃষ্টির পানি ও কাদামাটি লেগে জুতায় ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। সেখান থেকে পায়ে ছত্রাক, র‌্যাশ, ইচিংসহ বিভিন্ন চামড়ার সমস্যা হতে পারে।

এই ঝুঁকি এড়াতে বর্ষায় পা ঢেকে থাকে এমন জুতা ব্যবহার করা ভালো। বর্ষায় ব্যবহারের জন্য বাজারে অনেক ধরনের নকশার ওয়াটারপ্রুফ জুতা পাওয়া যায়। এগুলো আরামদায়ক, দেখতেও বেশ সুন্দর। তবে অবশ্যই ভালো মান দেখে জুতা কিনতে হবে। বর্ষার সময় বড় হিল, স্যান্ডেল, চপ্পল জাতীয় জুতা ব্যবহার না করা ভালো। এতে দুর্ঘটনা ও কাপড় নোংরা হবার সম্ভাবনা কম।

দেয়াল-জানালা-মেঝে পরিষ্কার রাখুন

বর্ষা মৌসুমে বাড়ির বাইরের পরিবেশ কর্দমাক্ত বা বৃষ্টিস্নাত থাকে। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় ঘরের দেয়ালে ফাঙ্গাস পড়ে। তাই দেয়াল, জানালা ও মেঝের জন্য নিতে হবে বাড়তি যত্ন।

ফাঙ্গাস বা ছত্রাক পড়ে এমন দেয়াল থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে আসবাবপত্র সাজানো উচিত। অনেক সময় বাড়ির দেয়াল মেরামতের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে বাড়ি মেরামত থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকাই ভালো। এতে নির্মাণ কাজের ঝামেলা ও ছত্রাকের উপদ্রব- দুটি থেকেই বেঁচে থাকা যায়। তাই বর্ষাকাল আসার আগেই বাড়ির ছাদ, মেঝে ও দুই দেয়ালের সংযোগস্থল ইত্যাদি ভালো করে দেখে নিন। প্রয়োজন হলে সংস্কার করুন।

বাড়ির চারপাশে নজর রাখুন যেন বৃষ্টির পানি জমে না থাকে। ছাদের ড্রেন বা নালাটি যেন পাতা পড়ে বন্ধ না হয়ে যায়। কারণ ছাদে পানি জমা থাকলে তা সিলিং বা উপরের দেয়ালে ছত্রাকের বিস্তার ঘটাতে পারে।

ঘরের জানালার চারপাশকে যথাসম্ভব শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে। জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি যেন ঘরের ভেতরে না আসে তা খেয়াল রাখা জরুরি। আর পানি ভেতরে চলে আসলে দ্রুত তা মুছে ফেলতে হবে। জানালার পর্দাটিকেও শুকনো ও পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলে ঘরের জানালা খুলে দিন। এতে ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশ করে আর্দ্রতা কেটে যাবে।

বর্ষায় ঘরের মেঝে সবচেয়ে বেশি স্যাঁতসেঁতে হবার ঝুঁকিতে থাকে। বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশের আগে অবশ্যই পা ভালো করে মুছে নিন। এ সময় প্রতিদিন অন্তত একবার ঘরের মেঝে মোছা উচিত। মেঝে কিংবা বাথরুম টাইলসের হলে তা পরিষ্কারে বিশেষ যত্ন নিন। টাইলসের ফাঁকে ফাঁকে ময়লা জমে থাকলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। যাদের বাসায় কাঠের মেঝে আছে তাদের সব সময়ই সতর্ক নজর রাখতে হবে যেন তা কোনোভাবেই দীর্ঘ সময় আর্দ্র না থাকে। রান্নাঘর কিংবা বাথরুমের কোথাও পাইপে ছিদ্র থাকলে তা দ্রুত ঠিক করে নিন।

আসবাবের যত্নও খুব গুরুত্বপূর্ণ

বর্ষার দিনে কাপড়চোপড়ের মতো আসবাবপত্রেও একটা ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে ভাব চলে আসে। এ সময় বাতাসে মিশে থাকা জলীয়বাষ্পের প্রভাবে কাঠের আসবাব ফেঁপে যাওয়ার বা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক ও পোকামাকড়ের উপদ্রব। এ জন্য এই মৌসুমে আসবাবপত্রের জন্য বিশেষ যত্ন নেওয়ার দরকার হয়।

বৃষ্টির মৌসুমে অনেক বাড়ির দেয়াল স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। দেয়ালের এই আর্দ্রতা টানার প্রবণতা থাকে কাঠের আসবাবের। এ জন্য আসবাবপত্রকে ছত্রাক থেকে বাঁচাতে দেয়াল থেকে কিছুটা দূরে রাখুন। আর দেয়াল ঘেঁষে রাখতে হলে আসবাবের পেছনে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখুন।

পাশাপাশি বৃষ্টির সময় ঘরের জানালা বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন। কারণ, জানালা দিয়ে পানির ঝাপটা আপনার আসবাব পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এতে আসবাবে ছত্রাকের বিস্তার ঘটে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সম্ভব হলে জানালা থেকে একটু দূরে আসবাব সাজান। আর অসতর্কতার কারণে বৃষ্টির পানি লেগে গেলে দ্রুত শুকনো কাপড় দিয়ে তা মুছে ফেলুন। কোনোভাবেই কাঠের আসবাবকে কড়া রোদে শুকাতে দিবেন না। এতে আসবাবে ফাটল দেখা দিতে পারে। আর ফোম জাতীয় অংশের জন্য একটি মোটা তোয়ালে ভেজা স্থানে রেখে তার ওপর দিয়ে গরম ইস্ত্রি চালান। এতে ভেজা ভাব অনেকটা কমে যাবে।

কর্পূর বা ন্যাপথালিন কার্যকরভাবে আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে। এটি ব্যবহারে আসবাবে গুছিয়ে রাখা কাপড় ভালো থাকে। পাশাপাশি পোকামাকড়সহ অন্যান্য কীটের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারেন স্প্রিট ও নিমের মতো কিছু কীটনাশকও। তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই কাঠ মিস্ত্রির পরামর্শ নিন।

খাবার সংরক্ষণে নজর দিন

সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে না পারলে বর্ষার সময় আচারসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ফাঙ্গাস পড়ে যায়। শুকনো খাবার যেমন-শুকনো মরিচ, কালোজিরা ইত্যাদিতে আর্দ্রতা বা ভেজা ভাব আসলে তা মাঝেমধ্যে কিছু সময়ের জন্য রোদে দিতে পারেন। এ ছাড়া শুকনো খাবারের পাত্রে এক টুকরা ড্রাই সল্ট রেখে দিলে তা আর্দ্রভাব কমিয়ে খাবারকে ভালো রাখবে। এ সময়ে আচার নিয়ে অনেকে বেশ চিন্তিত থাকেন। আচার সংরক্ষণের জন্য কাঁচের পাত্র ব্যবহার করুন। প্রতিদিন কিছু সময় আচারের কৌটা সূর্যের আলোয় রাখতে পারেন। তাহলে ফাঙ্গাস পড়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

ক্যামেরার দিকেও খেয়াল রাখুন

বর্ষা মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় ক্যামেরার লেন্সে ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এ জন্য ফাঙ্গাস বা ছত্রাক থেকে বাঁচতে পছন্দের ক্যামেরাটি একটু সাবধানে রাখতে হবে। ক্যামেরা বা লেন্স অবশ্যই একটি এয়ারটাইট বক্সে সিলিকা জেলসহ রাখতে হবে। সিলিকা জেল বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে ক্যামেরার যন্ত্রাংশকে ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখবে।

Comments

The Daily Star  | English

Postgrad doctors block Shahbagh demanding stipend hike

The blockade resulted in halt of traffic movement, causing huge suffering to commuters

1h ago